ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বিমানে আমদানি হচ্ছে পেঁয়াজ: সোমবারের মধ্যে দেশে আসবে

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৮, ১৫ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিমানে আমদানি হচ্ছে পেঁয়াজ: সোমবারের মধ্যে দেশে আসবে

এবার বিশেষ ব্যবস্থায় কারগো বিমানে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর প্রথম চালান রোববার অথবা সোমবারের মধ্যে দেশে আসবে।

এরপর দেশজুড়ে সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হবে। লাগামহীনভাবে দাম বাড়তে থাকা পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক করতে জরুরি ভিত্তিতে কার্গো বিমানে করে আমদানির এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

শুক্রবার বিকেলে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারিভাবে টিসিবি তুরস্ক ও বেসরকারি খাতের এস আলম গ্রুপ মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করবে।

তিনি বলেন, যতোদিন পর্যন্ত বাজার স্বাভাবিক না হবে, ততোদিন এয়ার কার্গোতে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। সরকারিভাবে পেঁয়াজ আমদানি করার জন্য একজন উপসচিবকে তুরস্কে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া একজন উপসচিব মিশরেও আছেন।

গত সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। ২৯ সেপ্টেম্বর অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত সরকার। বাংলাদেশ পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের ওপরই নির্ভরশীল। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দেশের বাজারে হু হু করে দাম বাড়তে থাকে। তখন দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকা হয় দেশি পেঁয়াজের দাম। দাম কমানোর জন্য মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে সরকার।

এছাড়া টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি ও আড়তগুলোতে অভিযানের পর দাম কিছুটা কমলেও পরে আবারো দাম বাড়তে শুরু করে। এরপর তুরস্ক ও মিশর থেকে আরো আমদানি করে দাম ৮৫ টাকায় নামিয়ে আনার আশা দেখালেও প্রকৃতপক্ষে তা কমেনি, উল্টো লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বেড়ে দুই শ’ ছাড়িয়ে যায়। শুক্রবার দুপুরে কেজিতে দাম বেড়ে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক ঊচ্চমূল্যে হাপিয়ে উঠেছে সারাদেশের মানুষ। দেশজুড়ে চলছে এই নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। যদিও সরকার বলছে, শিগগিরই পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে টিসিবির মাধ্যমে সরাসরি তুরস্ক থেকে, এস আলম গ্রুপ মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করবে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আফগানিস্থান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে জরুরি ভিত্তিতে কার্গো উড়োজাহাজ যোগে পেঁয়াজ আমদানি করবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এছাড়া সমুদ্র পথে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বাংলাদেশের পথে রয়েছে, পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় এই চালান খুব শিগগিরই বাংলাদেশে পৌঁছাবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে টেকনাফ স্থলবন্দর, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজ পরিবহনে কয়েকদিনের জন্য সমস্যা হয়েছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য জরুরি ভিত্তিতে উল্লেখিত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, খুব কম সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ বাজারে চলে আসবে এবং মূল্য স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে। কেউ পেঁয়াজ অবৈধ মজুত করলে, কারসাজি করে অতি মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করলে বা অন্য কোনো উপায়ে বাজারে পেঁয়াজের সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করলে, তাদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাজার মনিটরিং করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজার অভিযান জোরদার করেছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে উৎপাদিত দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে।

দাম কম ও সহজ পরিবহনের কারণে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। তবে এ বছর ভারতের মহারাষ্ট্র ও অন্য এলাকায় বন্যার কারণে পেঁয়াজের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলে কিছুদিন আগে রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইস (এমইপি) নির্ধারণ করে দেয়।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ভারত কর্তৃপক্ষ পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে। বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে এলসি এবং বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছে। পাশাপাশি মিশর ও তুরস্ক থেকেও এলসির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। সম্প্রতি মিয়ানমারও পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। ফলে বাংলাদেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।

পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে অনেকবার সভা করেছে, নিয়মিতভাবে আমদানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানি বৃদ্ধি এবং নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার অনুরোধ করা হয়েছে। প্রতিদিনই অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

আমদানিকারকদের উৎসাহিত করতে পেঁয়াজ আমদানি ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন এবং সুদের হার কমানো হয়েছে। স্থল ও নৌ বন্দরগুলোতে আমদানিকৃত পেঁয়াজ দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খালাসের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সে মোতাবেক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমদানিকৃত পেঁয়াজ খালাস করা হচ্ছে।

দেশে পেঁয়াজের দাম ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ট্রাক সেলে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি জোরদার করা হয়েছে। ৩৫টি ট্রাকের মাধ্যমে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা মূল্যে এ পেঁয়াজ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিক্রয় চলছে। এতে করে স্বল্প আয়ের মানুষ ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ ক্রয় করার সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে পেঁয়াজ দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পৌঁছানোর জন্য সবধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

সামগ্রিক অবস্থা পর্যালোচনা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আশা করছে, খুব শিগগির পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।


ঢাকা/হাসনাত/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়