করোনার বিরুদ্ধে পুলিশের লড়াই, বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে সরকারি সাধারণ ছুটি চলছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বেরও হচ্ছেন না। তবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ববোধ থেকে ব্যতিক্রম পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। প্রথম থেকেই বিদেশ ফেরত সন্দেহভাজন করোনা আক্রান্ত রোগী খোঁজা, মানুষকে সচেতন করা, বাসায় খাবার পৌঁছে দেওয়াসহ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মারা যাওয়াদের দাফন পর্যন্ত করছে পুলিশ সদস্যরা।
দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়। তবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতি জেলায় এর আগে থেকেই করোনার উপসর্গ থাকতে পারে, বিদেশ ফেরত এমন ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুঁজতে হয়েছে পুলিশ সদস্যদের। ভাইরাসটি থেকে মানুষকে রক্ষা করতে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড প্রতিদিনই করতে হচ্ছে। একের পর এক রোগীও শনাক্ত হচ্ছে। পুলিশ ভাইরাসের প্রার্দুভাব রোধে মানুষকে ঘরে রাখার জন্য দিনরাত প্রধান সড়ক, বাড়ি-বাড়ি, পাড়া-মহল্লায় কাজ করে চলেছেন। এছাড়া রাস্তায় জীবনুনাশক ছেটানো, অসহায় মানুষকে খাবার সরবরাহ সব কিছুই তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করে যাচ্ছেন। সর্বোপরি করোনা আক্রান্ত কোনো রোগী মারা গেলে তার কাছে স্বজনরা জানাজা কিংবা দাফনে না আসলেও পুলিশ সম্মুখভাগে থাকছে। আর এসব কাজ করতে গিয়ে অসাবধনতাবশত কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন।
খিলগাঁও থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এভাবে কাজ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত আমাদের করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। আবার আমাদের ওপর রাষ্ট্রের দায়িত্বও আছে। যেটি জনগণের জন্য করে যাওয়া। এ কাজ করতে গিয়ে ঝুঁকি জেনেও অনেক সময় আমার মতো অনেকেই পরিবারের কথা চিন্তা করে বাসায়ও যান না।
তিনি বলেন, আমাদের কাজটি জনগণের সঙ্গে। তারপরও আবার করোনার কারণে জনগণের সঙ্গে আরও বেশি মিশে যেতে হচ্ছে। এ কারণে অনেক সময় অনেক কিছুই মানাও যাচ্ছে না। তবে আমরা এ প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাবো।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, শুধু করোনা যুদ্ধে নয়, অতীতে এ রকম অনেক দুর্যোগ পুলিশ মোকাবিলা করেছে সফলতার সঙ্গে। এবারও তারা অত্যন্ত সচেতনভাবে করছে। করোনাভাইরাস ভয়ঙ্কর, তা জেনেও তারা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন বীরের মতো। তবে তারা যেন আক্রান্ত না হন সে জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রতিরোধক দেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে।
সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে উল্লেখ করে মহানগর পুলিশের এ অভিভাবক আরও বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যেসব বিধি-নিষেধ দিয়েছে সেগুলো মেনে পেশাগত কাজ করতে হবে। কোনো পুলিশ সদস্যের শরীরে এ রোগের সন্দেহ দেখা দিলে তা সঙ্গে-সঙ্গে পরীক্ষা করাতে হবে।
এদিকে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে রাজারবাগ পুলিশের কেন্দ্রীয় হাসপাতাল, মিরপুর, গেন্ডারিয়া পুলিশ ব্যারাকসহ বেসরকারি হাসপাতালগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব হাসপাতালে আক্রান্ত ৫৫ জন পুলিশ সদস্য সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরেছেন। পাশাপাশি মারা যাওয়া কিংবা আক্রান্ত পরিবারগুলোকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের শীর্ষ কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
শনিবার (২ মে) দুপুরে হেডকোয়ার্টার্স থেকে জানানো হয়, এ পর্যন্ত সারাদেশে ৭৪১ জন পুলিশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩৫৬ জন রয়েছেন।
ঢাকা/মাকসুদ/এসএম
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন