ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জলবায়ু ক্ষতি মোকাবেলায় ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না বাংলাদেশ : টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ২৮ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জলবায়ু ক্ষতি মোকাবেলায় ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না বাংলাদেশ : টিআইবি

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) অভিযোগ করছে, প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী জলবায়ু ক্ষতি মোকাবেলায় যে ক্ষতিপূরণ বাংলাদেশের পাওয়া উচিত তা পাচ্ছে না।

এ পর্যন্ত গ্রীন ক্লইমেট ফান্ড (জিসিএফ) থেকে বাংলাদেশের জন্য ৮৫ মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ছাড় হলেও তার সম্পূর্ণ অর্থ পাওয়া যায়নি। অথচ জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশের দুই দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি দরকার।

কিন্তু প্যারিস চুক্তিতে এ বিষয়ে লিগ্যাল এগ্রিমেন্ট না থাকায়  যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা (ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবি, আইএমএফ) একটি দুষ্ট চক্র তৈরি করে অর্থ ছাড়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।

প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী হিসেবে বাংলাদেশ কার্বন গ্যাস কমানোর যে শর্তে আবদ্ধ হয়েছে তাও বাংলাদেশ ঠিকমতো পালন করছে না বলে অভিযোগ টিআইবির।

তারা বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ৩০ টি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছে। যার ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন গ্যাসের মাত্রা বাড়াতে বাংলাদেশ সহায়ক হবে।

যদিও বাংলাদেশ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ কম বলা হচ্ছে, তবুও সার্বিক পারিপার্শ্বিক ক্ষতি বিবেচনায় এক ইউনিট বিদ্যুতের দাম ২৬ টাকা করে পড়বে বলে দাবি টিআইবির।

এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর মতো নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। 

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় তুলে ধরে টিআইবি।

স্পেনের মাদ্রিদে আসন্ন ‘কপ ২৫ জলবায়ু সম্মেলন : জলবায়ু অর্থায়নে দূষণকারী শিল্পোন্নত দেশসমূহের প্রতিশ্রুতির বাস্তব অগ্রগতি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে টিআইবি।

সংবাদ সম্মেলনে বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়নে অনিশ্চয়তার বিষয়টি তুলে ধরে টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হয়, প্যারিস চুক্তিতে প্রতিশ্রুত জলবায়ু তহবিল প্রদানের বিষয়টি বাধ্যতামূলক না হয়ে ঐচ্ছিক। এতে ঝুঁকিতে থাকা স্বল্পোন্নত দেশ গুলোর জন্য অনুদান ভিত্তিক অর্থায়ন পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

সর্বোচ্চ দূষণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তি থেকে বের হওয়ায় আন্তর্জাতিক অর্থায়নে অনিশ্চয়তা আরো বেড়েছে। বাংলাদেশসহ সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ১০ টি জিসিএফ থেকে মাত্র এক দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ এর দশমিক সাত শতাংশ অর্থাৎ ৮৫ মিলিয়ন ডলারের অনুমোদন পেয়েছে।

জিসিএফ'র স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে টিআইবি বলছে, তারা এখন পর্যন্ত ৪৫ শতাংশ অনুদান, ৪১ শতাংশ ঋণ হিসেবে তহবিল বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলো ঋণ নেবে কেন? তাদের তহবিলের অভিযোজন ও প্রশমনের অনুপাত ৫০:৫০ হবে বলা থাকলেও তারা অভিযোজন খাতে ২৪ শতাংশ, প্রশমন খাতে ৪২ শতাংশ এবং মিশ্র হিসেবে ৩৬ শতাংশ বরাদ্দ দিয়েছে। ফলে এখানে স্বচ্ছতার ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়।

বন্ধ হওয়ার উপক্রম ভারতীয় বেসরকারী ব্যাংক আইএল অ্যান্ড এফএস এবং অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকায় অভিযুক্ত এইচএসবিসি ব্যাংক জিসিএফে নিবন্ধন পাওয়ায় এর শুদ্ধাচার নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ৩০টিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে। এতে বায়ুমণ্ডলে ১১ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড নিসৃত হবে।

ফলে কার্বন বিস্ফোরণে দেশের জনগোষ্ঠীকে চরম হুমকির মুখে ফেলবে। সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বেড়ে ১১ শতাংশ স্থলভাগ হারাবে দেশ। চার ও পাঁচ মাত্রার ঘুর্ণিঝড় আঘাত হানার ঝুঁকি ১৩০ শতাংশ বেড়ে যাবে।

জার্মান ওয়াচের বরাতে টিআইবি বলছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে প্রায় দুই হাজার ৮২৬ দশমিক ৬৮ মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া টিআইবির গবেষণায় দেখা গেছে বন্যার কারণে পরিবারপ্রতি গড়ে ২১০ ডলার ক্ষতি হয়।

এছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতি বছর গড়ে তিন হাজার ৭০ কোটি ৮০ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এর ফলে বাংলাদেশ প্রতি বছর জিডিপির অতিরিক্ত শূন্য দশমিক ৩০ প্রবৃদ্ধি অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 

ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় আলাদা তহবিল গঠনের দাবি জানিয়ে টিআইবি থেকে বলা হচ্ছে, সম্প্রতি ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বিবিধ বিমা এবং বন্ডকে প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর স্বেচ্ছায় দেওয়া কিস্তি থেকে সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাব ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর জন্য অনুদান ভিত্তিক অভিযোজন তহবিল প্রদানের মূল নীতিমালার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বীমা এবং বন্ড ভিত্তিক কার্যক্রম পরিকল্পনা মুনাফায় আগ্রহী ব্যক্তি মালিকানাধীন সংস্থার প্রসারে সহায়ক হবে। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি ও পরিবারের কাছ থেকে বীমার কিস্তি আদায়ের কারণে তাদের উপর আরো চাপ সৃষ্টি করবে এবং ঝুঁকিতে থাকা লোকজনের উপর আরো আর্থিক চাপ বাড়বে।

কপ ২৫ এর বাংলাদেশের জন্য উত্থাপনযোগ্য সুপারিশ তুলে ধরে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দূষণকারীদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ নীতি বিবেচনা করে ঋণের বদলে শুধু অনুদান নিশ্চিত করতে হবে। জিসিএফ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় তহবিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ও সহজে সরবরাহে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলো মিলে দাবি তুলতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিযোজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে চাহিদা মাফিক জলবায়ু অনুদান ভিত্তিক তহবিল প্রদানে রোডম্যাপ প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে।

এছাড়া ২০৫০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রতিশ্রুত সরকারি লক্ষমাত্রা অর্জনের স্বার্থে অবিলম্বে রামপাল, তালতলি ও কলাপাড়ায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পায়ন কার্যক্রম স্থগিত করার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চীন, ভারত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু তারাই বাংলাদেশে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে বিনিয়োগ করছে। এর ফলে তাদের ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি বাংলাদেশ কাজে লাগবে।



ঢাকা/নূর/জেনিস

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়