ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ছায়াছবির স্থান দখল করাই লক্ষ‌্য’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৬, ২০ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ছায়াছবির স্থান দখল করাই লক্ষ‌্য’

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য শুধু চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগে পৌঁছানোই নয়, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ছায়াছবির স্থান দখল করা। জাতির পিতার গড়ে দেয়া ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক আগ্রহে ও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’

বুধবার বিকেলে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানসহ ২১ সদস্যের নির্বাহী পরিষদ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল করিম, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র ও প্রশাসন) জাহানারা বেগম প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছি‌লেন।

তথ্যমন্ত্রী ব‌লেন, আমাদের দেশের অনেক ছবি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পুরস্কার পেয়েছে, সমাদৃত হয়েছে এবং হচ্ছে। অর্থাৎ চলচ্চিত্রের যে বন্ধ‌্যাত্ব, সেটি কেটে গেছে। তবু চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগে পৌঁছাতে আমাদের আরো অনেকে কাজ করতে হবে। তবে আসল কথা, গত বছরের তুলনায় এ বছর চলচ্চিত্রে গতিশীলতা এসেছে। অনেক নতুন নতুন প্রযোজক, পরিচালকও এ ক্ষেত্রে যোগ দিচ্ছে। পুরনো পরিচালক, যারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন, তারাও আবার নতুনভাবে ছবি নির্মাণ করার কথা চিন্তা করে কাজ শুরু করেছে।

আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘চলচ্চিত্র শিল্পকে সুরক্ষা দেবার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেকগুলো ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন। এফডিসির দৈন্য কাটিয়ে তোলার জন্যে আমরা ইতোমধ্যে অনেকগুলো প্রকল্প নিয়েছি। নতুন ভবন হবে, সেখানে অনেক কিছু থাকবে। সেখানে প্রায় ৩২২ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রকল্প পরামর্শক নিয়োগে টেন্ডার আহ্বান এবং প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যেগুলো অনেকদিন ধরে হয়নি। আমরা আশা করছি, আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে সেখানে নতুন ভবন নির্মাণ হবে। সমস্ত আধুনিক ও বিশ্বমানের সুবিধা সেখানে থাকবে।

তি‌নি ব‌লেন, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ১০০ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটির প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে এখন শুটিং হয়। আমরা বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটিকে বিশ্বমানের ফিল্ম সিটিতে রূপান্তর করার জন্য প্রায় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আমি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিকে বলব, সেখানে গিয়ে একবার ঘুরে এলে আমাদের গণমাধ্যমের বন্ধুরা সেখানে যাবেন, তাহলে সেটি আবার প্রচার পাবে। অনেকেই সেখানে যায়, আমিও যেতে পারি সাথে।’

হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে চলচ্চিত্র অনুদানে আমরা কিছু পরিবর্তন এনেছি, যাতে করে আরো কিছু ছবি নির্মিত হয়। প্রথমত অনুদানের অংক ছিল ৫ কোটি টাকা, এবছর আমরা সেটিকে ১০ কোটি টাকায় উন্নীত করেছি। শর্ট ফিল্মের জন্য ছিল ৬০ লক্ষ টাকা সর্বোচ্চ, সেটিকে আমরা ৭৫ লক্ষ টাকায় উন্নীত করেছি। আগে দেখা যেত, অনুদানের ছবি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিনেমা হলে মুক্তি পেত না। আমরা এখন কিছু বাধ্যবাধকতা আনছি যে, অনুদান নিয়ে ছবি বানালে সেটি হলে মুক্তি দিতে হবে। তাহলেই অনুদান নিয়ে ছবি বানিয়ে সেটি অন্য কারো কাছে বিক্রি করে ফেলা বন্ধ হবে। তবে অবশ্যই কিছু অনুদান আর্ট লেভেলে দিতে হবে। আর্ট ফিল্ম সব সময় ব্যবসা করতে পারে না, কিন্তু আর্ট ফিল্ম হওয়ারও প্রয়োজন আছে।’

বিশ্বব্যাপী সিনেপ্লেক্সের প্রসার ও একক সিনেমা হল বন্ধ হবার ধারার কথা উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ভারতেও গত কয়েক বছরে একক পর্দার অনেকগুলো সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। আবার সিনেপ্লেক্সগুলো চলছে এবং নতুন করে গড়ে উঠছে। আমাদের দেশে এর মাঝে সামাজিক চলচ্চিত্র না হয়ে অন্য ধরনের চলচ্চিত্র হচ্ছিল। যে কারণে সাধারণ দর্শক বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণি চলচ্চিত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। সেই অন্ধত্ব কেটে গেছে। আমাদের দেশে গত কয়েক বছর ধরে ভালো চলচ্চিত্র হচ্ছে এবং পরিবার পরিজন নিয়ে দেখার মতো সুন্দর ভালো ছবি হচ্ছে।’

বন্ধ সিনেমা হল পুনরায় চালুর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে বেশ কয়েক দফা আলোচনা ও আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের কথা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘হলগুলো আধুনিকায়নের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার প্রাথমিক কাজ হয়েছে। আমরা আশা করছি, কয়েক মাস পর একটি সমাধানে পৌঁছাতে পারব, যাতে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দিয়ে বন্ধ হওয়া হল আবার চালু করা যায়, কিংবা হলগুলোর আধুনিকায়ন হয়।’

ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে আগামী বছরের মধ্যে অনেকগুলো সিনেপ্লেক্স হবে এবং দেশের অন্যান্য শহরগুলোতেও সিনেপ্লেক্স হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। আগে মানুষ শুধু সিনেমা দেখতে যেত, এখন সিনেমার সাথে আউটিংও যুক্ত। কারণ, আর্থিক সামর্থ্য বাড়ার কারণে আমাদের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। আগে যে ধরনের চেয়ারে বসে মানুষ সিনেমা দেখত, এখন সে ধরনের চেয়ারে বসে মানুষ সিনেমা দেখতে চায় না। এসব দিক বিবেচনায় এনেই সিনেমা হলগুলোর আধুনিকায়ন করার জন্য আমরা সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।এছাড়া, দেশের বিভিন্ন জেলায় তথ্যকেন্দ্র নির্মাণ করব। সেগুলোর সাথে একটি করে হল থাকবে।’

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নেতাদের মধ্যে রোজিনা, রুবেল, সুব্রত, অঞ্জনা, আলীরাজ, অরুণা বিশ্বাস, ডিপজল, আরমান, জয় চৌধুরী, ইমন, জাকির, জেসমিন প্রমুখ সভায় অংশ নেন।


ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়