ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থায় ভুল, দিতে হতে পারে মাসুল

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৩, ৭ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থায় ভুল, দিতে হতে পারে মাসুল

করোনা পরিস্থিতিতে বেশ কয়েক দিন থেকে সারা দেশে খেটে খাওয়া অনেককে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য বিভিন্ন উপকরণ।

খাদ্য সামগ্রী ও এসব উপকরণ যে পদ্ধতিতে দেওয়া হচ্ছে, তা ঠিক হচ্ছে না বলে মনে করছেন অনেকে। তারা বলছেন, দলে দলে দরিদ্রদের এক জায়গায় জড়ো করে সাহায্য বিতরণের ব্যবস্থার জন্যও মাসুল দিতে হতে পারে। যারা দিচ্ছেন, তারাও নির্দিষ্ট দুরত্ব মানছেন না বলে সেটিও স্বাস্থ্য ঝুঁকি তথা করোনার ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে শঙ্কা তাদের। কারণ সাহায্যদাতারাও সাহায্যপ্রার্থীদের মতোই গায়ে গা লাগিয়ে কাজগুলো করছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস ছড়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা।দিন দিন দেশে বাড়ছে ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে । সে কারণে এমুহূর্তে সকলের ঘরে থাকা সবচেয়ে জরুরি। তাই যারা খেটে খাওয়া মানুষ তাদের খাদ্য সামগ্রী দিতে ঘরের বাইরে না এনে তাদের ঘরে ঘরেই খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ডা. জাহিদ বলেন, ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী না পৌঁছালে তারা যখন নিতে আসবে, তখন তো কারো না কারো সংস্পর্শে আসবে।আর তাদের মধ্যে কারো শরীরে যদি ভাইরাস থাকে, তাহলে তো অন্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবেই। সেকারণে যারা লাইনে দাঁড় করিয়ে খাদ্য সামগ্রী দিচ্ছেন, তাদের বলবো, আপনার ভুল করছেন।অন্যকেও ঝুঁকিতে ফেলেছেন, নিজেও ঝুঁকিতে পড়ছেন। এভাবে না দিয়ে যাদের দিতে চান, তাদের তালিকা করে বাড়িতে দিয়ে আসেন।

বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের সভাপতি আহাদ উদ্দিন হায়দার বলেন, রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোনো ভাবেই খাদ্য দেওয়া যাবে না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এতে ঝুঁকি অনেক গুণ বেড়ে যাবে। এই বিষয়টি আমাদের সকলেই মাথায় রাখতে হবে।

আহাদ উদ্দিন হায়দার বলেন, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, ভলান্টিয়ার, স্থানীয় গণ্যমানরা মিলে সমন্বয় করে প্রথমে তালিকা তৈরি করতে হবে। এরপর সে অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের যারা দিচ্ছেন-তাদের উচিত হবে যে কোনো একটা গ্রাম, মহল্লা বা পল্লী বেছে নেওয়া। সেখানে পাওয়ার মত যারা আছেন, তাদের তালিকা করে তাদের দেবেন। এক্ষেত্রে কোনো একটা গ্রামে দিতে গেলে সেই গ্রামে যদি ৫০ জন গরিব মানুষ থাকে, সেক্ষেত্রে যদি ৪০ জনকে দেওয়া হয়, বাকি দশ জন না পেয়ে তারাতো ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাই কোনো এলাকায় দিতে গেলে সে এলাকার সবাইকে দিয়ে আসতে হবে।কেউ যাতে বাদ না পড়েন। কোন এলাকায় কতজনকে দিতে যাচ্ছে বা দেওয়া হলো তা জেলা প্রশাসন বা প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে। তাহলে হবে কি, এক জায়গায় রিপিট হবে না। ঝুঁকিও কমবে।

খাদ্য দেওয়ার পর অনেকের মধ্যে সংবাদ মাধ্যমে প্রচারেরও প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে, দেওয়ার সময় ছবি তোলায় প্রতিযোগিতা করতেও দেখা গেছে।

এব্যাপারে আহাদ উদ্দিন হায়দার বলেন, আসলাম, ত্রাণ দিলাম, ছবি তুলে চলে গেলাম। এটা কোনো ভাবেই করা যাবে না।

অনেকেই বলছেন, করোনার এই পরিস্থিতিতে এ ধরনের মানসিকতা সুস্থতার পরিচয় দেয় না। নিজেকে জাহির করার চেয়ে এই সময় কাজটাই আসল, নিজেকে জাহির না করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আমাদের সুস্থ মানসিকতার পরিচয় দিতে হবে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন-বাড়িতে খাদ্য দেওয়ার আগে তাদের নিশ্চিত করে জানাতে হবে-যে আপনার বাড়িতেই থাকুন।আপনার খাদ্য সামগ্রী আপনার ঘরে পৌছে যাবে।

এক্ষেত্রে জেলা, উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে হটলাইন চালু করা যেতে পারে, আগামী ৭ দিনে, ৩ দিনের বা ৫ দিনের খাবার ঘরে থাকতে বা খাবার শেষ হওয়ার দুই দিন আগে ওই হটলাইনে অথবা সেখানকার দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে ফোন করে জানাবে–ঘরে দুই দিনের খাবার আছে। জানানোর পর দুই দিনের মধ্যে তার ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছার ব্যবস্থা করতে হবে।

তবে দুই একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সচেতন কেউ কেউ বাড়ি বাড়ি গিয়েই খাদ্য সামগ্রী দিয়ে আসছেন।

বাগেরহাট প্রতিনিধি আলী আকবর টুটুল জানান, বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আমিরুল আলম মিলন একা ভ্যানে করে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খাদ্য সামগ্রী গিয়ে আসতে শুরু করেছেন।

দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৭ জনের মৃত্যুর খরব নিশ্চিত করেছে আইইডিসিআর।


ঢাকা/সাওন/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়