ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সৎ বাবা-মাকে যে কথাগুলো বলবেন না (শেষ পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৯, ২ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সৎ বাবা-মাকে যে কথাগুলো বলবেন না (শেষ পর্ব)

প্রতীকী ছবি

সৎ বাবা-মা সন্তানের প্রতি যত ভালোভাবেই দায়িত্ব পালন করুন না কেন, কিছু লোক সুযোগ পেলেই অশোভনীয় কথা শুনিয়ে দেন। কেবলমাত্র বাইরের লোক নয়, পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেও তারা কটু কথা শুনে থাকেন। কিন্তু একটি সভ্য সমাজের মানুষ হিসেবে আমাদের অবান্তর বা অসংযত কথা না বলার চেষ্টা করতে হবে। সৎ বাবা-মাকে বলা উচিত নয় এমন ১২টি কথা নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ শেষ পর্ব।

‘আপনি অনুষ্ঠানে আসবেন না’

স্কুলে অভিভাবককে উপস্থিত থাকতে হয় এমন অনুষ্ঠান অথবা খেলাধুলার ইভেন্ট অথবা বিবাহানুষ্ঠান অথবা অন্য কোনো ইভেন্টে সৎ মা/বাবা যেতে চাইলে নিষেধ করা উচিত নয়। এ ধরনের অনুষ্ঠানে যেতে নিষেধ করার মানে হলো তার মনকে কষ্টের বুলেটে ঝাঁঝরা করছেন। হ্যাঁ, আপনার চাওয়া থাকতে পারে, কিন্তু কিছু চাওয়াকে দমন করাটাই তুলনামূলক ভালো হতে পারে, যেমন- আপনি চাচ্ছেন না যে আপনার সৎ পিতা/মাতা অমুক ইভেন্টে উপস্থিত থাকুক, কিন্তু এরকম আকাঙ্ক্ষার প্রকাশে ডমিনো ইফেক্ট সৃষ্টি হতে পারে, অর্থাৎ একটি বাজে ঘটনার সূত্র ধরে অনেকগুলো বাজে ঘটনার উদ্ভব হতে পারে, যার ফলে ভুল বোঝাবুঝি বা মনোমালিন্য বা ঝগড়াবিবাদ হতে থাকবে। আপনার এ ধরনের ঘোষণায় (সৎ পিতা/মাতা অনুষ্ঠান বা ইভেন্টে যাবে না) তিনি প্রত্যাখ্যাত অনুভব করতে পারেন এবং তিনি শেষপর্যন্ত আপনাকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলতে তাড়িত হবেন- কিন্তু এমনটা হওয়া উচিত নয়, যেহেতু তিনি আপনার জৈবিক পিতা বা মাতার স্ত্রী বা স্বামী। রক্তের সম্পর্ক নেই বলে একজন মানুষকে অগ্রাহ্য করা উচিত নয়।

* ‘তোমার প্রতি সৎ সন্তানের বাজে ব্যবহারে আমি খুশি’

আপনার বন্ধু/বান্ধবীর বিবাহবিচ্ছেদ হতে পারে এবং তিনি নতুন কারো সঙ্গে সংসার পাততে পারেন, এ নতুন সংসারে সৎ ছেলেমেয়েও থাকতে পারে। এ সৎ সন্তান আপনার বন্ধু/বান্ধবীকে কটু কথাও শুনাতে পারেন। আপনার বন্ধু এ দুঃখের ঘটনা আপনাকে শেয়ার করতে পারেন। এ অবস্থায় আপনার উচিত হবে বন্ধুকে সান্ত্বনা ও ইতিবাচক থাকতে পরামর্শ দেয়া। এ ধরনের ঘটনা থেকে নিজের সুবিধা খোঁজার চেষ্টা করবেন না এবং কখনো এ ধরনের কথা বলবেন না: ‘তোমার সৎ সন্তান তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করাতে আমি খুশি হয়েছি, কারণ তোমার এ অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে আমাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।’ কাউকে এ টাইপের কথা বলা কখনোই শোভনীয় নয়। আপনি জানেন না যে একজন সৎ পিতা/মাতার জীবনে কি ঝড়টাই না বয়ে যেতে পারে। তাই আপনার বিবেচনাহীন মন্তব্য আপনার বন্ধুর মনের জ্বালাকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। আপনার মন্ত্র এটাই হোক: বন্ধুর সুসময়ে পাশে ছিলাম, দুঃসময়েও থাকবো ও বন্ধুর মনে আঘাত করতে পারে এমন কথা বলবো না।

* ‘তুমি আমার সংসার তছনছ করেছ’

আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ম্যারেজ অ্যান্ড ফ্যামিলি থেরাপির মতে, নতুন সৎ পিতা/মাতা একটা শিশুর জন্য হারানো ও পরিবর্তনের সমার্থক। এ সংস্থার বিশেষজ্ঞরা বলেন, সৎ মা/বাবা শিশুদের মনোজগতে দ্বিধা তৈরি করে- একটা শিশু এটা ভাবতে পারে যে সৎ মায়ের কথা শুনলে আমার নিজের মায়ের প্রতি অন্যায় করা হবে। একজন নারীর তার জৈবিক সন্তানের সৎ মায়ের প্রতি ক্ষোভ থাকতে পারে, তিনি মনে করতে পারেন যে এ নারীই তার সুখের সংসারে আগুনে লাগিয়েছে। কিন্তু তাই বলে জৈবিক সন্তানের সৎ মাকে এরকম কথা বলা উচিত নয়: তোমার কারণে আমার সংসার তছনছ হয়েছে, তুমি আমার সন্তানের মাথা খাচ্ছ। এ ধরনের মন্তব্য একটি পরিবারে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে, যা শিশুদের মানসিক বিকাশসাধনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কাজেই অবান্তর মন্তব্য না করে সন্তানের জন্য ভালো হয় এমন কিছুতে ফোকাস করতে পরামর্শ দিচ্ছেন পরিবার বিশেষজ্ঞরা।

* ‘তুমি হচ্ছো শয়তান সৎ মা’

আপনি হয়তো হাস্যরসের ছলে অথবা হাসিমুখে কথাটি বলতে চাচ্ছেন, কিন্তু তারপরও এটি একজন সৎ মায়ের মনে বড় ও যন্ত্রণাদায়ক আঘাত হতে পারে। ২০১৭ সালে জার্নাল অব ফ্যামিলি ইস্যুতে প্রকাশিত একটি ছোট গবেষণা অনুসারে, পৃথিবীতে এখনো কলুষিত মনের সৎ পিতা/মাতা রয়েছে, বিশেষ করে একথাটি সৎ মায়ের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য। এটা ঠিক যে মেয়েরা হলো মায়ের জাত ও তাদের হৃদয়ে শিশুদের প্রতি মায়া-মমতার অভাব নেই, কিন্তু কিছু নারীদের ক্ষেত্রে একথাটি শুধু তাদের জৈবিক সন্তানের জন্য প্রযোজ্য, তারা আরোকজন নারীর ঔরসজাত সন্তানকে মোটেই সহ্য করতে পারেন না। কিন্তু তাই বলে আপনি কাউকে শয়তান বলতে পারেন না। এ ধরনের শব্দচয়নে একজন সৎ মা আরো একাকীত্ব অনুভব করতে পারেন এবং তার দায়িত্ব পালনে (সৎ সন্তানের প্রতি) আরো ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। এরকম শব্দের প্রয়োগ এড়িয়ে চলাটাই সবচেয়ে ভালো, এমনকি কৌতুক হিসেবেও এমনটা বলা উচিত নয়।

* ‘মনটাকে আরো বড় করতে পারো না?’

কিছু লোকের বদ্ধমূল ধারণা হচ্ছে- সৎ মাকে মাদার তেরেসা ও মেরি পপিন্সের মতো হতে হবে, যেখানে তারা সৎ সন্তানের প্রতি অভিযোগ তুলতেই পারবে না। কিন্তু এটা কি সম্ভব? সৎ মায়েরাও তো মানুষ, তাদেরও রাগ-অভিমান হতে পারে, তারাও সৎ সন্তানের খারাপ আচরণে ক্ষুব্ধ হতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সৎ মা তার সৎ সন্তানের জৈবিক বাবার (এ নারীর বর্তমান স্বামী) কাছে অভিযোগ করলে কটু কথা শুনে থাকেন, যেমন- আহ্, যখন তখন অভিযোগ করো কেন? মনটাকে আরো বড় করতে পারো না? কিন্তু এ ধরনের কথায় একজন সৎ মায়ের মন বিদীর্ণ হতে পারে, কারণ তিনি হয়তো চেয়েছিলেন যে সৎ সন্তানের খারাপ দিকটা জেনে তার স্বামী ছেলেকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে শোধরাবেন। কোনো সৎ মা যে সৎ ছেলেমেয়ের মন্দ বিষয়ে কথা বলতে পারবেন না তা নয়, তিনিও তাদের ভালো চাইতে পারেন। একটি সুখী সৎ পরিবার গঠনের জন্য সকলের কথাকে মূল্যায়ন করে প্রয়োজনে মসৃণ পদক্ষেপ নিতে হবে। সৎ পরিবারের বিভিন্ন পরিস্থিতি আরো মসৃণভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য সাইকোলজিস্টের শরণাপন্ন হতে পারেন।

* ‘অর্থের জন্যই আমাকে বিয়ে করেছ, আমার সন্তানকে ভালোবাসবে কেমনে?’

মানসিক অবস্থার চরম বিপর্যয় থেকে এরকম মন্তব্যের উৎপত্তি হতে পারে। উচ্চমাত্রার রাগ বা ক্রোধ অথবা অবিচার থেকে মানসিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেলে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে (লোকটির জৈবিক সন্তানের সৎ মা) এ ধরনের কথা শুনিয়ে থাকেন। সৎ সন্তানের প্রতি সৎ মায়ের অনুদার মনোভাব অথবা জৈবিক সন্তান ও সৎ সন্তানের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত বৈষম্য করলে একজন বাবার পক্ষে মাথা শান্ত রাখা কঠিন হয়ে পড়ে, ফলে তিনি মুখে যা আসে তা বলতে পারেন। কিন্তু আপনাকে মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মসৃণ পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করতে হবে, কারণ উত্তপ্ত বাক্যবাণের মাধ্যমে পরিবারে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় না। প্রয়োজনে সাইকোলজিস্টের পরামর্শ নিন।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :


ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়