ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মানবপাচার চক্রের হোতাসহ গ্রেপ্তার ৪

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৯, ১৬ এপ্রিল ২০২২   আপডেট: ১৭:০০, ১৬ এপ্রিল ২০২২
মানবপাচার চক্রের হোতাসহ গ্রেপ্তার ৪

রাজধানীর রামপুরা ও হাতিরঝিল এলাকা থেকে মানবপাচার চক্রের মূল হোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ সময় বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট, জাল ভিসা ও কম্পিউটার জব্দ করা হয়েছে।

শনিবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে জানান, শুক্রবার রাতে রামপুরা ও হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে মানবপাচার ও প্রতারণা চক্রের মূল হোতা কামরুল আহম্মেদ, মো. খালেদ, মাসুদ হেলাল ও মো. জামালকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ২৭টি পাসপোর্ট, ১টি মনিটর, ১টি সিপিইউ, ১টি মাউস, ১টি কীবোর্ড, ১টি ইউপিএস, ১০০টি ভিসার কপি, ১২৫টি টিকিট, ৪টি মোবাইল ফোন, ২টি ফরম বই, করোনার নমুনা সংগ্রহের বই জব্দ করা হয়।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা মানবপাচার ও প্রতারণা চক্রের সদস্য। কামরুল এ চক্রের মূল হোতা। অন্যরা তার সহযোগী। তাদের জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স নেই। কিন্তু তারা দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানির নামে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে লোক পাঠায়। চক্রটি মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বেকার তরুণ-তরুণীদের কাছ থেকে ৫ হতে ৭ লাখ টাকা করে নিয়ে ভুয়া ভিসা এবং ভুয়া টিকেট হাতে ধরিয়ে দেয়। ভুক্তভোগীরা ভিসা এবং টিকেট নিয়ে বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের ফিরিয়ে দেয়। ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে প্রতিকার চাইলে গ্রেপ্তারকৃতরা তাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ৫ বছরে ওই চক্র শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠায়। তারা বিদেশে গিয়ে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

কামরুল নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। তার নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। প্রতারণা এবং মানবপাচারই তার পেশা। ২০১৯ সালে সে ভ্রমণ ভিসায় দুবাইয়ে যায়। মানবপাচারের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে দুবাইয়ের রেসিডেন্স ভিসা লাভ করে এবং একটি প্রাইভেটকার কিনে তা চালায়। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে প্রাইভেটকারটি বিক্রি করে ২০২১ সালের মে মাসে বাংলাদেশে ফিরে এসে প্রতারণা এবং মানবপাচারকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। তার জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স নেই। সে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে অবৈধভাবে বিভিন্ন দেশে লোক পাঠায়। কামরুলের নামে চট্টগ্রামের আদালতে চেক জালিয়াতির মামলা এবং মৌলভীবাজারের আদালতে একটি মামলা আছে। তার বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩৮ লাখ টাকা আছে।

কামরুলের অন্যতম সহযোগী জামাল মাহবুব ইন্টারন্যাশনালের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার। মাহবুব ইন্টারন্যাশনাল মানবপাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় বিএমইটি তাদের লাইসেন্স ব্লক করে। এক মাস আগে মাহবুব ইন্টারন্যাশনালের এমডি মানবপাচারের দায়ে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়। জামাল সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। পাঁচ বছর ধরে সে কামরুলের সঙ্গে কাজ করছে।

খালেদ ২০০১ সাল থেকে ১৫ বছর সৌদি আরবে ছিল। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ফেরত এসে সে মৌলভীবাজারের রাজনগরে রেস্টুরেন্টের ব্যবসা শুরু করে। কিন্তু ব্যবসায় সে সফল হতে না পেরে কামরুলের সঙ্গে যোগ দেয়। সে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। তোফায়েলের পেশা ড্রাইভিং। মৌলভীবাজারে তার সিএনজি পার্টস এবং ডেকোরেটরসের ব্যবসা আছে। অতি লাভের আশায় সে কামরুলের সঙ্গে যোগ দেয়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের কর্মকর্তা বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ জানতে পারে যে, রামপুরা এলাকায় একটি মানবপাচার ও প্রতারক চক্র মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ গমনেচ্ছু বেকার তরুণ-তরুণীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। র‌্যাব-৩ এ বিষয়ে নজরদারি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে।’

মাকসুদ/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়