ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পুড়ে যাওয়া বস্তি যেন দর্শনীয় স্থান!

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৬, ১৮ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পুড়ে যাওয়া বস্তি যেন দর্শনীয় স্থান!

আহমদ নূর: আগুনে সব ঘর পুড়ে গেছে। ঠাঁই হারিয়ে পাশের বঙ্গবন্ধু বিদ্যানিকেতনে আশ্রয় নিয়েছেন মিরপুরের রূপনগরের চলন্তিকা মোড়ের বস্তির বাসিন্দারা। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের দেওয়া কাপড়-খাবারে অর্ধাহারে দিন পার করছেন তারা।

অথচ, এই বিদ্যালয়ের পেছনে বস্তিতেই চলছে অদ্ভুত কাণ্ড। পরিবার, বন্ধু কিংবা স্বজনদের নিয়ে অনেকে দেখতে আসছেন চলন্তিকায় পুড়ে যাওয়া ভগ্নস্তুপ, যেন মানুষের ঢল। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, সংঘবদ্ধ হয়ে সেলফি তুলছেন। আবার অনেক অতি উৎসাহী ব্যক্তি করছেন ফেসবুক লাইভও। যেন এটি দর্শনীয় জায়গা।

রোববার বিকেলে সরেজমিনে ওই বস্তিতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেল।

সরেজমিনে বস্তিতে দেখা গেছে, পুড়ে যাওয়া বস্তির সব প্রবেশ মুখেই মানুষের জটলা। সবাই ভেতরে প্রবেশ করছেন। প্রায় ঠেলাঠেলি করে ভেরতে ঢুকছেন সবাই। বস্তির পোড়া গন্ধে কারো কারো অস্বস্থিবোধ হলেও ঢুকছেনই। সবার মধ্যে কৌতুহল-আলোচনা, কীভাবে এটি পুড়লো? ভেতরে থাকা এতো মানুষ বেঁচে ফিরলেন কীভাবে? কেউ কী ইচ্ছা করে এত বড় বস্তি পুড়িয়ে দিয়েছে?

ঘুরতে আসাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রূপনগর এলাকার আশপাশসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা এখানে ঘুরতে এসেছেন। এদের মধ্যে পরিবারের সব সদস্যদের নিয়ে অনেকে এসেছেন। আগতদের মাঝে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন।

ঘুরতে আসা সাইমুম রিজওয়ান নামে একজন জানান, তিনি মিরপুর-১২ নম্বর এলাকা থেকে পুড়ে যাওয়া বস্তি দেখতে এসেছেন। সঙ্গে তার বন্ধুরাও এসেছেন।

তিনি বলেন, ‘শুধু মাত্র কৌতুহল ও দেখার ইচ্ছা থেকে এখানে এসেছি। দেখতে চেয়েছি, পুড়ে যাওয়া বস্তির এখন কী অবস্থা। ক্ষতিগ্রস্থরা কোথায় কী করছে, এসব দেখছি।’

পরিবার নিয়ে সোলাইমান নামে আরো একজন পল্লবী থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, স্ত্রী আর ছেলের দেখার ইচ্ছা ছিল। তাই তাদের নিয়ে আসলাম।

এছাড়া, পুড়ে যাওয়া বস্তির আশপাশের বাসাগুলোতে থেকেও অনেকে দেখতে এসেছেন।

অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু বিদ্যানিকেতনে গিয়ে দেখা গেছে, ট্রাকে করে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান আগুনে ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে পোষাক ও রান্না করা খিচুড়ি বিতরণ করছে। বিশৃঙ্খল অবস্থায় যে যেভাবে পারছে, খাবার নিচ্ছে। বড় হাড়ি থেকে পলিথিনের ব্যাগে খিচুড়ি ভরে দেওয়া হচ্ছে। যার হাত সবার সামনে যাচ্ছে, সেই খাবার পাচ্ছে। পোষাক বিতরণেও একই অবস্থা দেখা গেছে।

আগুনে ঘর পুড়ে যাওয়া শারমিন নামে এক নারী বলেন, ‘সব শ্যাষ হইয়া গেল। এখন মাইনষের পাতে চাওন ছাড়া উপায় নাই। ’

আরেক ভূক্তভোগী নাজমুল হক নামে এক রিকশা চালক জানান, আগুনে বস্তি পুড়ে যাওয়ার পর সিটি করপোরেশনসহ অনেকে সাহায্য করতে এসেছেন। তবে শৃঙ্খলা না থাকায় কেউ বেশি পাচ্ছেন, কেউ কম পাচ্ছেন, আবার কেউ কিছু পাচ্ছেনই না। বিশেষ করে নারীরা পুরুষের মতো সামনে গিয়ে কিছু আনতে পারছেন না।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিটের দিকে মিরপুর ৭ নম্বর সেকশনের রূপনগর আবাসিক এলাকার চলন্তিকা মোড় বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রাত পৌনে ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ২৪ টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে প্রায় পুরো বস্তিই আগুনে পুড়ে যায়।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ আগস্ট ২০১৯/নূর/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়