সাংবাদিক প্রবেশে বাধা গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। দু’দিন ধরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। বরং তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে।
জাতীয় গৃহায়নের চেয়ারম্যানসহ শীর্ষকর্তাদের দুর্নীতি ঢাকতে কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধের জিরো টলারেন্স’ পূর্তমন্ত্রীর এ নির্দেশনাও মানছে না গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ বেশ কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বদলী বাণিজ্যসহ অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এখানকার সেবাগ্রহীতা ভুক্তভোগীরাই বিভিন্ন সময় এসব অভিযোগ দাখিল করেছেন।
বিষয়টি গৃহায়ণ ও পূর্তমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধতন মহলের নজরেও আসে। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে কয়েকদিন ধরে সাংবাদিকরা জাতীয় গৃহায়ণে আনাগোনা শুরু করলে কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ চক্র ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে গৃহায়ণে সাংবাদিকদের প্রবেশে অঘোষিত বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়। যাতে সাংবাদিকরা অনিয়ম দুর্নীতির কোনো তথ্য নিতে না পারে। শুধু তাই নয়, অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে বক্তব্য নিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তা কর্মচারীর কাছে পর্যন্ত যেতে দেয়া হচ্ছে না সাংবাদিকদের। চেয়ারম্যানের নির্দেশে প্রবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে জানান এখানকার কর্মচারীরা।
অভিযোগ ওঠে, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষে চলমান অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ যাচাই করতে মঙ্গলবার ডেইলি স্টারের সিনিয়র রিপোর্টার হেলিমুল আলম, দৈনিক জনতার সিনিয়র রিপোর্টার জাহাঙ্গীর খান বাবুসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক সেখানে যান। কিন্তু তাদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। সেখানকার কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে ফিরিয়ে দেয়।
ডেইলি স্টারের সিনিয়র রিপোর্টার হেলিমুল আলম বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) এনএইচএ’তে আমরা কয়েকজন সাংবাদিক প্রবেশ করতে গেলে কর্মচারীরা বাঁধা দেন। এ সময় কর্মচারীরা আমাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচারণ করেন। পরে সচিব আমাদের বলেছেন, তিনি আদিষ্ট হয়ে এই নিয়ম চালু করেছেন। এখনকার নিয়ম অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট অ্যাসাইনমেন্ট ছাড়া এনএইচএ প্রবেশ করা যাবে না।’
দৈনিক জনতার সিনিয়র রিপোর্টার জাহাঙ্গীর খান বাবু বলেন, ‘একটি নিউজের অনুসন্ধান করতে রোববার থেকে দফায় দফায় এনএইচএ’র প্রধান কার্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। আজ (মঙ্গলবার) দুপুর ২টার দিকে এনএইচএ’র গেটে এসে দেখি কয়েকজন সাংবাদিক ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছেন, কিন্তু ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। একপর্যায়ে গেইটে দায়িত্বপালনকারী কর্মচারীরা উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচারণ করেন। পরবর্তীতে এনএইচএ’র সচিবকে অভিযোগ করলেও তিনি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি।’
এ প্রসঙ্গে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ উল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে, কথাটি সঠিক নয়। তবে সাংবাদিক কেন এসেছেন, সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এদিকে এনএইচএ’তে সাংবাদিকদের পেশাগতকাজে বাঁধা এবং অসৌজন্যমূলক আচারণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম-বাংলাদেশের সভাপতি অমিতোষ পাল এবং সাধারণ সম্পাদক মতিন আব্দুল্লাহ।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে নেতারা বলেছেন, এনএইচএতে সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে বাধাপ্রদান করা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী কাজ। অবিলম্বে এনএইচএ’তে সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানটিতে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সনি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন