ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

স্কুলের জন্য মন কাঁদে শাকিবের

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৫৮, ৮ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্কুলের জন্য মন কাঁদে শাকিবের

ছোট্ট দুটি পায়ে, লম্বা ফ্লাক্স হাতে অবিরত হেঁটে চলেছে শাকিব। করোনাভাইরাসের ছোবলে এলোমেলো ঢাকার পরিবেশ। মানুষের কোলাহল নেই কোথাও। যা দু-একজন মানুষ আছে, তাদের চায়ের তৃষ্ণা যেন কমে গেছে।

পুরো ফ্লাক্স চা বিক্রি করতে না পারলে ঋণ আর সংসারের বোঝা ভারি হবে, সেই চিন্তায় অস্থির শাকিব। চৈত্রের খরতাপে তপ্ত দুপুরেও দ্রুত হাঁটছে সে। তার আশা, সন্ধ্যার আগেই ফ্লাক্সের চা শেষ করতে পারবে।

১২ বছর বয়সে বাবার অসুস্থতার কারণে সংসারের বোঝা শাকিবের কাঁধে। মায়ের কান্না আর বাবার শারীরিক যন্ত্রণা তাকে কষ্ট দেয়। তাই বই, খাতা গুটিয়ে রেখে নেমে পড়েছে সংসারের চাকা ঘুরাতে। তুল তুলে হাতে এই বোঝা বইতে তারও যে বড্ড কষ্ট হচ্ছে। সেই কথায় ফুটে ওঠে এই কিশোরের চোখে-মুখে। তার বড্ড স্বাদ জাগে, স্কুলে যেতে। আগের মতো হই-হুল্লোড় করে সহপাঠীদের সঙ্গে খেলতে। ২০ হাজার টাকা জোগাড় হলেই সে আবার ফিরে যাবে প্রিয় স্কুলে। শাকিবের এই ইচ্ছে কি পূরণ হবে? তার খুব মনে পড়ে স্কুলের কথা।

রাজধানী যাত্রাবাড়ীর কাজলায় শনিবার (৪ এপ্রিল ) দুপুরে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় শাকিবের। শাকিব করোনাকরোনাভাইরাস থেকে রক্ষায় মাস্ক পড়লেও সে জানে না এ রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে। সংসারের প্রয়োজনে ফ্লাক্স হাতে ছুটছে অলিতে-গলিতে। যাকে দেখছে, বলছে- মামা চা খাবেন। আবার দু’-একজন ডেকে নিয়ে চা খাচ্ছেন।

কথায় কথায় শাকিব জানায়, তাদের বাড়ি হবিগঞ্জে। তিন ভাই আর এক বোনের মধ্যে শাকিব মেঝ। তার ছোট ভাই দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। আর বড় ভাই তার মতো চা বিক্রি করে। সবার ছোট বোন। বাবা অসুস্থ, তাই কাজ করতে পারে না।

বাবার অসুস্থতার বিষয়ে শাকিব বলে, গ্রামে নৌকা বাইচের সময় বছর দুয়েক আগে নৌকা থেকে পড়ে যায় বাবা। সেই যে অসুস্থ হয়েছে, এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেনি। ভারি কাজ করতে পারে না। বাবার চিকিৎসা করতে গিয়ে লাখ খানেক টাকা ঋণ হয়েছে। সেই ঋণের টাকা শোধ করতে ঢাকায় এসেছে।

শাকিব জানায়, সে মাসে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় করে। আর বড় ভাই করে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। বড় ভাইয়ের টাকা দিয়ে বাসা ভাড়া দেয়। আর তার টাকা দিয়ে সংসার খরচ চলে। ছোট ভাইয়ের পড়ালেখার জন্য মাসে এক হাজার টাকা লাগে।

শাকিবরা দুই ভাই একসঙ্গে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তো। তার রোল ছিল ১৩ আর ভাইয়ের ১৪। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় আর লেখাপড়া হয়নি। দুই ভাই চা বিক্রি করে ৮০ হাজার টাকা ঋণ শোধ করেছে। আর ২০ হাজার বাকি আছে। এই  টাকা শোধ দিতে পারলে আবার গ্রামে ফিরে যাবে। আবার পড়াশোনা শুরু করবে তারা। এ কথা বলার সময় শাকিবের চোখে-মুখে ছিল উচ্ছ্বাস।

 

ঢাকা/মামুন খান/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়