ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট সেজে নারীর সঙ্গে প্রতারণা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩০, ১ সেপ্টেম্বর ২০২২  
ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট সেজে নারীর সঙ্গে প্রতারণা

গ্রেপ্তার মামুন ইসলাম

সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ সরকারি কর্মকর্তা পরিচয়ে অভিনব প্রতারণা করে আসছিলেন মামুন ইসলাম। এ অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ পুলিশ সুপার আশরাফুল আলম এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, বুধবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে দিনাজপুর জেলার খানসামা থানার আমতলী বাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, মামুন পেশায় গ্রিল ওয়ার্কশপের কর্মচারী হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে একজন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। আবার কখনও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারী উপসচিব, কখনও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কখনও ব্যাংক কর্মকর্তা আবার কখনও ইঞ্জিনিয়ার। নিজেকে সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মেয়ে ও সাধারণ লোকেদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে তাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে সুবিধাজনক স্থানে বদলি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে বিদেশ গমনসহ নানা সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে অর্থ আত্মসাৎ করতো।

আশরাফুল আলম জানান, নিজের আসল পরিচয় গোপন করে সব তথ্য অবিকৃত রেখে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করতো। তবে তার বেশী আগ্রহ বিভিন্ন বয়সী মেয়েদের প্রতি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তার শরীরের অবয়বের সাথে মিলে যায় এমন শারীরিক গঠনের মুখে মাস্ক পরিহিত কিংবা মুখাবয়ব স্পষ্ট বোঝা যায় না এমন কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সময়ের ছবি নিজের ছবি হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন মেয়েদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করতো। সম্পর্কের এক পর্যায়ে সে  মেয়েদের বিয়ের প্রস্তাব দিতো এবং  ভুক্তভোগী মেয়েদের খুব দ্রুত বিয়ে করতে চায়, যদি কোন ভুক্তভোগী তার বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া না দিতো তাহলে মামুন আত্মহত্যা করবে মর্মে ইমোশনাল ব্লেকমেইল করে মেয়েদের বিয়েতে রাজি করাতো। পরে বিয়ের ফাঁদে ফেলে মেয়েদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করতো। এভাবে মেয়েদের সাথে মামুনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সর্ম্পক গড়ে উঠে। এ সময় সে নিজেকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেয়। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যকার সর্ম্পক গভীর হয়। মামুন কখনো ভিক্টিমের সাথে সরাসরি দেখা করতো না। বিভিন্ন সরকারি কাজে খুবই ব্যস্ত আছে অথবা তার ছুটি হচ্ছে না এরকম বিভিন্ন অজুহাত তৈরি করে সরাসরি বিবাহ অনুষ্ঠানে আসতে পারছে না বলে জানিয়ে মেয়ের নামে কাজী অফিসের সিলমোহরযুক্ত ভুয়া নিকাহনামা প্রস্তুত করে তাদের ঠিকানায় কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দেয় এবং মেয়েদের কাবিননামায় স্বাক্ষর করে প্রতারক মামুনের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে বলে। 

আশরাফুল আলম জানান, একটি মেয়ে সরল বিশ্বাসে মামুনের কথামতো কাজ করার কিছুদিন পর সে  মেয়ের বাসায় যায় এবং ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিয়ে করে কিছুদিন একসাথে বসবাস করে। ভুয়া বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর প্রতারক মামুন মেয়েটিকে আপত্তিকর ও অশালীন অবস্থায় ভিডিও কলে আসতে বলতো। আপত্তিকর অবস্থায় মেয়েটির সাথে ভিডিও কলে কথোপকথনের সময় ভিক্টিম মেয়েটির অগোচরে মামুন আপত্তিকর অবস্থার ভিডিও কলের স্ক্রিন রেকর্ড করে সেই ভিডিওগুলো নিজ মোবাইলে সংরক্ষণ করে রাখতো। পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওগুলো অনলাইনে ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেবে বলে হুমকি  প্রদান ও অর্থ দাবি করতে থাকে। এভাবে সে মেয়েটির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে। মেয়েটি মামুনের প্রতারণার শিকার হয়ে ডিএমপির পল্টন থানায়  পর্ণোগ্রাফী ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের সাইবার ইনভেস্টিগেশন ও অপারেশনস টিম মামলাটির তদন্ত ভার পাওয়ার পর প্রতারক মামুনকে গ্রেপ্তার করে।

/মাকসুদ/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়