ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ছোটখাটো অভ্যাস যখন ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ

লাইফস্টাইল ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ১২ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ছোটখাটো অভ্যাস যখন ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ

হাত মেলানো, কেনাকাটা, সেলফি- এসব বিষয়গুলো তুচ্ছ মনে হতে পারে। কিন্তু ছোট ছোট এসব অভ্যাস আদতে আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অনেক কিছুই প্রকাশ করে। এ নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

টয়লেট পেপার ব্যবহারের ধরন: টয়লেট পেপার রাখার রোলার আবিষ্কারের পর থেকেই তাতে সঠিকভাবে টয়লেট পেপার রাখা নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে। গিল্ডা কার্ল নামে একজন গবেষকের মতে, তিনি টয়লেট পেপার ব্যবহারের ধরনের মাধ্যমে কারো ব্যক্তিত্ব বিশ্লেষণ করতে পারেন। এ বিষয়ে তিনি ২০০০ জন মানুষের উপর গবেষণা চালান এটা জানার জন্য যে, তারা হাতের উপরের দিকের অবস্থানে টয়লেট পেপার ঝুলিয়ে রাখেন নাকি নিচের দিকের অবস্থানে। তিনি তাদেরকে কিছু প্রশ্নের উত্তর লিখতে বলেন এবং তাদেরকে ১-১০ এর মধ্যে নম্বরও দেওয়া হয়; এর মাধ্যমে তারা তাদের প্রেমের সম্পর্কে কতটুকু জেদি তা বের করা হয়। ড. কার্ল বলেন, যারা হাতের উপরের দিকের অবস্থানে টয়লেট পেপার রাখে তাদের আচরণ বেশ কর্তৃত্বপূর্ণ এবং যারা নিচের দিকের অবস্থানে রাখে তারা সাধারণত নম্র ও বিনয়ী হয়ে থাকে। অবশ্য কিছু মানুষ যারা অধিকমাত্রায় কর্তৃত্বপূর্ণ স্বভাবের তারা অন্যের বাথরুমে গিয়েও তাদের টয়লেট পেপারের অবস্থান পরিবর্তন করেছিল। যদিও তাদের উপর করা এই পরীক্ষাটি হাস্যকর, তারপরও মানুষের ব্যক্তিত্বকে মূল্যায়ন করার একটা ভালো পন্থা পরীক্ষাটির মাধ্যমে পাওয়া যায়। তাছাড়া এটি আপনার সঙ্গীর সাথে আপনার সম্পর্কের নানান দিক উন্মোচিত করে।

জুতা পছন্দের রুচি: একটি জার্নালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির জুতা দেখে তার ব্যক্তিত্ব যাচাই করা সম্ভব। এ বিষয়ে বেশ কয়েকজনের উপর একটি গবেষণা চালানো হয়। তারা তাদের জুতার ছবি পাঠায় এবং তাদের ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পর্কিত একটি প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করে। আরেকটি দলকে তাদের জুতা দেখে ব্যক্তিত্ব বিশ্লেষণ করতে বলা হলে তার বেশ ঠিকঠাক তথ্য প্রদান করে। তারা তাদের বয়স, আয় এবং নানানরকম ব্যক্তিগত উদ্বেগের কথা তুলে ধরে। দেখা যায় যে, যারা আরামদায়ক জুতা পরে তারা বেশ অমায়িক স্বভাবের হয়ে থাকে, বড় বুটের জুতা যারা পরে তারা সাধারণত আক্রমণাত্মক স্বভাবের হয়, অস্বাচ্ছন্দকর জুতা যারা পরে তারা শান্ত স্বভাবের হয়, নতুন এবং যত্নে রাখা জুতা পরিধানকারীরা সাধারণত ব্যস্ত এবং আবেগপ্রবণ স্বভাবের হয়ে থাকে।

হাঁটার ধরন: প্যাটি উড নামে এক গবেষকের মতে, মানুষের হাঁটার ধরনের মাধ্যমে তার ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়। আপনার হাঁটার গতি যদি সামনের দিকে এবং দ্রুত হয় তাহলে আপনি বেশ কর্মক্ষম ও যুক্তিবাদী ব্যক্তি। মানুষজন এজন্য আপনার বেশ প্রশংসা করে এবং আপনি সামান্য প্রতিযোগী স্বভাবের। আপনি যদি কাঁধ পিছনে রেখে বুক উঁচু করে হাঁটেন (যেমনটি রাজনীতিবিদ এবং তারকাদের মধ্যে দেখা যায়) তাহলে আপনি বেশ খোশমেজাজী, অনন্যসাধারণ এবং সামাজিক প্রকৃতির মানুষ; যদিও আপনি সুনামপ্রিয়। আপনি যদি পা টিপে হাঁটেন তাহলে আপনি কাজের চেয়ে মানুষের সাথে সময় কাটিয়ে বেশি অভ্যস্ত এবং পেশার চেয়ে ব্যক্তিগত জীবন আপনার কাছে মুখ্য বেশি; তাছাড়া আপনি দলগত কাজে বেশ দক্ষ, কিন্তু প্রায়শই অমনোযোগী। আপনি যদি পায়ে চাপ না দিয়ে হালকাভাবে হাঁটেন এবং হাঁটার সময় নিচে তাকিয়ে হাঁটেন তাহলে আপনি গোপনীয়তাপ্রবণ ও বিনয়ী একজন মানুষ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, জেলে থাকা কয়েদীদের মধ্যে যারা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত তারা তাদের মধ্যকার ঝুঁকিপূর্ণ কয়েদীদের শুধুমাত্র হাঁটা দেখে শনাক্ত করে ফেলেছে।

হাত মেলানোর ধরন: এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাত মেলানোর ধরন আপনার প্রতি মানুষের ধারণা পাল্টে দিতে পারে। গবেষণার বিচারকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় করমর্দনের আটটি বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করার জন্য: হাত ধরার ধরন, হাতের তাপমাত্রা, শুষ্কতা, শক্তি, স্থায়িত্ব, বলিষ্ঠতা, গভীরতা এবং দৃষ্টিসংযোগ। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় যে, যাদের করমর্দন বেশ মজবুত তারা বেশ আবেগপ্রবণ, খোলা মনের এবং অন্যান্যদের চেয়ে যথেষ্ট নির্ভেজাল হয়ে থাকে। আর যাদের করমর্দন তেমন মজবুত নয় তারা লাজুক এবং বাতিকগ্রস্ত স্বভাবের হয়ে থাকে। গবেষকগণ সম্মত হন যে যাদের করমর্দন বেশ দৃঢ় তারা বেশ আত্মবিশ্বাসী এবং সামাজিক প্রকৃতির হয়ে থাকে।

ই-মেইল পাঠানোর শিষ্টাচার: আপনি যদি আপনার সহকর্মীর স্বভাব জানতে চান তাহলে ইনবক্সে তার করা ইমেইলগুলো ঘেটে দেখুন। মনোবিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী, আমাদের মেইলের ধরন এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে বেশ শক্তিশালী যোগাযোগ রয়েছে। বেশ কিছু শব্দ এবং মেইলের ধরনের মাধ্যমে মানুষের স্বভাবগত ব্যাপারগুলো গবেষকরা বের করতে সক্ষম হয়েছেন। আত্মকেন্দ্রিক মানুষজন মেইলে আমি, আমার এই শব্দগুলো বেশি ব্যবহার করে থাকে। অন্যদিকে বহিঃকেন্দ্রিক মানুষগুলো মজাদার বিষয় যেমন গানবাজনা, উৎসব ইত্যাদি তাদের মেইলে লিখে থাকেন। তাছাড়া আমরা কি বলি তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কিভাবে বলি সেটা। আবার যাদের মেইলের ভাষা একেবারে প্রাসঙ্গিক তারা সাধারণত সুবুদ্ধিসম্পন্ন, বিবেকবান এবং অভ্যন্তরীণ গুণসম্পন্ন হয়ে থাকেন। তাছাড়া ভাষাগত ভুল যারা করেন তারা কম বুদ্ধিসম্পন্ন হয়ে থাকেন। আবার কেউ কেউ বড় আকারের মেইল পাঠিয়ে থাকেন। এসব মানুষ সাধারণত বেশ চনমনে স্বভাবের আবার কখনো দুর্বল চরিত্রের।

দুশ্চিন্তায় নখ কামড়ানো: আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা দুশ্চিন্তা বা হতাশায় ভুগলে দাঁত দিয়ে নখ কাটেন বা কামড়ান। ২০১৫ সালে বেশ কিছু মানুষের উপর আচরণকেন্দ্রিক একটি গবেষণা চালানো হয়। গবেষকগণ তাদের হতাশাজনক, আরামদায়ক এবং বিরক্তিকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে নিয়ে যান এবং খেয়াল করেন যে তারা কখন দাঁত দিয়ে নখ কাটে বা কামড়ায়। যারা ঘনঘন চুল নাড়েন বা দাঁতে নখ কাটেন তারা সাধারণত বিবেকবান স্বভাবের হয়ে থাকেন। একারণে তারা হতাশা বা বিরক্তি এড়াতে এগুলো করে থাকেন। কেননা কিছু না করে বসে থাকার চেয়ে কিছু করা বেশি সস্তিদায়ক। তারা মানসিক স্বস্তি পাওয়ায় জন্য এগুলো করে থাকেন।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)

 

ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়