ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

করোনা ধ্বংসে কোন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করবেন?

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৮, ২৫ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনা ধ্বংসে কোন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করবেন?

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। এখন অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, ফার্মেসি ও সুপারমার্কেটগুলোতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এখন বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগেও হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করা হচ্ছে। কয়েক রকমের হ্যান্ড স্যানিটাইজার রয়েছে। প্রোডাক্টটি সংক্রমণের ঝুঁকি কমালেও সকল ধরনের হ্যান্ড স্যানিটাইজার কোভিড-১৯ সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সমান কার্যকর নয়।

এখনো পর্যন্ত হাতের জীবাণু দূর করা ও সংক্রামক রোগ ছড়ানো প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, গরম পানি ও সাবান দিয়ে ঘনঘন হাত ধুয়ে নেয়া। গরম পানি ও সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিলে হাতের তেল দূর হয়ে যায়। হাতের তেল জীবাণুর আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।

হ্যান্ড স্যানিটাইজারও রোগসৃষ্টিকারী জীবাণু থেকে সুরক্ষা দিতে পারে, বিশেষ করে তেমন পরিস্থিতিতে যখন সাবান ও পানির ব্যবস্থা থাকে না। এটা একটি প্রমাণিত বিষয় যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিভিন্ন প্রকৃতির জীবাণু ধ্বংস করতে পারে অথবা জীবাণুর সংখ্যা কমাতে পারে।

হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দুটি প্রধান ধরন রয়েছে: অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও অ্যালকোহলমুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার। অ্যালকোহল-বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজারে বিভিন্ন পরিমাণে বিভিন্ন প্রকৃতির অ্যালকোহল থাকে। সাধারণত ৬০ থেকে ৯০ শতাংশে আইসোপ্রপাইল অ্যালকোহল, ইথানল (ইথাইল অ্যালকোহল) অথবা এন-প্রপানল থাকে। অ্যালকোহল অধিকাংশ জীবাণু ধ্বংস করে তা গবেষণায় প্রমাণিত।

অ্যালকোহলমুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজারে অ্যালকোহলের পরিবর্তে কোয়াটারনারি অ্যামোনিয়াম কম্পাউন্ড (সাধারণত বেনজালকোনিয়াম ক্লোরাইড) থাকে। এসব হ্যান্ড স্যানিটাইজার জীবাণু ধ্বংস অথবা ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমানোর ক্ষেত্রে অ্যালকোহল-বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চেয়ে কম কার্যকর।

অ্যালকোহল-বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজার শুধু এমআরএসএ এবং ই. কোলাইয়ের মতো বিভিন্ন প্রকৃতির ব্যাকটেরিয়াই ধ্বংস করে না, এটি বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস হত্যা করতেও কার্যকর। অ্যালকোহল সমৃদ্ধ হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারে ধ্বংস হয় এমনকিছু ভাইরাস হলো: ইনফ্লুয়েঞ্জা এ ভাইরাস, রাইনোভাইরাস, হেপাটাইটিস এ ভাইরাস, এইচআইভি ও মার্স-কভ।

অ্যালকোহল কিভাবে ভাইরাস ধ্বংস করে?

কিছু ভাইরাসের চারপাশ প্রোটিন দ্বারা বেষ্টিত থাকে। ভাইরাসের বেঁচে থাকা ও সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য এই প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ। করোনাভাইরাসেরও অনুরূপ প্রোটিন আবরণ রয়েছে। অ্যালকোহল এই প্রোটিন আবরণকে আক্রমণ ও ধ্বংস করে। কিন্তু অধিকাংশ ভাইরাস ধ্বংস করতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারে ন্যূনতম ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল থাকা চাই। কিন্তু অ্যালকোহলের পরিমাণ ৬০ শতাংশের কম হলে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাক ধ্বংসের কার্যক্ষমতা কমে যাবে ও সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যাবে।

কিছুটা দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে, ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল রয়েছে এমন হ্যান্ড স্যানিটাইজারও সকল ধরনের জীবাণু ধ্বংস করতে পারে না। গবেষণায় দেখা গেছে যে নরোভাইরাস, ক্রিপ্টোস্পোরিডিয়াম (ডায়রিয়া সৃষ্টিকারী প্যারাসাইট) ও ক্লস্ট্রিডিয়াম ডিফিসাইল (আন্ত্রিক সমস্যা ও ডায়রিয়া সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া) দূর করার ক্ষেত্রে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চেয়ে হাত ধোয়া বেশি কার্যকর।

ফার্মেসি, সুপারমার্কেট ও অনলাইন শপে না পেয়ে অনেকে নিজেরাই হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করছেন। কিন্তু এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে এসব হ্যান্ড স্যানিটাইজার বাণিজ্যিকভাবে তৈরি প্রোডাক্টের মতো ততটা কার্যকর নাও হতে পারে।

হাতের নোংরা দেখা গেলে অ্যালকোহল-বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজারের পরিবর্তে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলাই সবচেয়ে ভালো। গবেষণায় দেখা গেছে, সাবানের পরিষ্কারক প্রতিক্রিয়া ও ধোয়ার ঘর্ষণ উভয়ে হাতের জীবাণু, নোংরা ও অর্গানিক ম্যাটারিয়াল দূর করতে একত্রে কাজ করে।

ঘরে অবস্থানকালে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। এসময় সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নেয়াই উত্তম। যেখানে সাবান-পানির ব্যবহার সম্ভব নয় সেখানেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখতে হবে যে হাতের সকল অংশ অথবা আঙুলের ফাঁক, নখের ভেতর, হাতের তালু ও হাতের পিঠ জীবাণুমুক্ত হচ্ছে। সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ক্ষেত্রেও একই পরামর্শ প্রযোজ্য।

তথ্যসূত্র: দ্য কনভারসেশন

 

ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়