ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

করোনায় পর্যটনে ক্ষতি সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫১, ৭ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনায় পর্যটনে ক্ষতি সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

মহামারি করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাবে পর‌্যটন শিল্পে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পর্যটন খাতকে টিকিয়ে রাখতে ১৬ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) ।

সোমবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক বরাবর পাঠানো চিঠিতে সংগঠনটির সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান এসব দাবিগুলা তুলে ধরেন।

চিঠিতে টোয়াব সভাপতি বলেছেন, করোনা ভাইরাসের কারনে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে আন্তর্জাতিক ও আভ্যন্তরীণ শতভাগ বুকিং বাতিল হয়েছে। মূলত গত জানুয়ারি থেকে এই অচলাবস্থা চলমান রয়েছে। ফলে জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্ট, হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, এয়ারলাইন্স, পর্যটক পরিবহন, ক্রুজিং ও গাইডিং সংশ্লিষ্ট প্রায় ৪০ লাখ পেশাজীবী।

দ্য ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের রেফারেন্স দিয়ে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বজুড়ে ৫ কোটি মানুষ কাজ হারানোর ঝুঁকিতে আছেন।  এ কারণে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে প্রায় ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।  এ অবস্থা আরও দীর্ঘস্থায়ী হলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। আর করোনাভাইরাস দুর্যোগ কেটে গেলেও এর ধকল সামলে উঠতে পর্যটন খাতের অন্তত ২ বছর লেগে যেতে পারে। পরিস্থিতির সঙ্গে এ অসম লড়াইয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও সুরক্ষা সহযোগিতা জরুরি।

মো. রাফেউজ্জামান চিঠিতে করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে টোয়াবের পক্ষ থেকে ‍সুপারিশসমূহ’ শিরোনামে পাঠানো চিঠিতে পর্যটন শিল্পকে বাঁচাতে ১৬ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

সুপারিশগুলো মধ্যে রয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে টোয়াবের সদস্যদের আপৎকালীন আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।

প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ-১ এর অন্তর্ভুক্ত ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হয়েছে। টোয়াব সদস্যদের উক্ত প্যাকেজের আওতায় ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মচারীর বেতন-ভাতা, অফিস ভাড়া, ইউটিলিটি বিল ও অন্যান্য লোকসান সমন্বয় এবং মূলধন সংকট নিরসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় পরবর্তী ২ বছরের জন্য সহজ শর্তে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী ঋণের দ্রুত ব্যবস্থা করা।

পর্যটনের এই কঠিন সময়ে আগামী তিন অর্থবছরের বাজেটে পর্যটন খাতের সুরক্ষা ও উন্নয়নে সরকার কর্তৃক যথেষ্ট বরাদ্দ রাখা। টোয়াবের সদস্যদের এআইটি এবং ট্রেড লাইসেন্স ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ফি, পজ মেশিন ট্রানজেকশন ফি ও ইউলিটি বিল, টোয়াবের সহযোগী সদস্যদের যাদের হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট আছে সেগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে আরোপিত ভ্যাট মওকুফ করা এবং যাদের চলমান ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত ও সুদ মওকুফ করা।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণের এবং বিদেশীদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে টোয়াব সদস্যদের মাধ্যমে ট্যুর প্যাকেজ পরিচালনা করা।

কক্সবাজার, সুন্দরবন, পার্বত্য চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গ, সিলেট, বরিশাল ও অন্যান্য অঞ্চলের পর্যটন-সংশ্লিষ্ট স্বল্প আয়ের পেশাজীবীদের (স্থানীয় ট্যুর অপারেটর, ট্যুর গাইড, কমিউনিটি পর্যটন পরিবার, মাঝি, চালক ইত্যাদি) জন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশের তত্ত্বাবধানে অবিলম্বে আপৎকালীন আর্থিক অনুদান নিশ্চিত করা।

টোয়াব মেম্বারদের মধ্যে কেউ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তাহলে তাদের পরিবারকে নূন্যতম ৩০-৫০ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করা।

করোনাভাইরাসের কারণে পিছিয়ে যাওয়া টোয়াবের বাৎসরিক মেলা সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য আগামী ৩ বছর মেলার নির্ধারিত বিআইসিসি ভেন্যু ভাড়া মওকুফ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।

বাংলাদেশের সকল আন্তর্জাতিক ও আভ্যন্তরীণ বিমান বন্দরগুলোতে ও অন্যান্য পর্যটন আকর্ষণ স্থানগুলোতে মিট এন্ড গ্রিট বা ইনফরমেশন বুথ স্থাপনে টোয়াবকে অনুমতি প্রদান করা এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।

অন অ্যারাইভাল ভিসার পাশাপাশি ই-ভিসা প্রবর্তন করা এবং অন অ্যারাইভাল ভিসা ও ই-ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে টোয়ার-সদস্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রত্যয়ন ও ভ্রমণসূচি বাধ্যতামূলক করা।

বাংলাদেশের পর্যটন-পণ্য উন্নয়ন ও প্রসারে ইউএনডব্লিউটিও, ইউএনডিপি, আইএলও, এডিবি, জাইকা, বিশ্বব্যাংক-সহ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছে অনুদান ও সহজ-ঋণ আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের পর্যটনের প্রচার, ব্র্যান্ডি ও বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন এবং এ কার্যক্রমে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও পর্যটন কর্পোরেশনের পাশাপাশি টোয়াবকে সম্পৃক্ত করা। এছাড়াও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কর্তৃক সকল প্রকার অনুষ্ঠান আয়োজনে টোয়াবকে সম্পৃক্ত করা।

টোয়াবের সহযোগী সদস্যদের যাদের হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট আছে সেগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট ক্রয়ে ট্যাক্স ফ্রি সুযোগ প্রদান করা।

স্থানীয় ট্যুর অপারেটররা যেন উপকৃত হন, সে জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে পরবর্তী এক বছরের জন্য বিদেশি অনলাইন বুকিং ইঞ্জিন ও পর্যটন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ও লেনদেন প্রক্রিয়ায় ক্রেডিট ব্যবহার সীমিত করে টোয়াব সদস্যদের মাধ্যমে সেবা গ্রহণে নিশ্চিত করা।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে টোয়াবের সদস্যদের জন্য পজ মেশিন ও ইএমআই সুবিধা প্রণয়নের ব্যবস্থা করা।
‘ট্রাভেল উইথ ট্যুর অপারেটর’ শীর্ষক সামাজিক প্রচার কর্মসূচি পরিচালনা করা, যেখানে বার্তা থাকবে যে সর্বোচ্চ সেবার জন্য টোয়াব সদস্যদের প্রাধান্য দেয়া।


ঢাকা/এম এ রহমান/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়