ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ইতিহাসের পাতায় ঢাবির নৃশংস হতাকাণ্ড

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ২৬ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইতিহাসের পাতায় ঢাবির নৃশংস হতাকাণ্ড

বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম কালসাক্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ২৫ মার্চ কালোরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ওপর নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ড চালায় পাকিস্তানি হায়েনারা।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের বর্বর হামলার সময় ঢাকায় থাকা ব্রিটিশ সাংবাদিক সায়মন ড্রিং ব্যাংককে পৌঁছে লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার জন্য এক প্রতিবেদন পাঠান। ৩০ মার্চ ১৯৭১ ছাপা হওয়া তার ওই প্রতিবেদনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার ইকবাল হলের (এখন জহুরুল হক হল) গণহত্যার তথ্যও স্থান পায়।

২৭ বছর বয়সী দুঃসাহসী সাংবাদিক সায়মন ড্রিং সেদিন চোখের সামনে দেখেছিলেন ইতিহাসের জঘন্যতম এক গণহত্যার ভয়াবহতা। উৎসুক তরুণদের কলরব নয়, ইকবাল হলের বাতাস সেদিন ভারী হয়ে ছিল বারুদ আর পোড়া-ছেঁড়া লাশের গন্ধে। তিনি নিজে গুণে দেখেছেন, প্রায় ৩০টা লাশ তখনো পড়ে ছিল এখানে-সেখানে, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে।

টেলিগ্রাফে ছাপা হওয়া ’৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর জঘন্যতম গণহত্যার ‘দলিল’ সায়মনের ওই প্রতিবেদন বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার অন্যতম লক্ষ। মাঝরাতের পরপরই পাকিস্তানি সেনারা প্রবেশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। সেনারা ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরি দখল করে সেটিকে ঘাঁটি বানিয়ে ছাত্রাবাস এলাকায় গোলা ছুড়তে থাকে। ইকবাল হল ছিল সরকারবিরোধী ছাত্রসংগঠনের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সেদিন মর্টারের শেল আর মেশিনগানের অবিরাম গুলিতে শুধু ইকবাল হলেই নিহত হয়েছিল ২০০ নিরপরাধ ছাত্র। হামলার দুই দিন পরও দেখা যাচ্ছিল, পুড়ে যাওয়া রুমের মধ্যে পড়ে থাকা লাশ আর লাশ।

পাকিস্তানি বাহিনী আরও বহু লাশ সরিয়ে ফেলেছিল আগেই। একটি হলে ছাত্রদের মেরে দ্রুত কবর খুঁড়ে মাটি চাপা দেওয়া হয়। তারপর ওপর দিয়ে ট্যাংক চালিয়ে সমান করে দেওয়া হয় মাটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকার বস্তিঘরের বাসিন্দারাও রেহাই পায়নি নৃশংসতার হাত থেকে। রেললাইন বরাবর ২০০ গজ এলাকার বস্তিঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় কাছের একটি মার্কেটও। হত্যা করা হয় ঘুমন্ত দোকানমালিকদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযানটি কতটা নৃশংস ছিল, জগন্নাথ হলের ক্যান্টিনের কর্মী সুনীল কুমার দাসের বিবরণে তার কিছুটা আঁচ পাওয়া যায়। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘সেদিন (জগন্নাথ হলের) শহীদ মিনারের পাশে কত লোকের যে লাশের সারি ছিল, তার কোনো হিসাব নেই। হল থেকে ছাত্রদের, হলের শিক্ষক-কর্মচারীদের হত্যা করে লাশ এনে কবর দেওয়া হয়। আমিসহ চারজন কর্মচারী একটা ড্রেনে লুকিয়ে ছিলাম। আমরা পরদিন সকালে পালিয়ে যেতে সক্ষম হই।’

রশীদ হায়দার সম্পাদিত ১৯৭১: ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বইটিতে নূরুল উলা লিখেছেন, রাতে দেখি জগন্নাথ হল ছাত্রাবাসের চারপাশ পাকবাহিনীতে ছেয়ে গেছে। হলের কক্ষগুলোতে আগুন। কক্ষগুলোতে ঢুকে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সকালে উঠে দেখি মাঠের পশ্চিম দিকে লাশ এনে জড়ো করা হচ্ছে। আহতদের গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হচ্ছে। এভাবে কয়েকবার চলল।...আমি তাড়াতাড়ি ক্যামেরা সেট করে একটা কালো কাগজে ফুটো করে ক্যামেরার লেন্সটা জানালার কাচের ওপর রাখলাম। এরপরের তিনটা গণহত্যা ধারণ করলাম। বুলডোজার দিয়ে মাটি খুঁড়তেও দেখলাম।


ঢাকা/ইয়ামিন/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়