ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

করোনাভাইরাস: ‘মনের বাঘ’ দূর করবেন কীভাবে?

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২৭, ২৩ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনাভাইরাস: ‘মনের বাঘ’ দূর করবেন কীভাবে?

করোনাভাইরাস! হ্যাঁ, এটি মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করেছে এবং অবশ্যই এ সময় প্রত্যেককে সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু ভাইরাসটি সম্পর্কে প্রতিনিয়ত তথ্যের ছড়াছড়ি, পূর্বপ্রস্তুতির পরামর্শ এবং সাবধানবাণী মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

অনেকেই আতঙ্কিত জীবন যাপন করছেন। এ সময় ‘বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়’ কথাটি মনে রাখতে হবে। সুতরাং সবার আগে ‘মনের বাঘ’ দূর করতে হবে। সতর্ক থাকতে গিয়ে অনেকে দ্বিধায় ভুগছেন, অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন, অস্থির দিনযাপন করছেন। এতে আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ভেঙে পড়তে পারে। চলুন জেনে রাখি, এই মহামারির সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করার কয়েকটি উপায়।
 

তথ্যের উৎস কমিয়ে ফেলুন: আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রিসার্চ অ্যান্ড পলিসির সহযোগী নির্বাহী পরিচালক লিন বাফকা বলেন, ‘করোনাভাইরাস সম্পর্কে শতশত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কোন তথ্যটি সঠিক তা নির্ণয় করা। ফলে মানসিক দ্বিধা বাড়ছে। এটি দীর্ঘস্থায়ী হলে মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যস্ত হতে পারে।’ বাফকা তথ্য প্রাপ্তিতে নিয়ন্ত্রণ আনতে কিছু পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন। যেমন কয়েকটি বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের উৎস থেকে তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করে অন্য উৎসগুলো বাদ দিয়ে দিন। একটি জাতীয়, একটি আন্তর্জাতিক ও একটি স্থানীয় উৎস নির্বাচন করুন। দুটি বিশ্বাসযোগ্য আন্তর্জাতিক উৎস হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। 

ফোনের ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করুন। হাতের কাছে ফোন থাকলে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত আপডেট জানতে ইচ্ছে করবে। বাফকা বলেন, ‘করোনাভাইরাস সম্পর্কে প্রত্যেকটি তথ্য জানতেই হবে এবং না-জানতে পেরে অনিশ্চয়তায় ভুগতে হবে- বিষয়টি এমন নয়। টর্নেডোর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে দ্রুত তথ্য জানা প্রয়োজন, কিন্তু করোনাভাইরাস টর্নেডো নয়। তাই সব ধরনের তথ্য পাওয়ার তাড়না কমাতে ফোন দূরে রাখুন। নিউজ সাইট অথবা সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন। সোশাল মিডিয়া ব্যবহারে আত্মনিয়ন্ত্রণের পরিচয় দিন। মনে রাখতে হবে, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে যেসব তথ্য ও মন্তব্য পাওয়া যাচ্ছে তার বেশিরভাগই নির্ভরযোগ্য নয়
 

ভয়কে জয় করুন: ভাইরাসের মহামারি হচ্ছে বিমূর্ত খলনায়ক। আতঙ্কে মানসিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হবেই। তাই নির্দিষ্ট ভয়গুলো আগে শনাক্ত করুন। ঠিক কী কারণে ভয় পাচ্ছেন- ভাবুন।বাফকা বলেন, ‘মৃত্যুর ভয় মানুষের মধ্যে প্রোথিত অস্তিত্ব রক্ষার ভীতিকে জাগিয়ে তোলে। কিন্তু আপনাকে এটা শনাক্ত করতে হবে- আপনি যে কারণে ভয় পাচ্ছেন তা কতটা বাস্তবসম্মত?’

ভয়ে জমে যাওয়া এড়াতে ব্যক্তিগত ঝুঁকি বিবেচনা করুন। এই ভাইরাসের সংস্পর্শে  আসার আশঙ্কা কতটুকু পরিমাপের চেষ্টা করুন। আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে অথবা করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে সবচেয়ে খারাপ পরিণতির কথা ভেবে আতঙ্কিত হবেন না। কারণ করোনাভাইরাসের আক্রমণে মানুষ যে অসুস্থতা অনুভব করে, তা অন্য রোগের কারণেও হতে পারে। শরীরে সত্যিই করোনাভাইরাস পাওয়া গেলে নিরাশ হবেন না। আশা ধরে রাখুন এবং চিকিৎসা নিন। মনে রাখবেন, ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি উচ্চ নয়। বেশিরভাগ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এ সময় মন থেকে আশা বিলুপ্ত হলে রোগমুক্তি কঠিন হবে। আশাবাদী হতে হবে। শুধু চিকিৎসা নয়, আশার মধ্যেও রয়েছে নিরাময় শক্তি।

বাফকা বলেন, ‘আমরা সবচেয়ে খারাপ পরিণতি কল্পনা করে অবান্তর প্রতিক্রিয়া দেখাই এবং সমস্যা মোকাবিলায় আমাদের যে ক্ষমতা রয়েছে তা ভুলে যাই।’ ভয় আমাদের সম্ভাব্য বিপদ মোকাবিলায় মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখে। কিন্তু ভয়ের মাত্রা সীমা অতিক্রম করলে এবং সেইসঙ্গে অবান্তর ভাবনা যুক্ত হলে মানসিক বিপর্যয় ঘটবেই। অথচ আমরা ভুলে যাই, কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে মানুষের সক্ষমতা তাদের ধারণার চেয়েও বেশি। 
 

অন্যদের কথা ভাবুন: মহামারিতে ভাইরাসের প্রকৃতি অনুসারে সঠিক পদক্ষেপ নিলে ব্যক্তিগত উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা কমে। কিন্তু আপনাকে দশজনের কথাও চিন্তা করতে হবে। আপনার চেয়েও অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে এমন মানুষের সাহায্যার্থে আপনি কী করতে পারেন তা বিবেচনা করুন।যাদের জীবিকা থমকে গেছে তাদের পাশে দাঁড়ান। সামর্থ্য থাকলে সংক্রমণ প্রতিরোধী উপকরণ সরবরাহ করতে পারেন। এতে আপনার মানসিক সাহস অটুট থাকবে। 

মনে রাখতে হবে, সমাজে যত বেশি মানুষের মধ্যে ভাইরাস ছড়াবে, আপনার ঝুঁকিও তত বেড়ে যাবে। তাই নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে অন্যদের সুস্থতাও জরুরি। যখন কেউ অন্যদের কল্যাণের কথা ভাববেন, তখন তার ব্যক্তিগত উদ্বেগ এমনিতেই কমে যাবে। কিন্তু অন্যদের মঙ্গল করতে গিয়ে নিজের নিরাপত্তার কথা ভুলে গেলে চলবে না। 
 

পরামর্শ নিন: করোনাভাইরাস নিয়ে পরামর্শ পেতে চাইলে এমন কারো সঙ্গে কথা বলার দরকার নেই যিনি আপনার মতো আতঙ্কের মধ্যে আছেন এবং করণীয় সম্পর্কে সন্দিহান। সেসব মানুষের সঙ্গেও কথা বলা অসার যারা কথায় কথায় ‘স্রষ্টার গজব’ বলে গলা ফাটান। আলোচনার জন্য এমন কাউকে খুঁজুন যিনি কঠিন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেন এবং কার্যকরী পরামর্শ দেবেন। সম্ভব হলে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
 

মৌলিক প্রয়োজনের দিকে মনোযোগ দিন: প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে থেকে আপনার ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেবেন না। করোনাভাইরাস সংক্রমণে দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের মানুষদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। বাফকা বলেন, ‘মানসিক চাপ বা আতঙ্কের সময় আমরা মৌলিক প্রয়োজনগুলোকে উপেক্ষা করি। কিন্তু মহামারির সময় এসব প্রয়োজন মেটানো আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যেমন পর্যাপ্ত ঘুম, পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার, নিয়মিত শরীরচর্চা। অর্থাৎ যে বিষয়গুলো চর্চা করলে দুশ্চিন্তা এবং আতঙ্ক কমবে সেগুলোতে অভ্যস্ত হোন। 

 

ঢাকা/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়