ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আমাদের কি ঈদ নাই, স্যার?

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৫ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
আমাদের কি ঈদ নাই, স্যার?

‘স্যার, কিছু সাহায্য করেন। ঠিকমত চলতে-ফিরতে পারি না। ঈদের সময় বাসায় বাসায় যেতেও পারি না। তাই একটু সাহায্য করেন। পঙ্গুত্বের কারণেই আমরা ভিক্ষা করছি। কিন্তু করোনায় দুই মাস ধরে আয় রোজগার অনেক কম। বাসা ভাড়া দিয়ে তিনবেলা খাওয়ার টাকা থাকে না। কিছু সাহায্য করেন। আমাদের কি ঈদ নাই, স্যার। করোনায় আমাদের মতো অচল মানুষেরা বেশি আসহায়।’

এভাবেই নিজেদের আসহায়ত্বের কথা এভাবেই বলছিলেন প্রতিবন্ধী জাহাঙ্গীর বাবু ও পঙ্গু গোলাপ মিয়া।

জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী জাহাঙ্গীর বাবু রাজধানীর নন্দিপাড়ায় বসবাস করেন। তাই ভিক্ষা করে যা রোজগার হয়, তা দিয়েই চলে সংসার। তার পরিবারে মা-সহ আরও ছোট দুই ভাই রয়েছে। তারা দু’জন স্কুলে পড়ে। বড় ভাই হিসেবে জাহাঙ্গীরের সংসার চালানো দায়িত্ব রয়েছে। পাশাপাশি ছোট দুই ভাইয়ের লেখা-পড়ার খরচও যোগাতে হয়। এর সবই জোগাড় হয় ভিক্ষার টাকা থেকেই। তবে তার মা চারটি বাসায় কাজ করেন। ফলে জাহাঙ্গীর ও তার মায়ের রোজগার দিয়ে টানা পোড়েনের মধ্যে দিয়ে চলে সংসার।

তবে গত দুই মাস ধরে করোনাভাইরাসের প্রভাবে তাদের পরিবারে আয় রোজগারে ভাটা পড়েছে। বাকি পড়েছে বাড়ি ভাড়াও। জাহাঙ্গীর ভিক্ষা করলেও তার মা করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ফলে দিন এনে দিন খাওয়া এ পরিবারটির অর্থ সংকটে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে তার পরিবারের তিনবেলা খাবার জুটানো কষ্টসাধ্য। ফলে অর্থ কষ্টে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তার মাও হাতপাততে রাস্তায় নেমেছেন। এখন পর্যন্ত দু’এক বিত্তবানরা এগিয়ে এলেও সরকারি কোনো সহায়তা পাননি এ অসহায় পরিবারটি।

এদিকে পঙ্গুত্বের কারণে ভিক্ষা করেন গোলাপ মিয়া। তিনি পাশের এলাকা ত্রিমোহনীতে বসবাস করেন। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে পঙ্গুত্বের শিকার গোলাপ মিয়া। তার পরিবারেও স্ত্রী ও দুই ছেলেসহ চারজন সদস্য। তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্যনক্ষম। ভিক্ষবৃত্তির টাকায় চলে তার পুরো পরিবার। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এখন সংসারে সদস্যদের তিনবেলা খাবার জুটানো তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। বাড়ি ভাড়ার জন্য প্রতিদিন বাসার মালিক চাপ দেয়। তাই নিজের পঙ্গুত্ব ও অসহায়ত্বের কথা বলে ঈদে বাড়তি রোজগারের চেষ্টা করছেন। তবে পঙ্গুত্বের কারণে বাসায় বাসায় গিয়ে সাহায্য চাইতে না পারায় অন্যান্য ভিখারিদের তুলনায় জাহাঙ্গীরের মতো তারও আয়-রোজগার কম। 

জাহাঙ্গীর বাবু রাইজিংবিডিকে বলেন, গরিবদের কেউ সাহায্য করতে চায় না। আমি তো ইচ্ছা করে সাহায্য চাইছি না। আমি তো প্রতিবন্ধী। ভিক্ষা করে কোনো মতে চলি। কিন্তু করোনার প্রভাবে মানুষজন তেমন বাজারে আসে না। তাই সাহায্য সহযোগিতা তেমন পাওয়া পাই না। অন্য ভিখারিরা বিভিন্ন বাসা বাড়িতে গিয়ে চেয়েচিন্তে কিছু পায়। আমি তো কোথাও যেত পারি না। করোনার মধ্যে আমার মতো ভিখারিরা বেশ অসহায়। আয় রোজগার না থাকায় পরিবার নিয়ে খেয়ে পড়ে চলা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। সরকার যদি আমাদের সহায়তার জন্য একটু এগিয়ে আসে তাহলে বাঁচতে পারতাম।

গোলাপ মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, করোনার মধ্যে দুইজন পাঁচ কেজি চাল কিনে দিয়েছে। আর কারো কাছ থেকে তেমন কোনো সহায়তা পাইনি। ভিক্ষা করে যা পাই তা দিয়ে চলছি। কোনো কোনো দিন বাসার খাবর কিছুই থাকে না। আমাদের মতো অসহায়দের যদি কেউ সাহায্য না করে তাহলে আমরা কীভাবে বাঁচব।


ঢাকা/এনটি/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়