ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ফাঁকা রাস্তাতেও দুর্ভোগ!

নবীন হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১০, ১৩ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফাঁকা রাস্তাতেও দুর্ভোগ!

নবীন হোসেন : কোনো পরিস্থিতিতেই যেন স্বস্তি নেই! ব্যস্ত ঢাকায় যানজটের ভোগান্তি তো নিত্যসঙ্গী। আবার ফাঁকা রাস্তাতেও যে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় জনসাধারণ সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেলো ঈদের সারা দিন।

চার সদস্যের পরিবার নিয়ে শহীদবাগে আত্মীয়ের বাসায় ঈদের দাওয়াত খেতে যাবেন ধনমন্ডিতে বসবাস করা জসিম উদ্দিন। মোবাইলের অ্যাপস খুলে দেখেন উবার, পাঠাও, ওভাই কারো কোনো গাড়ি নেই। অগত্যা রিকশা নিয়ে প্রধান সড়কে এসে দেখেন, রাস্তা ফাঁকা। রিকশায় যাওয়া সম্ভব নয় বলে অপেক্ষা করলেন সিএনজি অটোরিকশার জন্য। প্রায় ৪০ মিনিট অপেক্ষার পর একটি সিএনজি অটোরিকশা তাদের পাশে এসে দাঁড়ালো। শহীদবাগের কথা শুনেই বললেন ৫০০ টাকা লাগবে। জসিম উদ্দিন একটু দরদাম করতে যাচ্ছিলেন, ওমনি অটো টান দিয়ে বেরিয়ে গেল চালক। আরো আধঘণ্টা অপেক্ষার পর ৪৫০ টাকায় শহীদবাগে যেতে পারেন তিনি। 

বাহনহীন ঢাকার রাস্তায় জসিম উদ্দিনের মতো হাজারো পরিবার ঈদের দিন চরম দুর্ভোগে পড়েছিলেন। সকাল ১১টা থেকে ঢাকার রাস্তাগুলোতে অবাধে চলাচল করেছে রিকশা আর সিএনজি অটোরিকশা। তবে সংখ্যায় অনেক কম। বাস আর টেম্পোর দেখা খুব একটা মেলেনি। উবার, পাঠাও অ্যাপসেও কোনো গাড়ি পাওয়া যায়নি।

ঈদের দিন বিকেলে অনেক পরিবারই আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের বাসায় যেমন বেড়াতে গেছেন, তেমনই বিনোদনকেন্দ্রগুলোতেও ছিলো জমপেশ ভিড়। বসুন্ধরা সিটি, যমুনা, শ্যামলী স্কয়ার, মধুমিতা সিনেমা হলগুলোতে ঈদের দিন সিনেমা দেখতেও ভিড় করেন অনেক দর্শক। রাত ৮টার পর ঢাকার রাস্তায় যারা বেরিয়েছেন তারা ভাবতেই পারেন কারফিউ দেয়া হলো না তো! কারণ, রিকশার দেখা মিলছে কালেভদ্রে। সিএনজি চলছে, তবে কারো ডাকে সাড়া দিচ্ছে না। বাসের দেখা নেই। দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দেয় টিপটিপ বৃষ্টি। ছোট ছোট বাচ্চাসহ পরিবার নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে কোনোক্রমে হয়ত কোনো বাহন জোগাড় করা গেছে, তবে ভাড়া গুনতে হয়েছে তিন থেকে চার গুণ।

রংপুর থেকে আসা রিকশাচালক মোহন। থাকেন মিরপুরে। ঈদের পরদিন সকালে এ প্রতিবেদক তার বাহনে চড়েই কর্মস্থলে রওনা হন। মোহন জানান, ঈদের দিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে আয় করেছেন ১ হাজার ৮২০ টাকা। সাধারণত সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তার আয় হয় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা।

ঈদের দিন রাত ১০টায় ল্যাব এইড হাসপাতাল থেকে মিরপুরের বাসায় আসার উদ্দেশে বের হন হাসপাতালের কর্মকর্তা দলিল উদ্দিন। তিনি জানান, কোনো বাহন না পেয়ে গ্রিন রোড মোড় পর্যন্ত হেঁটেই আসতে হয়েছে তাকে। রাস্তায় মাঝে মাঝে তরুণদের জটলা দেখে একটু ভয়ও পান তিনি। পাছে যদি সব ছিনিয়ে নেয়। যদিও এমন ঘটনা ঘটেনি। তবে টাকা ছিনিয়ে না নিয়ে বলে কয়েই সিএনজি চালক নিয়ে গেছে বড় একটি নোট। গ্রিন রোড থেকে মিরপুর ৬০ ফুট পাকা মসজিদ পর্যন্ত তাকে আসতে সিএনজি অটোরিকশাকে দিতে হয়েছে ৭০০ টাকা!

ঢাকার যানজট নিয়ে সারা বছরই শোনা যায় হতাশা আর ভোগান্তির নিত্য নতুন গল্প। কেউ কেউ তো কাজ ফাঁকি দিতে যানজটের গল্পকে ব্যবহার করেন গর্ব নিয়েই! যানজটের গল্প নয়, হালে কেউ যদি বলে, স্যার, আজ কোনো যানজট পাইনি। আধা ঘণ্টাতেই অফিসে চলে আসলাম। স্যার তার নিজের কাজ ফেলেই চোখ বড় করে জানতে চান, বলেন কী? কোথা থেকে আসলেন? কীভাবে আসলেন? আগ্রহ যেন যানজটে না, ফাঁকা রাস্তার দিকে।

ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে ঢাকা ফাঁকা হয়েছে। এ নিয়ে সব নিউজ পোর্টাল আর টিভি চ্যানেল একাধিক নিউজ করেছে। সত্যিই ঢাকায় ফাঁকা রাস্তা দেখা যেন অতি আনন্দেরই একটি বিষয়। ঈদের আনন্দের চেয়ে খুব বেশি কম হবে না ফাঁকা ঢাকায় চলাচলের তৃপ্তি। কিন্তু ঈদের দিনের বাহনহীন নগরীর চরম দুর্ভোগ সেই তৃপ্তি উগরে দিয়েছে। ঈদের পরের দিনও যে ঢাকায় স্বাভাবিকভাবে যানচলাচল করছে তা সরেজমিন দেখে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকেল সাড়ে ৫টা) অনুমান করা যাচ্ছে না। 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ জুলাই ২০১৯/নবীন হোসেন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়