ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শোক দিবসের কর্মসূচিতে হামলার পরিকল্পনা মামলার বিচারে ধীরগতি

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫১, ১৫ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ১০:৫৬, ১৫ আগস্ট ২০২২
শোক দিবসের কর্মসূচিতে হামলার পরিকল্পনা মামলার বিচারে ধীরগতি

পাঁচ বছর আগে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের আগে ঢাকার পান্থপথের ওলিও হোটেলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার এখনও শেষ হয়নি। কবে নাগাদ শেষ হবে বলতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। তবে আলোচিত এ মামলার বিচার দ্রুত শেষ করতে রাষ্ট্রপক্ষ চেষ্টা করছে বলে জানানো হয়।

পান্থপথের ওই হোটেলে আশ্রয় নিয়ে জঙ্গিরা ২০১৭ সালের ১৫ আগস্টের কর্মসূচিতে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। তবে ১৪ আগস্ট রাত থেকে ওলিও হোটেল ঘেরাও করে রাখে পুলিশ। পরে সোয়াট নামে অভিযানে। এক পর্যায়ে সকালে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এক জঙ্গি আত্মঘাতী হন।

ঘটনার পরদিন পুলিশ বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ২৭ মাস মামলাটি তদন্ত করে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধ বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ৭ আগস্ট মামলাটি সাক্ষ‌্যগ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। এজন‌্য আদালত আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।    

মামলা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট টাইব্যুনালের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর গোলাম ছারোয়ান খান জাকির বলেন, মামলাটির তদন্ত শেষ করতে আড়াই বছরের বেশি সময় লেগেছে। এরপর মামলাটি আমাদের আদালতে আসে। আমরা মামলাটির বিচার কাজ এগিয়ে নিচ্ছিলাম। এর মাঝে করোনার কারণে আদালত সাধারণ ছুটিতে যায়। কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। সেই সময় আমরা মামলাটির চার্জ গঠন করি। এরপর সাক্ষীদের আদালতে হাজির হতে সমন পাঠানো হলেও তারা আসেননি। এরই মাঝে আবার দ্বিতীয় দফায় লকডাউনের কারণে আদালত বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, এরপর আবার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মামলার বাদীসহ দুই জনকে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সমন দেওয়া হলেও তারা আদালতে হাজির হননি। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। সাক্ষীরা আদালতে উপস্থিত হলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে দ্রুত বিচার শেষ করার চেষ্টা করবো।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাক্ষীদের হাজির করার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের কোনো গাফিলতি নেই। রাষ্ট্রপক্ষ সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। যেহেতু মামলাটির বাদী একজন পুলিশ কর্মকর্তা, সেহেতু বদলী জনিত কারণে থানা পরিবর্তন হওয়ায় আদালতের সমন ঠিকমতো পৌঁছাতে দেরিও হতে পারে। আদালতে সাক্ষী আসা মাত্র সাক্ষ্যগ্রহণ করতে প্রস্তুত রয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
আসামিপক্ষের আইনজীবী সুব্রত দেবনাথ রানা জানান, আমার মক্কেলদের নাম মামলার এজাহারে ছিল না। তদন্তে আসামিদের নাম দেওয়া হয়েছে। গতানুগতিকভাবে চার্জশিটে আসামিদের নাম দেওয়ার প্রয়োজন, এজন্য দিয়েছে। সন্দেহজনকভাবে আসামিদের নাম চার্জশিটে দেওয়া হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করে রাজু আহমেদ নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা চার্জশিট দাখিল করেন। তবে ওই কর্মকর্তা ২০২১ সালে নাকি মারা গেছে বলে শুনেছি। মামলায় ৬৫ জন সাক্ষীর মধ্যে চার্জশিট দাখিলকৃত আইও (তদন্ত কর্মকর্তা) ছাড়া কারো কোনো বক্তব্য নেই। মামলার আইও যদি মারা যায় তাহলে আর কী থাকে।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছে। একটা কিছু তো হোক। বিনা বিচারে ৫ বছর ধরে আসামিরা জেলে রয়েছে। সাক্ষী আসুক আমরা ট্রায়াল ফেস করতে রাজি আছি। তবুও মামলাটির বিচার যেন দ্রুত শেষ হয়। আসামিরা হয় খালাস পাবে না হয় অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাজা হবে। একটা কিছু হওয়া প্রয়োজন। এভাবে বিনাবিচারে আর কত দিন। মামলার চার্জশিট, এজাহার, যারা ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে, সেগুলোর অসামঞ্জস্য আদালতে তুলে ধরবো। সাক্ষীদের জেরা, যুক্তিতর্কের মধ্য দিয়ে আসামিদের কীভাবে নির্দোষ প্রমাণ করা যায় সেই চেষ্টা করবো। তারা যেন ন্যায়বিচার পায় সে জন্য কাজ করবো। 

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান চলার মধ্যেই ৩০০ মিটার দূরে পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে অভিযান চালায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াট সদস্যরা। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা ওই অভিযানের এক পর্যায়ে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল থেকে বিকট বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ পাওয়া যায়। বিস্ফোরণে হোটেলের চতুর্থ তলার রাস্তার দিকের অংশের দেয়াল ও গ্রিল ধসে নিচে পড়ে।

এ ঘটনায় ১৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন কলাবাগান থানার এসআই সৈয়দ ইমরুল সায়েদ। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্তকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজু আহম্মেদ।

চার্জশিটভূক্ত আসামিরা হলেন, আকরাম হোসেন খান নিলয় ওরফে স্লেড উইলসন, নাজমুল হাসান ওরফে মামুন, আবুল কাশেম ফকির ওরফে আবু মুসাব, আব্দুল্লাহ আইচান কবিরাজ ওরফে রফিক ,তারেক মোহাম্মদ ওরফে আদনান, কামরুল ইসলাম শাকিল ওরফে হারিকেন ওরফে রোবট ওরফে তানজিম, লুলু সরদার ওরফে সহিদ ওরফে মিস্ত্রি, তাজরীন খানম শুভ, সাদিয়া হোসনা লাকী, আবু তুরাব খান, তানভির ইয়াসিন করিম  ওরফে হিটম্যান ওরফে জিন, হুমায়রা জাকির নাবিলা, নব মুসলিম আব্দুল্লাহ  ও তাজুল ইসলাম ওরফে ছোটন ওরফে মোহাম্মদ ওরফে ফাহিম। এদের মধ্যে তাজুল ইসলাম কিশোর হওয়ায় তার বিরুদ্ধে শিশু আইনে পৃথক একটি চার্জশিট দাখিল করা হয়।

গত বছর ১৩ জানুয়ারি আবু তুরাব খান ও লুলু সরদারকে অবাহতি দিয়ে ১১ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত। এরপর ১১টা ধার্য তারিখ পার হলেও কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি।

ঢাকা/মামুন/ইভা 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়