ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

কোরবানির পশু কেনার পর প্রথমে যা করণীয়

ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১২, ১৫ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১২:২১, ১৫ জুলাই ২০২১
কোরবানির পশু কেনার পর প্রথমে যা করণীয়

ঈদুল আজহার আর বেশিদিন বাকি নেই। জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাটগুলো। সবাই তাদের নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী কোরবানির পশু কেনা শুরু করেছেন। মহামারির সময় সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনেকে হাটে গিয়ে আবার অনেকে অনলাইনে পছন্দের পশুটিকে ক্রয় করছেন।

যেভাবেই ক্রয় করে থাকেন, পশু ক্রয় পরবর্তী সময়গুলোর জন্য প্রয়োজন একটু সর্তকতা। যেহেতু কোরবানি দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রিয় প্রাণীটি কেনা হচ্ছে, তাই ঈদুল আজহা পর্যন্ত সময়ে তারা যেন সুস্থ ও নিরাপদ থাকে তা নিশ্চিত করা জরুরি। আজকের লেখা এ প্রসঙ্গেই।

কোরবানির জন্য গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ এমনকি দুম্বাও কেনা হয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি ছাগল-ভেড়া। হাট থেকে সুস্থ সবল ও সঠিক রঙ নির্বাচন করে পশু কিনতে হবে। কেনার সময় বিক্রেতার কাছ থেকে সেই প্রাণীটির বিষয়ে বেশ কিছু বিষয় ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম খাদ্যাভাস, প্রাণীটি কী খেতে পছন্দ করে এবং তারা কী খাওয়াতো। কারণ অল্প কয়েকদিনে আপনি তার খাদ্যাভাস পরিবর্তন করতে পারবেন না। কী খায় সেগুলো না জানলে আপনি সঠিক খাবার দিতে ব্যর্থ হবেন, ফলে প্রাণীটি না খেয়ে দিনে দিনে ওজন হারাতে পারে।  

কোরবানির পশু কেনার পর যা করণীয়

* স্যালাইন পানি খাওয়ানো: অনেক দূর দূরান্ত থেকে কোরবানির পশুটি হাটে এসে থাকে। তাই প্রচন্ড পানির পিপাসায় থাকে। কিন্তু আমরা অনেকেই তাকে প্রথমে দানা জাতীয় খাবার দিয়ে থাকি, যা তার জন্য সে সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। তাই প্রথম কেনার পর বাসায় নিয়ে এসেই ঠান্ডা পানির সঙ্গে হালকা লবণ ও চিনি মিশিয়ে স্যালাইন বানিয়ে খাওয়ানো অনেক বেশি উপকারী। প্রাণীটি ধকল কাটিয়ে আরামবোধ করবে।

* গোসল করানো: রোগব্যাধি থেকে দূরে রাখতে জীবাণুনাশ অথবা ক্ষার জাতীয় সাবান বা পটাস, টিমসেন ইত্যাদি দিয়ে গোসল করাতে হবে অথবা স্প্রে করতে হবে। তবে ছাগলকে রাতের বেলা গোসল না করানো ভালো। শরীরের পানি ভালোভাবে মুছে দিতে হবে।

* দানাদার খাবার কম খাওয়ানো: হঠাৎ করে বেশি মাত্রায় দানাদার খাবার খাওয়ালে অনেক সময় বদহজম ও পেট ফেঁপে যেতে পারে। তাই বেশি না দিয়ে অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে। বিশেষ করে ছাগলের পেট ফাঁপা সমস্যা বেশি দানা খাওয়ানোর কারণেই হয়ে থাকে। চাউল কোনোভাবেই খাওয়ানো উচিত নয়। গম ও ভুট্টা ভাঙা অল্প পরিমাণে খাওয়াতে হবে। সব খাবারই অল্প করে খাওয়াতে হবে, কারণ নতুন স্থানে গরু বেশি খায় না। 

* অন্য প্রাণী থেকে আলাদা বা কোয়ারেন্টাইনে রাখা: বাসায় অন্য গরু থাকলে যতটা সম্ভব আলাদা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে রোগ ছড়ানো এবং আলাদা করে বেশি খাওয়াতে সহায়তা করবে।

* গতিবিধি লক্ষ্য রাখা: নতুন পরিবেশের সঙ্গে ভালোভাবে খাপ খাইয়ে চলছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে। খাবার দিলে খাচ্ছে কিনা, সক্রিয় ও চঞ্চল কিনা ইত্যাদি বিষয় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। কোনো অসুস্থতা দেখা দিলে রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারিয়ান বা প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

* পর্যাপ্ত পানি খাওয়ানো: প্রাণীটি যেন তার মনমতো পানি খেতে পারে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। বিশেষ করে এখন গরমের সময় পর্যাপ্ত পানি আলাদা পাত্রে রাখতে হবে। পানি গরুকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। 

* পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা: গরু বা ছাগলের বাসস্থান স্যাঁতস্যাঁতে মুক্ত শুষ্ক পরিবেশ সর্বদা পরিষ্কার রাখতে হবে। মাছি বা মশার উৎপাত থাকলে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

* বাসি খাবার পরিহার: গরু বা ছাগলকেও পঁচা ও বাসি খাবার খাওয়ানো যাবে না। এসব খাবার পেটের পীড়া ও বদহজমের অন্যতম কারণ। সর্বদা ফ্রেশ খাবার খেতে দিতে হবে। 

কোরবানীর পশু কেনার পর এসব বিষয়ে সচেতন থাকলে সমস্যা এড়ানো সম্ভব হয়। তাছাড়া অল্প কয়েকদিন ভালো যত্ন ও খাদ্যাভ্যাস পশুকে সুস্থ ও ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

লেখক: প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল
ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়