ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আয়কর রিটার্ন না দিলে কী হয়

নাঈম আহসান তালহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৭, ১৮ নভেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৪:৫০, ১৮ নভেম্বর ২০২১
আয়কর রিটার্ন না দিলে কী হয়

দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশ মানুষ আয়কর দেন। আয়কর কর্তৃপক্ষের কাছে যখন কোনো ব্যক্তি তার বার্ষিক আয়-ব্যয় এবং সম্পদের তথ্যবলি একটি নির্ধারিত ফর্মে উপস্থাপন করেন তখন সেটাকে আয়কর রিটার্ন বলে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যমতে, বর্তমানে ৬১ লাখ ৫১ হাজার ৮৬৬ ই-টিআইএনধারীর মধ্যে ৫০ লাখ টিআইএনধারী রিটার্ন জমা দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন বা বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু অনেকে আছেন টিআইএন নম্বর থাকা সত্ত্বেও আয়কর রিটার্ন জমা দেন না, কয়েক বছর ধরে দেননি কিংবা নানা কারণে দিতে পারেননি। ফলে আপনি বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন। জেনে নিন সমাধানের উপায়।

যারা রিটার্ন জমা দেন না

এমন ব্যক্তিদের আয়করের ভাষায় ‘নন-ফাইলার’ বলা হয়। মোটা দাগে সব টিআইএনধারীর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। নিয়মমাফিক রিটার্ন জমা না দিলে আয়কর আইন অনুযায়ী জরিমানা, সরল সুদ ও বিলম্ব সুদ আরোপের বিধান রয়েছে। যদি কোনো ব্যক্তি করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও রিটার্ন জমা না দেন তাহলে সংশ্লিষ্ট কর কর্মকর্তা আয়কর অধ্যাদেশের ৮৪ ধারা অনুযায়ী কর নির্ধারণ করে কর নথি চালু করতে পারেন। সম্প্রতি করজাল ও রিটার্ন জমার সংখ্যা বাড়াতে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ও করযোগ্য আয় রয়েছে, অথচ রিটার্ন জমা দেন না এমন ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে কর অফিসকে স্বপ্রণোদিতভাবে তাদের আয়কর নথি চালুর নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। 

জমা না দিলে কী শাস্তি 

কোনো ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে আয়কর অধ্যাদেশের ১২৪ ধারা অনুযায়ী এক হাজার টাকা অথবা আগের বছরের ট্যাক্সের দশ শতাংশ জরিমানা করা যাবে। এ দুটির ভেতরে যেটি পরিমাণে বেশি সেই অঙ্কটি জরিমানা হতে পারে। এ ছাড়াও ৭৩ ধারা অনুযায়ী জরিমানা ছাড়াও যতদিন ধরে তিনি রিটার্ন দেননি ওই পুরো সময়ের দিনপ্রতি ৫০ টাকা করে জরিমানা হতে পারে। তবে তা যত দিনই হোক না কেন নতুন করদাতা হলে সব মিলিয়ে জরিমানার পরিমাণ পাঁচ হাজার টাকার উপরে নেওয়া হবে না। আর পুরনো করদাতা হলে আগের বছর যে পরিমাণ অর্থ আয়কর হয়েছে সেটিসহ ওই অর্থের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি দিতে হতে পারে। এবং ৭৩-এ ধারা অনুযায়ী ২ শতাংশ বিলম্ব সুদ আরোপ হবে। সেই সঙ্গে যতদিন দেরি হবে, প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা হারে বাড়তি মাশুল গুনতে হবে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করা সম্ভব না হলে করদাতা রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য নির্ধারিত ফরমে উপযুক্ত কারণ উল্লেখপূর্বক উপ-কর কমিশনারের কাছে সময়ের আবেদন করতে পারেন। উপ-কর কমিশনার কর্তৃক মঞ্জুরকৃত বর্ধিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করলে করদাতার উপর জরিমানা আরোপিত হবে না। তবে অতিরিক্ত সরল সুদ ও বিলম্ব সুদ আরোপিত হবে। 

একেবারেই যারা কর দেন না

করযোগ্য আয় থাকার পরও যারা কর দেন না তাদের জন্য জেল জরিমানা ছাড়াও তিন ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে। তা হলো: যে পরিমাণ কর বকেয়া হয়েছে সেটি ছাড়াও আরও ২৫ শতাংশ বাড়তি জরিমানা, যে পরিমাণ কর বকেয়া হয়েছে তার উপর ২ শতাংশ হারে মাসিক সরল সুদ এবং যে পরিমাণ কর বকেয়া হয়েছে তার সমপরিমাণ জরিমানা। ব্যক্তির ক্ষেত্রে সম্পদ জব্দ করার সুযোগ রয়েছে। তবে তা খুব একটা হতে দেখা যায় না। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ী কর জমা না দেয় তাহলে অনেক সময় তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও সম্পদ জব্দ করার উদাহরণ দেখা যায়। 

কর শুনানি, ট্রাইব্যুনাল ও আপিল

যথাসময়ে রিটার্ন জমা না-দেওয়ার ফলে জরিমানা হলে এক বা একাধিক শুনানির ব্যবস্থা আছে। কর শুনানির জন্য করদাতাকে নোটিশ পাঠানো হয়। শুনানিতে করদাতা নিজে অংশ নিতে পারেন অথবা আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারেন। যদি করদাতা কোনো গ্রহণযোগ্য কারণ, কাগজপত্র দেখাতে পারেন তাহলে খুব একটা ঝামেলায় তাকে পড়তে হয় না এমনকি কর্তৃপক্ষ কারণ শুনে সন্তুষ্ট হলে জরিমানা মওকুফ করতে পারেন। কর কর্তৃপক্ষের জরিমানার বিপক্ষে করদাতার আপিলের সুযোগ রয়েছে। কর কমিশনার ও ট্রাইব্যুনালে আপিল করার পরও যদি করদাতা হেরে যান তাহলে হাইকোর্টেও আপিল করতে পারেন। 

রিটার্ন জমা না দিয়ে বা সমস্যা সমাধান না করে টিআইএনধারী ব্যক্তি নিজের জন্য বড় ধরনের ঝামেলার পথ তৈরি করেন। রিটার্ন জমা না দিলে যেহেতু জরিমানা এবং অন্যান্য ঝামেলায় পড়তে হয়, তা থেকে মুক্তির সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে প্রতি বছর সময় মতো রিটার্ন জমা দেওয়া।

লেখক: এলএলবি (অনার্স), এলএলএম, চট্টগ্রাম জেলা জজ কোর্ট, চট্টগ্রাম
 

* আয়কর দেওয়ার আগে প্রস্তুতির ১০ নিয়ম, ভুল হলেই সর্বনাশ

* আপনি কোন শ্রেণির করদাতা, সর্বনিম্ন কর কত 

* ইনকাম ট্যাক্স কখন কীভাবে দিতে হয়

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়