ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

টিসিবির পণ্য বিক্রি: মানছে না সামাজিক দূরত্ব, বাড়ছে করোনা ঝুঁকি

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৬, ৯ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
টিসিবির পণ্য বিক্রি: মানছে না সামাজিক দূরত্ব, বাড়ছে করোনা ঝুঁকি

নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে সঙ্গে মধ্যবিত্তরা কিনছেন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর পণ্য। এর ফলে ভিড়ও বাড়ছে টিসিবির ট্রাকের সামনে। এতে লঙ্ঘিত হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি। বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি। টিসিবির দাবি—সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে যথেষ্ট উদ্যোগ নিলেও ক্রেতারা মানছেন না। আর ক্রেতার বলছেন, সময় স্বল্পতার কারণে তারা ভিড় করতে বাধ্য হচ্ছেন।

সোমবার (৬ এপ্রিল) থেকে বুধবার পর্যন্ত ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, রায় সাহেব বাজার মোড়, যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর, টিকাটুলি মোড়  এলাকায় টিসিবির ট্রাকের সামনে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। কার আগে কে কিনবেন, সেই প্রতিযোগিতায়ও দেখা গেছে অনেককে।

এ সময় সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা ক্রেতাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে লাইনে দাঁড় করিয়ে দেন। কিন্তু তারা চলে যাওয়ার পর আবারও ক্রেতারা বিশৃঙ্খলা শুরু করেন। এ সময় টিসিবির পণ্যবিক্রেতারা ক্রেতাদের লাইনে দাঁড়াতে বললেও তারা কর্ণপাত করেন না।   

মঙ্গলবার টিকাটুলির মোড়ে টিসিবির পণ্য কিনতে এসেছেন ফারজানা আলম (ছদ্মনাম)। দীর্ঘক্ষণ  লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা এই ক্রেতা বলেন, ‘আমার স্বামী চট্টগ্রাম থেকে আসতে পারছেন না। হাতে টাকা-পয়সাও তেমন নেই। তাই এখান থেকে কম দামে পণ্য কিনতে এসেছি। হাতে সময়ও কম। সবই বুঝি। বাচ্চা বাসায় রেখে আসার কারণে তাড়াহুড়া করছি। আমার মতো অনেকেই তাড়াহুড়ো করছেন। তাই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। আর এ কারণেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না।’

মঙ্গলবার রায় সাহেব বাজার মোড়ে শাহ আলম নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘দীর্ঘ লাইন দেখে পণ্য পাবেন কি না, সেই আশঙ্কা থেকেই অনেকে সামনে এগিয়ে যেতে চান। এতে যেমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, তেমনি সামাজিক দূরত্বও বজায় থাকে না। তবে নিজেদের জন্য হলেও সবাইকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা উচিত।’   

এ প্রসঙ্গে আসিফ উদ্দিন নামে এক ডিলার বলেন, ‘আমরা ক্রেতাদের বারবার সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতে অনুরোধ করি। এজন্য লোকও নিয়োগ দিয়েছি। তারপরও তারা মানছেন না। দেখুন সেনাবাহিনী ও পুলিশও তাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতে অনুরোধ করছে। তবু তারা শুনছেন না। সবাইকে তো বিপদের কথা মনে রাখতে হবে।’

এ সম্পর্কে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধের যে কয়েকটি ধাপ রয়েছে, তার অন্যতম হলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। এক গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে ৬০ ভাগেরও বেশি  রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। করোনা একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষে সর্বনিম্ন ৩ ফুট, সর্বোচ্চ ৬ ফুট পর্যন্ত দূরত্বে ছড়াতে পারে। তাই মানুষে-মানুষে নিরাপদ দূরত্ব  বজায় রাখা জরুরি।’

লেলিন চৌধুরী আরও বলেন, ‘ভিড়ের কারণে বাজারে যেবাবে সামাজিক দূরত্ব লঙ্ঘিত হয়, তাতে যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। শুধু বাজার নয় জনসমাগম যেকোনো স্থানেই বিপর্যয় ঘটতে পারে।’

সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে পণ্য কেনা প্রসঙ্গে টিসিবির ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘করোনার কারণে পণ্যবিক্রির ক্ষেত্রে ডিলারদের ভালোভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ক্রেতাদের ৩ ফুট দূরত্ব রক্ষা করে লাইনে দাঁড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছি। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিতেও বলা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক নির্দেশনা দেওয়া আছে। এরপরও যদি ক্রেতারা নিয়ম না মানেন, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট স্থানে টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধের কথাও বলা হয়েছে।’

এ ব্যাপারে পুলিশের এআইজি (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘পুলিশ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা  সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে। জনগণের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এককভাবে বা দলবদ্ধভাবে বাইরে ঘোরাফেরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে পুলিশ কাজ করছে বলেও তিনি জানান।



ঢাকা/মামুন খান/এনই

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়