ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্রউদ্যোক্তাদের পুনঃঋণ দেবে সরকার

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪০, ২৩ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্রউদ্যোক্তাদের পুনঃঋণ দেবে সরকার

দেশের গ্রামাঞ্চলে বসবাসরত দুঃস্থ, অসহায়, অবহেলিত, অনগ্রসর ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষে পরিচালিত হচ্ছে পল্লি সমাজসেবা (আরএসএস)। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত এটি বাংলাদেশে সর্বপ্রথম সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম। করোনাভাইরাসের কারণে সুদমুক্ত ঋণগ্রহীতাদের থেকে ঋণ আদায় স্থগিত করা হয়েছে।পাশাপাশি ক্ষুদ্র আকারের ব্যবসা পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত ঋণ (পুনঃঋণ) দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাজ্জাদুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের সুদমুক্ত ঋণগ্রহীতাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় তাদের চলতি ঋণ আদায় স্থগিত রেখে অর্থ বরাদ্দপ্রাপ্তি সাপেক্ষে অতিরিক্ত ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে অধিদপ্তর। এ বিষয়ে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক হাজার কোটি টাকার চাহিদাপত্র পাঠানো হয়।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেছে এতে। বর্তমানে অর্থছাড়ের আবেদনটি অর্থ বিভাগে রয়েছে। আমরা আশা করছি ঈদের পরপরই মহতী এ উদ্যোগের জন্য অর্থ ছাড় পাওয়া যাবে।

অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বর্তমানে সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণগ্রহীতার সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ ৮৩ হাজার। পরিবার প্রতি সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষুদ্রঋণ নিতে পারেন। করোনা পরিস্থিতির আগে পর্যন্ত (মার্চ) সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ আদায়ের হার ছিল গড়ে ৯০ শতাংশ।

অধিদপ্তর মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, দেশের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দিকনির্দেশনায় সমাজসেবা অধিদপ্তর ১৯৭৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে এ ‘পল্লি সমাজসেবা কার্যক্রম’ শুরু করে। কার্যক্রমটি বাংলাদেশ ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের সুতিকাগার এবং পথিকৃৎ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এ কর্মসূচি বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক মুক্তির ক্ষেত্রে এক নতুন ও যুগান্তকারী ইতিহাস সূচনা করে। করোনার কারণে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে আমরা উপকারভোগীদের চাপে না ফেলে বরং আরও সহযোগিতা করার উদ্যোগ নিয়েছি। অর্থবরাদ্দ পাওয়া গেলে নিয়মিত কার্যক্রমের সঙ্গে এটি সমন্বয় করা হবে।

জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে তৎকালীন ১৯টি থানায় ‘পল্লি সমাজসেবা কার্যক্রম’যাত্রা শুরু করে। ১৯৭৭ সালে আরও ২১টি থানায় এ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে সম্প্রসারিত পল্লি সমাজসেবা কার্যক্রম ২য় পর্বে (১৯৮০-৮৭) ১০৩টি উপজেলায়, ৩য় পর্বে (১৯৮৭-৯২) ১২০টি, ৪র্থ পর্বে (১৯৯২-৯৫) ৮১টি, ৫ম পর্বে (১৯৯৫-২০০২) ১১৯টি, ৬ষ্ঠ পর্বে (২০০৪-০৭) ৪৭০টি উপজেলায় এবং বর্তমানে দেশের সব উপজেলায় এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

এ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য পল্লি অঞ্চলে বসবাসরত ভূমিহীন, দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসরত জনগোষ্ঠির মধ্যে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিও আয়বর্ধক কর্মসূচিতে তাদের সম্পৃক্ত করে দেশের সার্বিক উন্নয়নে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এ কার্যক্রমে সর্বমোট প্রাপ্ত বরাদ্দের পরিমাণ ৪৭৯ কোটি ৯৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ হিসেবে বরাদ্দ ৪৭৬ কোটি ৪৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং ক্ষুদ্রঋণ হিসেবে বিনিয়োগকরা মূল অর্থের পরিমাণ ৪৫৪ কোটি ৯০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে ‘পল্লি সমাজসেবা (আরএসএস) কার্যক্রম’ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ম ও ২য় কিস্তি বাবদ সাড়ে ১২ কোটি টাকার বিভাজন মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।


ঢাকা/হাসান/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়