ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গরু কিনলে পালসার বাইক ফ্রি

খালেদ সাইফুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৩, ৭ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গরু কিনলে পালসার বাইক ফ্রি

খালেদ সাইফুল্লাহ : কোরবানি ঈদ সামনে রেখে শুরু হয়েছে পশু কেনাবেচা। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকাহাঁকিতে সরগরম হয়ে উঠেছে পশুর হাট। কোরবানিকে নিঃস্বার্থ ত্যাগ বলা হলেও সবার ক্ষেত্রে কোরবানি শুধুই ত্যাগ নয়। অনেকের কোরবানির সঙ্গে জড়িত থাকে সামাজিক মর্যাদা। যে কারণে তারা ভাবেন, পশু কিনে কোরবানি দিলেই হবে না, বরং সেটি হতে হবে আকর্ষণীয় এবং প্রশংসিত। প্রতি বছরই চড়া দামে বিরাট আকারের গরু কিনে অনেকেই সেই প্রশংসা পাওয়ার চেষ্টা করেন। দুঃখজনক হলেও সত্য সমাজে তারা এ কারণে খ্যাতিও পান। সেইসঙ্গে গরুটিও হয়ে ওঠে বিখ্যাত।

যশোরের মনিরামপুর একটি ষাঁড়ের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লাখ টাকা। আদর করে গরুটির নাম রাখা হয়েছে ‘পালসার বাবু’। গরুটি ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছে। পালসার বাবুকে দেখতে প্রতিদিন দূর থেকে মানুষ আসছে খামারির বাড়িতে। বিশালাকৃতির এই গরু খামারির কাঙ্ক্ষিত দামে কেউ কিনলেই উপহারস্বরূপ পাবেন একটি পালসার মোটরসাইকেল।

উপজেলার কাশিমনগর ইউনিয়নের ইত্যা গ্রামের ক্ষুদ্র খামারি মো. ইয়াহিয়া মোল্যা। প্রতি বছর কোরবানির আগে তিনি ষাঁড় বিক্রি করেন। তিন বছর আগে বাণিজ্যিকভাবে পোষার জন্য হলেস্টিয়ান জাতের একটি ষাঁড় নিজ গ্রাম থেকে ৫০ হাজার টাকা দামে কেনেন। এজন্য সরকারের ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প থেকে ইয়াহিয়া ও তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম ৩৪ হাজার টাকা ঋণ নেন। বাকিটা নিজের গচ্ছিত অর্থ থেকেই বিনিয়োগ করেন। দুবছর পোষার পর গতবছর কোরবানির আগে ষাঁড়টি বিক্রি করার চেষ্টা করেন তিনি। সেবার দাম হয়েছিল সর্বোচ্চ সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। কিন্তু তিনি আট লাখ টাকা দাবি করায় আর বিক্রি করা হয়ে ওঠেনি। বেশি দাম পাওয়ার আশায় আরো একবছর পোষার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ষাঁড়টির বয়স এখন ৪ বছর। দৈর্ঘ্য ১০ ফুট ও প্রস্থ ৬ ফুট। ওজন প্রায় ২২ মণ। এবছর গরুটির কাঙ্ক্ষিত দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লাখ টাকা।

পালসার বাবুকে দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ ভিড় জমাচ্ছে ইয়াহিয়ার বাড়ি। ঢাকা থেকেও অনেকেই দেখতে এসেছেন। স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, প্রায় দুই মাস বাড়িতে প্রতিদিন লোক আসছে গরু দেখার জন্য। দর্শনার্থী আসায় বাড়ির আশেপাশে প্রতিদিন ফেরিওয়ালা বসতে শুরু করেছে। তবে বৃষ্টি হওয়ায় এখন মানুষের ভিড় কিছুটা কমেছে। গরু দেখতে আসা খুলনার এক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন অনি বলেন, ক্ষুদ্র পরিসরে আমার বাড়িতেও গরুর খামার আছে। বেশ কিছুদিন আগে পালসার বাবু’র কথা শুনেছি। আজকে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে নিজেই এসেছি দেখতে। সত্যিই এমন গরু জীবনে প্রথম দেখলাম। গরুটি শুধু আকারে বড় না, চেহারা দেখেও পছন্দ করার মতো।

যশোর থেকে আসা দিদারুল কাদির স্বপন নামে এক দর্শনার্থী বলেন, গরুটির খবর শোনার পর কৌতূহল ধরে রাখতে পারিনি। তাই দল বেঁধে এসেছি দেখতে। মজার বিষয় হলো, গরুটিকে যা বলা হয় সে তাই করে। খেতে বললে খায়, সরতে বললে সরে দাঁড়ায়, উঠতে বললে উঠে দাঁড়ায়। তাছাড়া গরুটি খুবই শান্ত স্বভাবের। ইয়াহিয়া মোল্যা জানান, গরু বেশি বড় করা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, গরমে বড় গরু স্ট্রোক করার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু পালসার বাবুকে যেসব খাবার খেতে দিয়েছি তাতে এধরনের কোনো ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়নি। এমনকি গরুকে ডাক্তার দেখানোরও প্রয়োজন পড়েনি।

তিনি আরো বলেন, উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসের কোনো পরামর্শ ছাড়াই আমি গরুটি পুষেছি। গরুটির দেখাশোনা মূলত আমার স্ত্রী করেছে। নিজের পাঁচ কাঠা জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাষ লাগানো আছে। ফলে খাবারের সমস্যা হয়নি। পালসার বাবু ছাড়াও আমার একটি গাভী ও ছোট আরেকটি ষাঁড় আছে। তিনটি গরুকে একইরকম যত্ন নেওয়া হয়। পালসার বাবুকে কিনলে ক্রেতা পাবেন মোটরসাইকেল। তবে সেজন্য গুনতে হবে পুরোপুরি ১২ লাখ টাকা। এবছর ষাঁড়টির দাম উঠেছে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ আগস্ট ২০১৯/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়