ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

ঢাকার অভিবাসীদের নিরানন্দের ঈদ

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ২৫ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
ঢাকার অভিবাসীদের নিরানন্দের ঈদ

ছবি: শাহীন ভূইয়া

করোনাভাইরাসের ছোবলে এবার দেশে অনেকটা নিরানন্দে ঈদ উদযাপন হচ্ছে। কিন্তু খোদ রাজধানীতেই কিছু মানুষ আছে যাদের দিন-রাত কাটে নিরানন্দেই। পথের ধারে তাদের সংসার-জীবন। করোনায় দেশবাসী ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ঘরে থাকলেও, এদের ঈদও কাটছে পথে। তারা রাজধানীতে আশ্রয় নিতে গ্রাম থেকে ছুটে আসা ভাগ্যবিড়ম্বিত অভিবাসী।

দৈনিক আয়ের যে কোনো ধরনের কাজ করে এদের দিন কাটতো। কিন্তু করোনার কারণে প্রায় তিনমাস উপার্জন বন্ধ। এমনকি প্রতিবছর পুরো রমজান মাস এবং ঈদের দিনে তারা সাহায্য পেতো। এ দিনে ঈদগাহের বাইরে সাহায্য চাইতে বসতো। কিন্তু এবার সব হিসাব-নিকাশ এলোমেলো হয়ে গেছে করোনার আঘাতে। ঈদের দিনেও স্বাভাবিক সময়ের মতো কোলাহল নেই রাজধানীর রাজপথে। সাহায্য চাইবে- সেই লোকই যেন নেই পথে। ফলে পথের মানুষের ভাগ্যে জুটছে না কিছু।

ঈদের দিন সকালে দলবেঁধে ঢাকার বিভিন্ন স্পটে এ ধরনের লোকজনকে বসে থাকতে দেখা গেছে। এর মধ্যে ধানমণ্ডি, কমলাপুর, তোপখানা রোড প্রভৃতি এলাকায় অসংখ্য ভাসমান মানুষকে বসে থাকতে দেখা গেছে।   

করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর রাহেলা বেগম আশায় বুক বেঁধেছিলেন রমজান মাসকে ঘিরে। কিন্তু খুব প্রয়োজনে মানুষ বাইরে এসে নিজের কাজ মিটিয়ে আবার ঘরে ফিরেছেন। অথচ নদী ভাঙনে সব হারিয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে রাজধানীতে এসে রাহেলা রাস্তার ধারে আশ্রয় নেয়। এখনো এখানেই তার বসবাস। পুরো রমজানে কেউ আসেনি সাহায্য নিয়ে।

রাহেলা বেগমের বয়স ৬০ ছুঁইছুঁই। আগারগাঁও বাংলাদেশ বেতারের কার্যালয়ের সামনের পথের ধারে তিনি অস্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তবে ঝড়-বৃষ্টি এলে আশ্রয় নেওয়ার স্থানের ঠিক থাকে না। রাহেলা বেগমের মতো এ এলাকায় আরও অনেকের বাস। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখানে বিএনপি বাজার বলে পরিচিত চলচ্চিত্র আর্কাইভ ভবনের উল্টো পাশে ফুটপাতে থাকেন।

রাজধানীতে ভাসমান মানুষদের একটি বড় অংশের বসবাস কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায়। এ এলাকার তেমনি একটি পরিবার টোকাইয়ের কাজ করা করিম মিয়ার। গাইবান্ধা এলাকা থেকে তিনি ভাগ্যান্বেষে ঢাকায় এসেছিলেন। প্রথমে ভাড়ায় রিকশা চালালেও শারীরিক সক্ষমতা হারানোর পর উপার্জন বন্ধ হয়ে এখন পথের ধারে আবাস গড়েছেন। করিম মিয়া বলেন, 'আমরার ঈদ করন লাগে না।'

গতবছরও দান খয়রাতের টাকা নিয়ে বাচ্চাদের জন্য জামা, চুড়ি কিনেছিলেন। কিন্তু এবার সব অধরাই থেকে গেছে করোনা আর লকডাউের কারণে।

নগরবিদদের মতে, ঢাকা একটি অভিবাসীদের শহর৷ সরকারি তথ্য মতে, প্রায় ১১ লাখ লোক পথের ধারে, টার্মিনালে, টং বেঁধে বসবাস করেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই৷ তারা বাস্তুচ্যুত হয়ে এ শহরে বসবাস করছেন৷ সরকার বিভিন্ন সময়ে এদের ভাগ্য উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিলেও ভাগ্যাহত মানুষগুলোর সুদিন ফিরে না।


ঢাকা/হাসান/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়