ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অফিসে শেষ ১০ মিনিটে সফল ব্যক্তিরা যা করেন

লাইফস্টাইল ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৫৪, ১৫ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
অফিসে শেষ ১০ মিনিটে সফল ব্যক্তিরা যা করেন

সারাদিনের কর্মব্যস্ততা থেকে বিরতিতে যাওয়ার বা মুক্তি পাওয়ার ঠিক আগের ১০ মিনিট যেন যেতেই চায় না। ঘড়ি যেন থেমে থেমে চলে। চোখ থাকে ঘড়ির কাটায় কখন বাজবে ছুটির ঘণ্টা।

অথবা আপনি আপনার কাজের মধ্যে এতটাই নিমগ্ন ছিলেন যে, সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথে আপনি আপনার জিনিসপত্র নিয়ে অফিস থেকে দ্রুত বের হয়ে গেলেন। আপনার সহকর্মীদের বিদায় জানাতেও ভুলে গেলেন।

যদি আপনার কর্মজীবনে এই দুটির একটি অবস্থাও থেকে থাকে তাহলে আপনার কর্মক্ষেত্রের রুটিন পরিবর্তনের সময় হয়ে গেছে। এখনি বদলে ফেলুন আপনার কর্মক্ষেত্রের দৈনন্দিন রুটিন। ‘দ্য হিউমার অ্যাডভান্টেজ’ বইয়ের লেখক মাইকেল কের বলেন, ‘আপনার কর্মক্ষেত্রে আজকের দিনটি আপনি কিভাবে সমাপ্ত করলেন সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি বলেন, ‘আপনার কর্মক্ষেত্রের আজকের দিনটির সমাপ্তি আপনার বাকিদিনের মেজাজ মর্জির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্কের মাত্রাতেও প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এমনকি সেটা আপনার সুখী থাকার সামগ্রিক অবস্থাকেও প্রভাবিত করতে পারে। রাতে আপনি কেমন ঘুমাবেন কিংবা পরের দিনটি আপনার কেমন যাবে সেটিও নির্ভর করে এই বিষয়টির উপর।

আর তাই আজ আপনাদের সামনে সফল ব্যক্তিদের এমন ১২টি কাজের কথা তুলে ধরব, যা তারা তাদের কর্মঘণ্টা শেষ হওয়ার পূর্বে করে থাকেন এবং এসব অভ্যাস তাদের পরবর্তী দিনে স্বাচ্ছন্দ্যে চলার রসদ জোগায়।

মনোযোগ ঠিক রাখেন: টেইম ইউর টেরিবল অফিস টাইর্যানন্ট: হাউ টু ম্যানেজ চাইলডিস বস বিহেভিয়ার অ্যান্ড থ্রাইভ ইন ইওর জব’ বইয়ের লেখক লিন টেলর বলেন, ‘কর্মঘণ্টার শেষ ১০ মিনিট সবচেয়ে পরবর্তনীয় সময়। এই সময়ে এসে কাজ থেকে আপনার মনোযোগের বিঘ্ন ঘটতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই আপনি আপনার কর্মঘণ্টার শেষদিকে খুব বেশি মনোযোগ দিতে পারবেন না। কিংবা আপনি সকালে যেমন কর্মক্ষম ছিলেন এখন ততটা কর্মক্ষম না।’ সুতরাং শেষ মূহুর্তে এসে একেবারে খেই হারিয়ে ফেলা কিংবা অন্য কোনো কাজে মনোনিবেশ না করাটাই মঙ্গলজনক।

কর্ম-তালিকা আপডেট করেন: টেলর বলেন, ‘পেশাদার ক্ষেত্রে যারা সফল তারা সবসময় তাদের কর্ম-তালিকা আপডেট রাখেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘সফল ব্যক্তিরা কর্ম তালিকা আপডেট রাখলেও কাজের শেষ দিকে এসে তারা তাদের করণীয় কাজের তালিকার সঙ্গে অর্জনের অংশের হিসেবও করেন।’ তারা সময়েরটা সময়েই হিসেব করেন, পরের দিনের জন্য রেখে দেন না।

কি অর্জন করলাম তা যাচাই করেন: টেলর বলেন, ‘পরবর্তীতে আপনার কি করণীয় রয়েছে সেটা সম্পর্কে ভাবার আগে আপনি কি অর্জন করেছেন সেটা সম্পর্কে যাচাই করতে হবে।’ কের এই কথার সঙ্গে সম্মতি প্রকাশ করে বলেন, ‘সারাদিনের কর্মব্যস্ততার মাঝে আপনি আপনার কাজের মধ্য দিয়ে কি অর্জন করেছেন সেটি নিয়ে যদি এক মিনিট ও ভেবে থাকেন তাহলে সেটি আপনাকে কিছু অর্জন করার প্রশান্তি এনে দিবে এবং সেই সঙ্গে জানিয়ে দিবে যে আপনি যতটুকু ভেবেছিলেন করবেন তার থেকে বেশি অর্জন করেছেন।’ হ্যাপিনেস রিসার্চ অনুসারে, যদি আপনি এরকম একটি রুটিন অনুসরণ করেন এবং সারাদিনে আপনি কি অর্জন করেছেন সেটি নিয়ে সামান্য সময় ভাবেন তাহলে তা আপনার খুশী থাকার মাত্রাকে বৃদ্ধি করবে।

পরের দিনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেন: কর্মক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিরা তাদের সামনের দিনের করণীয় বিষয়ের লিস্ট তৈরি রাখেন এবং আগামী দিন তার প্রধান কাজ কী কী সেগুলোও নির্ধারণ করে রাখেন। টেলর বলেন, ‘সামনের দিনের জন্য হয়তো আপনার মাথায় দুই থেকে তিনটির বেশি বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছে, কিন্তু যদি আপনি সেসকল বিষয় লিখে রাখেন তাহলে পরের দিন আপনি বিষয়গুলোর মূল ভিত্তি থেকেই কাজ শুরু করতে পারবেন।’ কের বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে আপনার মাথায় যত জিনিস ঘুরপাক খায় সেগুলো যদি আপনি কাগজে লিখে রাখেন তাহলে আপনি আপনার জীবনের বাকি বিষয়েও ঠান্ডা মাথায় অগ্রসর হতে পারবেন এবং সেই সাথে আগামীকালকের জন্য প্রস্তুত থাকতে পারবেন।’

কর্মক্ষেত্র থেকে বের হওয়ার সময় নির্ধারণ করেন: টু মেক টুমরো গ্রেট, স্টার্ট ইট টুডে’ শীর্ষক এক নিবন্ধে পিটার ইকোনমি কর্মক্ষেত্রে ত্যাগের পূর্বে আগামীদিনের কর্মপরিকল্পনা সাজিয়ে নেওয়ার প্রস্তাবনা দেন। তিনি আরো উল্লেখ করেন, ‘যদি আপনি কোনো বড় কর্ম পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত না থাকেন বা কোনো প্রকল্প জমাদানের নির্ধারিত সময়সীমার কোনো ঝামেলা না থাকে তাহলে পরবর্তী দিন আপনি কতক্ষণ কর্মক্ষেত্রে দেরি করবেন বা বেশি সময় থাকবেন তা নির্ধারণ করে রাখুন এবং সেটি মেনে চলুন। কেননা পরিকল্পনা ছাড়া অতিরিক্ত সময় কর্মক্ষেত্রে কাজে ব্যস্ত থাকলে তা আপনাকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলবে। তাই জরুরি কাজগুলো আগেই শেষ করুন এবং যথাযথ সময়ে কর্মক্ষেত্র থেকে অব্যাহতি নিন।’

একটু সময় বের করে সারাদিনের কর্মকাণ্ড নিয়ে ভাবেন: কর্মক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিরা শুধুমাত্র সেদিন তারা কোন কোন প্রকল্প সমাধান করেছেন সে বিষয়ই ভাবেন না, সেই সাথে কোন জায়গায় কোনটা ভুল হয়েছে বা ঠিক হয়েছে সে ব্যাপারেও চিন্তা ভাবনা করেন। টেইলর বলেন, ‘যারা কর্মক্ষেত্রে সচেতন তারা জানেন যদি সে কিছু শিখতে না পারে তাহলে সে অগ্রসর হতে পারবেনা।’

কর্মস্থল প্রস্থানের আগে জানিয়ে যান: সফল ব্যক্তিরা কর্মক্ষেত্র থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ আগে থেকেই সহকর্মীদের জানান দেয় যে, কিছুক্ষণের মধ্যেই কর্মস্থল ত্যাগ করবে। এর ফলে অফিসে কারো যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কিছু বলার বা জিজ্ঞাসার থাকে তাহলে সে সেটি জিজ্ঞাসা করা থেকে বিরত থাকবে।

শুভরাত্রি কিংবা দিন শেষে অভিবাদন জানান: কর্মক্ষেত্র থেকে বিদায় নেওয়ার আগে আপনার সহকর্মীদের ছোট্ট করে শুভরাত্রি বলতে সামান্য একটু ইচ্ছার আর ভালোবাসার প্রয়োজন। আর কিছুই না। টেলর বলেন, ‘আপনার এই সামান্য শুভরাত্রি আপনার অফিসের বস এবং সহকর্মীদের মনে করিয়ে দেয় যে, আপনি শুধু এখানে কাজই করতে আসেননি আপনার মধ্যে মানবসত্তার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ও রয়েছে।’ এটি আপনার সহকর্মীদের এটিও জানায় যে আপনি আজকের মতো বিদায় নিচ্ছেন।

এছাড়া কর্মক্ষেত্রে তখনি সফলতা আসবে যখন সহকর্মীদের মধ্যে ভালো কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার অভ্যাস থাকবে এবং কোনো কাজের জন্য কৃতজ্ঞতা জানানোর অভ্যাস গড়ে উঠবে। কের বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে কাউকে ধন্যবাদ বা অভিবাদন জানানোর অভ্যাস গড়ে তুললে সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে এই অভিবাদন আপনার মনের আনন্দকে বাড়িয়ে দিবে এবং সেই সঙ্গে অন্যদেরকেও এই অভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি কাজের প্রতি আরো আগ্রহী করে তুলবে।’

শেষ সময়ে ইতিবাচক কথা বলেন: কর্মক্ষেত্র থেকে বের হওয়ার আগে হাসি দিয়ে মানসিকভাবে নিজেই নিজেকে উদ্দীপ্ত করুন। টেলর বলেন, ‘আপনার এই হাসি ঠাট্টা কিংবা খোশগল্পের অভ্যাস আপনার এবং আপনার সহকর্মীদের মধ্যকার সম্পর্কের উষ্ণতাকে গভীর করবে।’ সফল নেতারা কর্মক্ষেত্র থেকে বিরতি নেওয়ার আগে কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির ছাপ রেখে যান। যেটির রেশ পরের দিন সকাল পর্যন্ত থেকে যায়।

পরের দিনের কাজের সময়সূচি পর্যালোচনা করেন: আর ৫ মিনিট পরেই অফিসে মিটিং! এমন পরিস্থিতিতে পড়ে কর্মক্ষেত্রে আপনার দিন শুরু করাটা সবচেয়ে ভয়ানক অভিজ্ঞতার জন্ম দেবে। আপনি যদি নাই জানেন পরের দিন আপনার কি কি কাজ রয়েছে বা কি কি হতে যাচ্ছে তাহলে কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়া আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। কের বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিরা তাদের কর্মক্ষেত্রের সময়সূচি পর্যালোচনা করার ব্যাপারে সতর্ক থাকেন এবং সে অনুযায়ী তাদের দিন সাজান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তারা জানেন তাদের পরবর্তী দিনটি কিভাবে শুরু হবে।’

এ পদ্ধতি অবলম্বন করলে এটি যে কাউকে তার কর্মক্ষেত্রে পরের দিনটি শুরু করার ব্যাপারে অধিক আত্মবিশ্বাস যোগাবে, কম চাপ অনুভব করবে এবং তাকে পরের দিনের জন্য প্রস্তুত করে রাখবে।

অপেক্ষায় রাখেন না: ধরুন আপনারই এক সহকর্মী আপনার কাছ থেকে একটি ফাইল পাওয়ার আশায় অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু আপনি তাকে সেই ফাইলটি না দিয়েই আপনার কর্মক্ষেত্র থেকে বের হয় গেছেন। আর সে অপেক্ষায় আছে কেন তার ফাইলটি এখনো আসলো না? কেমন হবে একবার ভেবে দেখেছেন?

সফল ব্যক্তিরা কখনোই পরিকল্পনা মোতাবেক সবকিছু অর্জন করেনা কিংবা তারা কখনোই সব ইমেইলের উত্তর পাঠাতে পারেনা, কিন্তু তারা সবাইকে জানাতে চেষ্টা করে যে সে কাজটা করতে পারেনি, অথবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি কিংবা ইমেইলের উত্তর পাঠাতে পারেনি। এবং এর সঙ্গে তারা এ সংক্রান্ত আপডেটও অন্যদের প্রদান করে থাকে।

সবক্ষেত্রে সুসংগঠিত থাকেন: আপনি যদি সুসংগঠিত না থাকেন তাহলে আপনি কোনো কাজেই সফলতা অর্জন করতে পারবেন না।  টেলর বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে আপনার টেবিল যদি গোছানো থাকে তাহলে আপনি আরো গভীরভাবে কোনো বিষয়ে ভাবতে পারবেন এবং আরো কার্যকরভাবে কোনো বিষয়কে অগ্রাধিকার দিতে পারবেন।’

 

ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়