ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন ডিসিরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ৩১ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন ডিসিরা

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট দুর্যোগ প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে জেলার প্রশাসকরা বলছেন, পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া পর্যন্ত তাদের এ কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে।

মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এ কথা জানান তারা।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, কী প্রয়োজন এবং করণীয় থাকলে সেটি কী-এসব বিষয় নিয়ে দেশের সব জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ভিডি কনফারেন্স করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কনফারেন্সে প্রথমে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ওহিদুজ্জামান যুক্ত হন। তার জেলার পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘জেলায় দশ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এর মধ্যে একজন মৃত্যু হয়েছে, বাকি সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।’

জনসচেতনতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এজন্য মানুষকে হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার করা এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাই সহযোগিতা করছে। জেলায় পিপিই (পারসোনাল প্রোটেকশন ইকুপমেন্ট) কোনো সংকট নেই। ডাক্তার-নার্সরা সার্বিক প্রস্তুত রয়েছেন।’

এরপর কক্সবাজার জেলা প্রশাসক জামাল হোসেন ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী করোনা প্রতিরোধে যে চার দফা নির্দেশ দিয়েছেন সেটি জেলায় পালন করতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং, রোগীর জন্য ১শ শয্যার আসসোলেশন সেন্টার, যারা বিদেশ থেকে এসেছে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার ব্যধ্যতামূলক করছি। চিকিৎসা সামগ্রী নিশ্চিত করছি। সংকটকালীন মানুষ যাতে কষ্ট না পায় এজন্য ঘরে ঘরে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতারাও জনগণের পাশে রয়েছেন।’

কক্সবাজারে একটি করোনা টেস্ট্রিং ল্যাব করার কাজ চলেছে বলেও জানান তিনি।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, কক্সবাজারে একজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর আর কেউ নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে কি না?।

প্রধানমন্ত্রীকে জেলা প্রশাসক জানান, ওই ব্যক্তির যেখানে যেখানে গিয়েছেন এবং যারা তার সংস্পর্শে এসেছে তাদের সবাইকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ে আমরা চিন্তিত। এদিকে নজর দিতে হবে, যাতে সংক্রমণ না হয়। আমরা আমাদের নিজেদের লোক দিয়েই করাবো সবকিছু।’ এ সময় স্থানীয় প্রশাসন তাকে আশ্বস্ত করেন। 

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘সম্মিলিত টিম ওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। আইইডিসিআর থেকে যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেভাবে সমাজের আনাচে কানাচে প্রচারণা চালিয়ে জনগণকে সতর্ক করেছি।’

জেলার সিভিল সার্জন বলেন, তারা সাধ্যের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী জানতে চান কোনো কিছুর প্রয়োজন রয়েছি কি না? এসময় সিভিল সার্জন বলেন, ‘না সবকিছু আছে।’

সংশ্লিষ্ট আসনের সংসদ সদস্য সায়মন সারোয়ার কমল বলেন, ‘নিজেরা মাঠে নেমে মানুষকে সচেতন করছি। এখন খাদ্য সরবরাহ করে যাচ্ছি।’ তবে তিনি বলেন, ‘জেলা মাত্র ১৫ হাজার পরিবার সরকারের খাদ্য সামগ্রী পেয়েছে। ১০টাকার যে চাল দেওয়া হয় সেটি এরই মধ্যে বিতরণ হয়ে গেছে। পরবর্তী ট্রিপের চাল যদি অগ্রিম দেওয়া হয় মানুষের অনেক উপকার হবে।’

এরপর গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তার জেলার পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানান।

গাইবান্ধায় এখন পর্যন্ত চারজন আক্রান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে দু’জন আমেরিকা ফেরত ছিলেন। তারা এসে একটা বিয়েতে যোগ দেন। পরে ওই দু’জনের সঙ্গে যারা সংস্পর্শে ছিলেন তাদের সবাইকে আমরা হোম কোয়ারেন্টাইন করে রেখেছি। উনার বাড়িতে যে আত্মীয় ছিল তাদেরও আমরা আবদ্ধ করে রেখেছি। উনারা যেখানে যেখানে গিয়েছেন সবাইকে খোঁজ দিয়ে নজরদারি হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখেছি। সরকারি যে সহায়তা আসছে তা নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে তালিকা করে পৌঁছে দিচ্ছি।’

জেলার এসপি বলেন, ১ মার্চ থেকে গাইবান্ধায় ৪২৬ জন বিদেশ থেকে এসেছেন। তাদের সবাই হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এর মধ্যে ২৪৬ জনের হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ হয়েছে। ১৯০জন এখনো আছে হোম কোয়ারেন্টাইনে’।

তিনি বলেন, ‘আমেরিকা ফেরত যে দু’জনের করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছিল তাদের সংস্পর্শে আসায় ৮৬ পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করেছি। তারা যেখানে যেখানে গিয়েছেন সব জায়গায় করে কোয়ারেন্টাইন করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। বার বার মনিটরিং করছি বিভিন্ন এলাকায় যাতে গণজমায়েত না করতে পারে।’

ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা থেকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, করোনা সংক্রমণের ৪৯টি কেস হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। যে ৫ জন মারা গেছেন তাদের দীর্ঘমেয়াদী রোগ ছিল। শেষ মুহূর্তে তারা হাসপাতালে এসেছিলেন।’

তিনি জানান, বিভিন্ন জেলায় আক্রান্তদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১০ জনই মাদারীপুরের।’ করোনা ভাইরাসের বিষয়ে তথ্য এলে প্রক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘রোগী শনাক্ত হলে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখে কন্টাক্ট মরিটরিং করা হচ্ছে। পরীক্ষা করা হচ্ছে।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবার পারসোনাল প্রটেকশন ইকুপমেন্ট-পিপিই পরার দরকার নাই। শুধু তাদেরই দরকার যারা রোগীর সেবা করবে। সবাই পরলে অনেক সময় প্রয়োজনীয় লোক পাবেন না। বিষয়টি প্রচারণা বাড়াতে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রীর।

এ সময় করোনা রোগীদের দাফন নিয়ে মানুষকে আতঙ্কিত না হওার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলে, ‘দাফনের ব্যাপারে মানুষ একটু আতঙ্কিত হচ্ছে। এটাতে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।’

ভিডিও কনফারেন্সে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে জেলার সিভিল সার্জন, স্বশস্ত্র বিভাগের প্রতিনিধি, পৌর মেয়র, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, রাজনৈতিক নেতারা, সংসদ সদস্য, পুলিশ বাহিনীর প্রতিনিধি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সরকারি কর্মকর্তার উপস্থিত রয়েছেন।



ঢাকা/পারভেজ/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়