ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘রিকশা না চালালে খামু কী, মহাজনের টাকা দিমু ক্যামনে?’

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৯, ৮ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘রিকশা না চালালে খামু কী, মহাজনের টাকা দিমু ক্যামনে?’

করোনাভাইরাস কেড়ে নিয়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন-জীবিকা। এই ভাইরাস মোকাবেলায় অঘোষিত লকডাউনে অবস্থা ভাল নেই রাজধানীর ঢাকার রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা চালকদের। ফাঁকা ঢাকায় চালকদের আয় একেবারে কমে গেছে। কোন মতে ডাল-ভাত খেয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। যদিও বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে অনেক রিকশা-সিএনজির মহাজনরা  জমার টাকা কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন। তারপরও প্রতিদিনের খরচের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে  না পেরে অনেকে গ্যারেজে গাড়ি জমা রেখে চলে গেছেন গ্রামের বাড়িতে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রিকশা-সিএনজি চালকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। 

রাজধানীর ওয়ারী,গুলিস্থান,শাখারী বাজার অঞ্চলে ইঞ্জিন চালিত রিক্সা চালান জসিম।   

কথা হয় জসিমের সঙ্গে। হতাশার সুরে জসিম বলেন, ‘ইনকাম আর আগের মত নেই।   আগে আধাবেলা গাড়ি চালালে ভাড়া মজাহনের টাকা বাদেই ৫০০/৬০০ টাকা থাকতো। এখন পুরো বেলা গাড়ি চালালে ৪০০/৫০০ টাকা ইনকাম হয়।মালিককে দিয়ে নিজের ২০০/৩০০ টাকা থাকে। কোন রকম ডাইল ভাত খাইয়া আছি। মহাজন আগে ৩০০ টাকা জমা নিতো। এখন একশ টাকা কমায়ে ‍দিছে। এখন ২০০ টাকা নেয়। রিকশা না চালালে খামু কী, মহাজনের টাকাই দিমু ক্যামনে।’

মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে জসিম বলেন,এটা সবাই ব্যবহার করতাছে, আমরা এডা ছাড়া যদি রোডে বের হই তাইলে আমাগো পুলিশ মারধর করে। আর শুনছি ভাইরাস যে ছড়াইছে, এডা ভাইরাস আটকায়া রাহে। এ কারণে মাস্কটা ব্যবহার করতে হয়।’

মো. নবী হোসেন। যাত্রাবাড়ি এলাকায় সাধারণ রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। সাধারণ রিকশা নিলে মহাজনকে দিন শেষে জমা দিতে ১০০/১২০ টাকা। আধাবেলা চালালে দিতে হয় ৭০ টাকা।

নবী হোসেন বলেন, আগে হাফ বেলা চালালে ৭০০/৮০০ টাকা হতো। এখন সারাদিনে ৩০০ /৩৫০ টাকা ইনকাম হয়।  তারপরও পুলিশে গাড়ি চালাতে দেয় না। পুলিশ গাড়ির হাওয়া ছেড়ে দেয়। কয় গাড়ি চালানো নিষেধ আছে। এ অবস্থায় অনেক রিকশা চালক গাড়ি গ্যারেজে রেখে গ্রামে চলে গেছেন বলে জানান নবী হোসেন।

মুগদা-বাসাবো এলাকায় ইঞ্জিন চালিত রিকশা চালান আনোয়ার হোসেন। দিন শেষে মহাজনকে ৩০০ টাকা জমা দিতে হতো। বর্তমান অবস্থায় মহাজন জমার ১০০ টাকা কমিয়ে দিয়েছে। আনোয়ার বলেন,গত দুই  দিন ইনকাম   একেবারেই কম হয়েছে। তবে আজ দুপুর ১২ টা পর্যন্ত গাড়ি চালিয়ে ৬০০ টাকা ইনকাম করেছি। বাসায় মা আছে,ওয়াইফ আছে,আমার একটা বাচ্চা আছে।

গুলিস্থানে কথা হয় সিএনজি চালক রওশন শেখের সঙ্গে। তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর। রওশন শেখ বলেন, এখন তো গাড়ি চালাতে দেয় না। আজ নয় দিন পরে বের হইছি। বাসায় চাউল নাই,খাবার নাই। তাও পুলিশে ধরে আটকাইয়া রাখে। আগে তো মহাজনকে ৯০০ টাকা জমা দিয়েও ১০০০/১২০০ টাকা নিজের থাকতো। আজকে এখন পর্যন্ত দুই এক ট্রিপ মারছি ৫৫০ টাকা। সারাদিন যে আর কত ইনকাম হবে আল্লাই জানে।

তবে মহাজন এখন জমার পরিমাণ ২০০ টাকা কমিয়ে দিয়েছে বলে জানান রওশন শেখ। গ্যারেজ থেকে গাড়ি নিয়ে বের না হলে মহাজনকে টাকা দিতে হয় না বলেও জানান তিনি।


ঢাকা/মেহেদী/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়