বিজয়ের দিনে মুখর বিনোদনকেন্দ্র
লাল-সবুজ পতাকার রঙে শোভিত পোশাক। হাতে, গালে, কপালে নানা আল্পনা। যেন মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়ছে সবাই। এ উচ্ছ্বাস বিজয়ের, এ আনন্দ পরাধীনতার শিকল ভাঙার।
৪৮ বছর আগের এই দিনে পরাধীনতার শিকল ভেঙেছিল বীর বাঙালিরা। ১৯৭১ সালে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।
সোমবার বিজয় দিবসে ভোরের কুয়াশা আর ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে স্বাধীনতার বীর সেনানীদের স্মরণ করেন রাজধানীবাসী। এরপর রাজধানীর বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্র, পার্ক, খেলার মাঠ, স্মৃতি স্তম্ভগুলোতে ভিড় জমাতে শুরু করেন অনেকে। উদ্দেশ্য- বিজয়ের আনন্দ পরিবার, স্বজন, বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে নেয়া।
রাজধানীর বিভিন্ন পার্ক, খেলার মাঠ, বিনোদনকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। কারো মাথায়, কারো হাতে জাতীয় পতাকা বাঁধা। গালে লাল-সবুজ রঙে লেখা ‘মহান বিজয় দিবস’। পোশাকেও লাল-সবুজের সমন্বয়।
সাধারণত প্রতিদিন সকালে ধানমন্ডি লেকে প্রাতঃভ্রমণকারীদের ভিড় থাকত। তবে আজ সকালে গিয়ে দেখা গেল অন্যরকম আবহ। সকাল থেকে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে নানা বয়সী নারী-পুরুষের মিলনমেলা বসেছিল সেখানে। বিজয় দিবসে তারা ঘুরতে এসেছেন। লেকে ডিঙি নৌকায় ভ্রমণ করেন অনেকে।
রবীন্দ্র সরোবরে কথা হয় চাকরিজীবী আসিফুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, সপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে সচরাচর পরিবার নিয়ে বের হওয়া হয় না। সরকারি অনেক ছুটির দিনেও অফিসের কাজ থাকে। তবে এবার ছুটিতে কোনো কাজ রাখিনি। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম।
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের শিক্ষার্থী তাসনিম আফরা বলেন, গ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পর ভোরের সূর্য দেখা হয় না। বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য ভোরে এখানে চলে আসলাম। যদিও কুয়াশার জন্য সূর্য দেখতে পারিনি। তবু কুয়াশায় মোড়া সকাল উপভোগ করেছি।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে দেখা গেছে সাধারণ মানুষের উপচেপড়া ভিড়। ঢাকা ও এর আশপাশ থেকে অনেকে এসেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির সামনে। বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও অনেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন।
সকাল থেকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে ভিড় জমাতে শুরু করেন দর্শনার্থীরা। কেউ এসেছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, কেউ এসেছেন বন্ধু-প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে। শিশুরা এসেছে বাবা-মায়ের সঙ্গে।
জাদুঘরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য আসলাম বলেন, অন্যান্য ছুটির দিনের তুলনায় আজ ভিড় একটু বেশি। সকালের তুলনায় দুপুরে ভিড় অনেক গুণ বেড়েছে।
স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সূত্রাপুর থেকে এসেছেন সরকারি চাকরিজীবী ফজলুল হোসেন। তিনি বলেন, সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা দিতে এখানে নিয়ে আসলাম। জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি সংরক্ষিত আছে। এগুলো কোমলমতি শিশুদের জানানো উচিত। তাহলে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে।
হাতিরঝিল এলাকাতেও দেখা গেছে দর্শনার্থীদের ঢল। তবে অন্যান্য এলাকার তুলনায় এখানে দর্শনার্থীদের ধরণ আলাদা। বেশিরভাগ দর্শনার্থী তরুণ-তরুণী।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফরহাদ উদ্দীন বলেন, সকালে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সাভার গিয়েছিলাম। সেখান থেকে সরাসরি এখানে চলে এসেছি। বন্ধুরা মিলে ছুটির দিন উপভোগ করছি। একসাথে খোলা আকাশের নিচে গান গাইছি।
মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধেও ছিল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়।
ঢাকা/নূর/রফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন