যেসব উদ্দেশ্যে রিজেন্টকে করোনা হাসপাতাল করার প্রস্তাব দেন সাহেদ
গ্রেপ্তারের পর র্যাবের সঙ্গে মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম (ফাইল ছবি)
নিজের মালিকাধীন রিজেন্ট হাসাপাতালকে করোনা ‘বিশেষায়িত হাসপাতালে’ পরিণত করার পেছনে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের বেশি কিছু উদ্দেশ্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—হাসপাতালকে ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করা ও করোনাকালে নিজেকে হিরো প্রমাণ করে অপকর্ম চাপা দেওয়া। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সদ্য পদত্যাগী মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদসহ ঊর্ধ্বতনদের সই করা বিশেষ নোটে দেখা গেছে, রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট দুই শাখার নবায়নহীন লাইসেন্সের কথাও উল্লেখ ছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে এমওইউ (মোমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং) করার আগে লাইসেন্স নবায়নের কথা দিয়েছিলেন সাহেদ।
এমওইউ স্বাক্ষরের আগে ১৯ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সই করা দুটি বিশেষ নোট দেওয়া হয়েছে।
নোট-১-এ বলা হয়েছে, করোনা মোকাবিলার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে জরুরি ভিত্তিতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন হাসপাতাল প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়েছে। এরমধ্যে রিজেন্ট হাসপাতাল একটি। এ কারণে স্বাস্থ্য বিভাগের মৌখিক নির্দেশনার রিজেন্ট হাসপাতাল পরিদর্শন করে বিশেষ টিম। পরিদর্শনের সময় দেখা যায়, রিজেন্ট হাসাপাতালের মিরপুর শাখা ২০১৭ সাল থেকে এবং উত্তরা শাখা ২০১৪ সাল থেকে লাইসেন্স নবায়ন করেনি।
নোট-২-এ বলা হয়েছে, বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় লাইসেন্স নবায়নের নির্দেশ দেওয়াসহ করোনা হাসপাতাল হিসেবে চালু করার জন্য একটি এমওইউ স্বাক্ষর করা যেতে পারে।
এরপর, ২১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ ও রিজেন্ট হাসাপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের স্বাক্ষরে এমওইউ সই হয়। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তৎকালীন সচিব আসাদুল ইসলামসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে দুদক সচিব দিলোয়ার বখত বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও রিজেন্টের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎসহ অবৈধভাবে সম্পদের অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে। রিজেন্টের ঘটনায় বেশকিছু কাগজপত্রও জব্দ করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে যার যা দায়িত্ব, সেই বিষয়ে অনুসন্ধান কবে করা হবে। পরবর্তী সময়ে সেই অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, গত ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা শাখায় অভিযান চালায় র্যাব। এর আগেও নবায়ন না করেই চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে উত্তরা শাখায় এবং ২০১৮ সালে মিরপুর শাখায় অভিযান চালায় র্যাব।
র্যাবের অভিযানে বেরিয়ে আসে—করোনা পরীক্ষার সনদ জালিয়াতি, রোগীর কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে রিজেন্ট হাসপাতাল। এ ঘটনায় ৮ জুলাই হাসপাতালটি বন্ধ করার নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এর আগে, করোনা রোগীদের চিকিৎসার বিল বাবদ প্রায় ১ কোটি ৯৪ লাখ টাকার বিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জমা দেয় রিজেন্ট হাসপাতা। কিন্তু জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর বিল আর পাস হয়নি।
এমএরহমান/এনই
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন