ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘দাগী অপরাধীকেও হত্যার অধিকার কারও নেই’

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫০, ৯ ডিসেম্বর ২০২১  
‘দাগী অপরাধীকেও হত্যার অধিকার কারও নেই’

ফাইল ছবি

‘একজন প্রকৃত দাগী অপরাধীরও আইনের আশ্রয় লাভের সুযোগ রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া তাকে হত্যা করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষকে দেওয়া হয়নি।’

১০ বছর আগে সাভারের আমিন বাজারে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক ইসমত জাহান এসব কথা বলেন। এর আগে গত ২ ডিসেম্বর আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।

ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ইসমত জাহান আমিন বাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনসহ ১৩ আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং ১৯ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২৫ আসামিকে বেকসুর খালাস এবং বিচারকালে তিন জন মারা যাওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।

গতকাল বুধবার (৮ ডিসেম্বর) ঘোষিত ওই রায় প্রকাশের কথা জানান বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক উল্লেখ করেন, মামলায় উপস্থাপিত সমগ্র সাক্ষ্য-প্রমাণ পর্যালোচনায় এটি প্রতীয়মান হয় যে, এ মামলার মৃতদের সংখ্যা ৬ জন। আসামিরা বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং এলোপাতাড়ি মারধর করে নির্মমভাবে তাদের হত্যা করেছে। ওই ছয় ছাত্রকে ঘটনাস্থলে দেখে আসামিদের মনে যদি সন্দেহের উদ্বেগ হতো, তাহলে তারা তাদের ঘেরাও করে স্থানীয় থানায় খবর দিতে পারতো। 

আসামিরা সংখ্যায় অনেক ছিল। ওই ছয় জন ছিল নিরস্ত্র। আসামিরা থানায় খবর না দিয়ে অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নেয় এবং পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত‌্যা করে। শুধু হত্যা করেই আসামিরা নিবৃত্ত হয়নি। মৃতদের চরিত্র হননের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে সমাজের চোখে ডাকাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে মিথ্যা ডাকাতির মামলা করেছে এবং মসজিদের মাইকে ‘ডাকাত’ আসার ঘোষণা দিয়ে নিজেদের দায় অন্যদের ঘাড়ে চাপানোর উদ্দেশ্যে গ্রামবাসীকে সংযুক্ত করে মিথ্যা গণপিটুনির দাবি করেছে।

পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়, গণপিটুনি’র এই বায়বীয় শব্দটির মোড়কে আসামিরা তাদের নৃশংসতা, অমানবিকতা, পাশবিকতাকে ধামাচাপা দেওয়ার সর্বোচ্চ প্রয়াস চালিয়েছে। 

যে তরতাজা ছয়টি প্রাণ এই পৈশাচিক উম্মত্ততায় ঝরে গেছে তারা মৃত্যুর পরেও সমাজের চোখে মিথ্যা ‘ডাকাত’ পরিচয়ের বোঝা বহন করে চলেছে। 

বিচারক বলেন, ‘সমাজের শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য এবং বিচারের নিয়ন্ত্রণের ভারসাম্য রক্ষার জন্য আদালত ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। কিন্তু এদের পাশ কাটিয়ে স্বেচ্ছাচারীর মত আইনকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এই আসামীরা নির্মমভাবে ছাত্রদের হত্যা করেছে। হতভাগ্য ছয় ছাত্র সেদিন পবিত্র শব-ই-বরাতের রাত্রে ৩২ জন আসাসির হাতে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। একই সঙ্গে তাদেরকে এবং তাদের হতভাগ্য পরিবারকে মিথ্যা ডাকাতির কলঙ্ক মাথায় নিয়ে সমাজে চলতে হয়েছে। তাই আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া উচিত বলে আদালত মনে করেন।’

ঢাকা/মামুন/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়