ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

যুগোপযোগী বাজেট : ডিসিসিআইয়ের সভাপতি

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৫, ১৩ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যুগোপযোগী বাজেট : ডিসিসিআইয়ের সভাপতি

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে যুগোপযোগী বাজেট ঘোষণা করা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ওসামা তাসীর।

তিনি বলেছেন, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে যেতে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ বাজেট একটি ধারাবাহিক বাজেট। তবে এ ধরনের বড় বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা বৃদ্ধি, জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং দক্ষতা উন্নয়ন একান্ত অপরিহার্য।

বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট পেশ করার পরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন ডিসিসিআইর সভাপতি।

তিনি আরো বলেন, বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরকে আদায় করতে হবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বিগত অর্থবছরের তুলনায় এত বড় রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা চ্যালেঞ্জিং।

নতুন বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। ঘাটতি বাজেট পূরণে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অর্থায়ন করা হবে, যা সহনশীল বলে মনে করছে ডিসিসিআই। তবে এজন্য বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ যেন কমে না যায় সেদিকেও সরকারের খেয়াল রাখতে হবে।

আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এডিপি ব্যয় বৃদ্ধি দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা রাখবে। তবে প্রতিটি প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও গুণগত মান নিশ্চিত করা, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও সময়মতো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রস্তিষ্ঠানকে আরো শক্তিশালী করতে হবে।

বিগত অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ছিল ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। যদিও মূদ্রানীতি অনুযায়ী বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসেবে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। দেশের খেলাপি ঋণের ৪৮ শতাংশ সরকারি ব্যাংক খাতের। প্রস্তাবিত বাজেটে ‘ইনসলভেনসি অ্যান্ড ব্যাংকরাপসি ল’ শিরোনামে একটি আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে এবং এ ধরনের উদ্যোগকে ঢাকা চেম্বার স্বাগত জানাচ্ছে।

সরকারি ব্যাংকগুলোতে পুনঃঅর্থায়নের জন্য প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বাজেট থেকে বরাদ্দ রাখতে হয়। ফলে রাজস্ব খাত থেকে আহরিত অর্থ উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করার ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, প্রতিবছর খেলাপি ঋণের কারণে ঋণে সুদের হার হ্রাস করা যাচ্ছে না। ফলে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস বা ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যাংকিং কমিশন গঠন, মার্জার ও অ্যাকুইজিশনের উদ্যোগ ব্যবসায়ের জন্য ভালো দিক বলে আমরা মনে করছি।

ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসার প্রস্তাবকেও স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এটি দ্রুত বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

ওসামা তাসীর বলেন, নতুন মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ বাস্তবায়ন একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। ডিসিসিআই আশা করে, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে এই আইন সহায়ক ভূমিকা রাখবে। তবে এই আইনের আওতায় ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট না পাওয়া গেলে অতিরিক্ত ভ্যাটের বোঝা ভোক্তাকে বহন করতে হবে। আর তা হলে ভোক্তা পর্যায়ে ভ্যাটের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে মূদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেতে পারে। যদি মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায়, সেক্ষেত্রে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৩ লাখ টাকা করা যেতে পারে।

ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি ও ভ্যাট রিটার্ন পদ্ধতি সহজ করা প্রয়োজন। ভ্যাটের আইন সহজ ও হয়রানি যেন না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

পাশাপাশি বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়ন ও করপোরেট কর হার হ্রাস না করা হলে সরকারের প্রত্যাশিত বেসরকারি বিনিয়োগ ও উৎপাদনমুখী খাতে বিনিয়োগ বাড়বে না। আর বিনিয়োগ না বাড়লে, বাজেটে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা র্অজন করা কঠিন হয়ে পরবে। পাশাপাশি ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে উন্নয়নে ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাসসহ সকল ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য বাজেটে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা প্রত্যাশা করছি।

বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে ৬৪টি জেলায় ওয়ান স্টপ সার্ভিস বাস্তবায়ন এবং এখানে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি শেয়ার মার্কেটে লক ইন পিরিয়ড বা এক্সিট পিরিয়ড ৩ বছরের পরিবর্তে ১ বছর করার প্রস্তাব প্রশংসনীয় এবং শেয়ার মার্কেটে সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরী।

ডিসিসিআইর সভাপতি বলেন, নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য স্টার্টআপ ফান্ড গঠন করার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। একই সাথে যোগ্য ও সম্ভাবনায় এবং সৃষ্টিশীল উদ্যোক্তাদের এ ফান্ড প্রদান করা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ জুন ২০১৯/নাসির/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়