ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শিক্ষক থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের হোতা ইকবাল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৬, ১৯ মে ২০২২   আপডেট: ১৫:০৭, ১৯ মে ২০২২
শিক্ষক থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের হোতা ইকবাল

ছবি: র‌্যাব

২০০৮ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয় ইকবাল হোসেন। নিজ এলাকায় শিক্ষকতা করার সময় ২০১৫ সালে একই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী আলতাফ হোসেন নামে এক ব্যক্তির সাথে পরিচয়ের সূত্রে তার কাছ থেকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় উর্ত্তীণের নিশ্চয়তা দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি রপ্ত করে।

আলতাফ হোসেন মারা গেলে ইকবাল প্রতারক চক্রটি পরিচালনা করে। চক্রের অন্যান্য সদস্যরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি চাকরি প্রত্যাশীদের খুঁজে বের করে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষায় পাশ ও চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তার মাধ্যমে তাদেরকে প্রলোভন দেখাত।

হিডেন স্পাই ওয়্যারলেস কিট ব্যবহার করে সরকারি-বেসরকারি ও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণের নিশ্চয়তা দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া সিন্ডিকেটের হোতা ইকবাল ও তার অন্যতম ৩ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

বৃহস্পতিবার (১৯ মে) র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, বুধবার (১৮ মে) রাতে র‌্যাব-২ এর একটি দল রাজধানী ও আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ইকবাল হোসেন, রমিজ মৃধা, মো. নজরুল ইসলাম এবং মো. মোদাচ্ছের হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।  এ সময় তাদের কাছ থেকে বেশকিছু ডিভাইস ও অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রতারণার কৌশল হিসেবে বিদেশ থেকে আনা ডিজিটাল ডিভাইসগুলো মূলত দুটি অংশে ভাগ করে।  ডিভাইসটির একটি অংশ ইয়ার পিছ তারা পরীক্ষার্থীদের কানের ভেতর এবং অটোমেটিক কল রিসিভ হওয়া সীম লাগানো অপর অংশটি শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে তাদের পরীক্ষার হলে প্রবেশ করাত। পরবর্তীতে পরীক্ষার্থীরা নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের কাছে পাঠাত।

কারওয়ান বাজার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারের সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মঈন আরও জানান, প্রতারক চক্রটি প্রশ্নপত্রের উত্তর দেওয়ার জন্য আগে থেকেই মেধাবী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি টিম প্রস্তুত রাখত। অতঃপর  চক্রের সদস্যরা পরীক্ষার হল থেকে পাঠানো প্রশ্নপত্রের উত্তরগুলো শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত টিমের মাধ্যমে খুঁজে বের করে চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের বলে দিত।

র‌্যাব জানায়, করোনা মহামারির সময় আলতাফ হোসেন মারা গেলে  ইকবাল প্রতারক চক্রটি পরিচালনা করা শুরু করে। তার বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানায় একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা ও বেশ কয়েকটি সাধরণ ডায়েরি রয়েছে।

রমিজ এ প্রতারক চক্রের অন্যতম সহযোগী এবং একটি হত্যা মামলার পলাতক আসামি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে থাকাকালীন ২০২০ সালে ইকবালের তার সাথে পরিচয় হয়। সে সময় রমিজ তার আর্থিক সংকটের কথা ইকবালকে খুলে বলে এবং বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতা আছে বলে জানায়। পরবর্তীতে ইকবাল তাকে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় সহযোগিতা করার কথা বলে তাকে এ প্রতারক চক্রের সদস্য করে নেয়। ইকবালের ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে জ্ঞান কম থাকায় সে রমিজকে দিয়ে এই কাজ সম্পাদন করাত।

রমিজ র‌্যাবকে বলেছে, যখন কোন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষা হতো তারা তখন পরিক্ষার্থীদের তাদের ডিজিটাল ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে পরস্পর সংযুক্ত হয়ে বাইরে অবস্থান করত এবং রমিজের পরিচিত কিছু মেধাবী ছাত্রের মাধ্যমে উত্তরপত্র তৈরি করে পরীক্ষার হলে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে জানিয়ে দিত।  নজরুল ১৯৯৪ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তরে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরিতে যোগদান করে। নজরুল এবং রমিজের বাড়ি পাশাপাশি হওয়ায় তারা একে অপরের পূর্বপরিচিত ছিল। চাকরি সূত্রে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সাথে সুম্পর্ক গড়ে উঠে নজরুলের। এ সুযোগে সে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষকে চাকরি দেয়ার কথা বলে  প্রার্থীরা প্রতারক ইকবাল ও রমিজ এর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিত।

এছাড়ও সে  বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার সময়, স্থান ও পরীক্ষায় গার্ড খুঁজে বের করার দায়িত্ব পালন করত। গ্রেফতারকৃত মোদাচ্ছের মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার সমাজসেবা কার্যালয় থেকে সমাজসেবাকর্মী হিসেবে ২০১৯ সালে অবসর গ্রহণ করে। সে ইকবালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করত। চক্রে সে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সাধারণ চাকরি প্রার্থীদের খুঁজে বের করে প্রতারক ইকবাল ও প্রতারক রমিজের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিত। 

/মাকসুদ/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়