‘হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকলে এমন নূরকে দেখে ক্ষমা চাইতেন’
নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
আসাদুজ্জামান নূর
‘প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রাস্তা থেকে তুলে এনে আসাদুজ্জামান নূরকে কয়েকটি নাটকে সুযোগ দিয়েছিলেন। এমন নরপিশাচ, খুনিকে দেখলে তিনি (হুমায়ূন আহমেদ) হয়ত এখন আফসোস করে ক্ষমা চাইতেন।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকালে হোটেল কর্মচারী মো. সিয়াম সরদারকে গুলি করে হত্যার মামলায় সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেনের আদালতে জামিন শুনানিতে এসব কথা বলেছেন আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপপ-রিদর্শক আব্দুর রহমান সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
মাহবুব আলীর আইনজীবী বলেন, তিনি এজাহারভুক্ত নন। ঢাকা সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সেক্রেটারি ছিলেন মাহবুব আলী। নিয়মিত প্র্যাকটিস করেন। আওয়ামী লীগের লোকাল কমিটি থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে শেখ হাসিনা সরকারের অরাজকতার সাথে একমত ছিলেন না। তিনি বিমান প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে এ সেক্টরকে লাভজনক করেছেন। মাহবুব আলী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তিনি আইনজীবী, তার পালানোর আশঙ্কা নেই।
আসাদুজ্জামান নূরের আইনজীবী বলেন, তিনি ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আবেদন করছি। আসাদুজ্জামান নূর সন্দিগ্ধ আসামি। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। বার বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। তার জামিন প্রার্থনা করছি।
রাষ্ট্রপক্ষে ইন্সপেক্টর মো. আসাদুজ্জামান আসামিদের জামিনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, এটা হত্যা মামলা। তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। জামিনের বিরোধিতা করছি।
বিএনপিপন্থি আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রাস্তা থেকে তুলে এনে আসাদুজ্জামান নূরকে কয়েকটি নাটকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছিলেন। সেই সুযোগে পরিচিতি পান আসাদুজ্জামান নূর। জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হন। তার ভিতরের কালো অধ্যায়টা মানুষ দেখেনি। হাসিনার সাথে হাত মিলিয়ে তাকে স্বৈরাচার করতে যা যা করার দরকার, তা-ই করেছেন। দুইবার বিনাভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৩ সালে নীলফামারীতে গিয়েছিলেন নির্বাচনি পথসভায়। সেখানে তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীসহ তিনজনকে ক্রসফায়ার দেওয়া হয়। হুমায়ূন আহমেদ এমন নরপিশাচ, খুনিকে দেখলে হয়ত এখন আফসোস করে ক্ষমা চাইতেন।
তিনি বলেন, হত্যা, ভোট চুরি করার কারণে শেখ হাসিনা উপহার হিসেবে আসাদু্জ্জামান নূরকে সংস্কৃতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। সেই দায়িত্ব পেয়ে আমাদের বাঙালি, ইসলামী সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে বিজাতীয় সংস্কৃতি চালুর চেষ্টা করেন। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হওয়া উচিত। যখন ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়, তখন শেখ হাসিনাকে বন্ধ করতে না বলে স্বৈরাচার টিকিয়ে রাখতে কাজ করেছেন আসাদুজ্জামান নূর। সাংস্কৃতিক জোট গঠন করে আন্দোলনকারীদের ওপর গরম পানি ঢালার পরিকল্পনা করেন। তার শাস্তি হবে।
মাহবুব আলীর বিষয়ে ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, তিনি সুপ্রিম কোর্ট বারের সদস্য। গোত্র এক হলে কি হবে, চুরি করলে একই গোত্র আর থাকে না। বিমান প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে দুইটা বোয়িং বিমান কিনেছে। এ কারণে তাকে সব জায়গা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এলাকায় এত চুরি করেছেন, সেখানে গিয়ে দাঁড়াতে পারেন না। যার কারণে সুমনের মতো বাটপার নির্বাচিত হয়েছে। অবৈধ ভোট চোরাকারবারি, শিক্ষা-দীক্ষা কাজে লাগায়নি।
তিনি বলেন, এরা জামিন পেলে দেশে নৈরাজ্য, ফ্যাসিবাদ, মানুষ হত্যার ষড়যন্ত্র আবার করবে। এরা জনদুশমন, মৌলিক অধিকার হরণকারী। মানুষ এখন মন খুলে হাসছে। এরা আবার আসলে তা বন্ধ হয়ে যাবে। তার জামিনের বিরোধিতা করছি।
শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আসাদুজ্জামান নূর ও মাহবুব আলীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর পর তাদের আদালত থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। যাওয়ার সময় মাহবুব আলীর ওপর ডিম নিক্ষেপ করেন আইনজীবীরা।
এদিকে, ওই দুই আসামিকে এজলাসে ওঠানো ও নামানোর সময় এক ক্যামেরাম্যান, দুই পুলিশ সদস্য ও মাহবুব আলীর স্বজনের ফোন চুরি হয়েছে।
মামুন/রফিক