ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বেড়েই চলেছে চালের দাম

তানজিমুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১১, ৪ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বেড়েই চলেছে চালের দাম

তানজিমুল হক, রাজশাহী : রাজশাহীর বাজারে বেড়েই চলেছে চালের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে এক থেকে দুই টাকা বেড়েছে।

আর পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি বেড়েছে এক থেকে দেড়শ টাকা। গত তিন মাস থেকে ধানের দাম কয়েক দফা বেড়েছে। আর এ কারণে বাজারে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এ পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকলে চালের দাম আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমন ধানের মৌসুমেই কেবল চালের বাজার স্থিতিশীল ছিল। সেসময় কৃষক সস্তায় ধান বিক্রি করেছেন। সর্বশেষ বোরো আবাদে নামার আগে সংরক্ষণে রাখা সব ধান বিক্রি করে দেয় কৃষক। এরপর বড় মিল মালিকরা নিয়ন্ত্রণ করেন ধানের মজুদ। এরপর থেকেই চালের বাজার অস্থির। বেড়ে চলেছে দাম।

নগরীর বিসিক এলাকার আসলাম রাইস মিলের মালিক আসলাম উদ্দিন জানান, বিসিক এলাকায় ১৫টি চাতাল রয়েছে। এর মধ্যে ধান সরবরাহ না থাকায় ১২টি চাতালই বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া কৃষকের কাছে ধান নেই। এর ফলে তারা ধান কিনতে পারছেন না। বড় ব্যবসায়ীরা ধান কিনে মজুদ করেছেন। তারাই ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। এর ফলে বাজারে চালের দাম বেড়েই চলেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহারাজনগর এলাকার ধান ব্যবসায়ী আবদুল মোমিন। তিনি বলেন, তিন মাস থেকে কৃষকের কাছ থেকে চাহিদা অনুযায়ী ধান পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে কৃষকের কাছে ধান নেই বললেই চলে। এর ফলে ধানের দাম বাড়ছেই।

তিনি বলেন, বিআর-২৮ চাল ৮৪ কেজির বস্তা পাইকারি বিক্রি করছেন ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। ৮৪ কেজি বস্তা চালের জন্য ধানের প্রয়োজন ১৪০ কেজি (সাড়ে তিন মণ)।  হিসাব করে দেখা গেছে, এক বস্তা চাল আড়তে বিক্রি করে ক্ষুদ্র মিল মালিকরা বা ধান ব্যবসায়ীরা তিন থেকে চারশ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ কারণে অধিকাংশ ধান ব্যবসায়ী বা চাতাল মালিক আড়তে চাল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন।  

নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকার চাল ব্যবসায়ী মেসার্স নিউ আদর্শ শস্য ভাণ্ডারের মালিক জসিম উদ্দিন মণ্ডল জানান, প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) বাসমতি চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকায়। তিনদিন আগেও প্রতিবস্তা চালের দাম ছিল ২০০ টাকা কম। বর্তমানে এ চাল পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৫৭ টাকা কেজি। আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দামে।

প্রতি বস্তা (৮৪ কেজি) স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। এ চাল পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা কেজি। আর বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। বাজারে এ চালের দামই সবচেয়ে কম। তবে এক সপ্তাহ আগেও স্বর্ণা কেজিপ্রতি দুই টাকা কম ৩৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া মিনিকেট (৮৪) কেজি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকা বস্তা। পাইকারি বিক্রি কেজিপ্রতি ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। কয়েকদিন আগেও মিনিকেট চাল ৪৮ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।

নগরীর কুমারপাড়া এলাকার পাইকারি চাল বিক্রেতা আহমেদ রাইস এজেন্সির ব্যবস্থাপক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমরা চালকল মালিকদের সরবরাহ করা চাল কমিশনে বিক্রি করি। বিভিন্ন এলাকা থেকে চালকল মালিকরা আমাদের চাল সরবরাহ করেন। ধানের দাম বাড়ার কারণে চালকল মালিকরা আমাদের কাছে বেশি দামে চাল সরবরাহ করছেন। এখন চালের বাজার চড়া।’ 

চালের দাম বাড়া প্রসঙ্গে কোনো সিন্ডিকেট কাজ করছে কি না- এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে রাজশাহী জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা শামিমুল ইসলাম বলেন, ‘সারাদেশেই চালের দাম বেড়েছে। তাই রাজশাহীতেও দাম বাড়া স্বাভাবিক। আমরা সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিং করছি। স্বাভাবিক দামেই বিক্রেতারা ক্রেতাদের কাছে চাল সরবরাহ করছেন। তবে মাসখানেক পর নতুন বোরো ধান উঠতে শুরু করবে। তখন কমে যাবে চালের দাম।’




রাইজিংবিডি/রাজশাহী/৪ এপ্রিল ২০১৬/তানজিমুল হক/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়