ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ইলিশের প্রত্যাশিত দাম না পেয়ে হতাশ মৎস্যজীবীরা

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৪, ১৪ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
ইলিশের প্রত্যাশিত দাম না পেয়ে হতাশ মৎস্যজীবীরা

মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে প্রায় ১৫দিন হতে চললো। কিন্তু এখনো আড়ৎগুলোতে মাছ বিক্রির সেই হাঁকডাক নেই। করোনাভাইরাসের কারণে বাজারগুলোতে তেমন ক্রেতা-বিক্রেতাও চোখে পড়ে না। চাহিদা কম হবে এবং ভালো দাম পাওয়া যাবে না-এমন ভাবনা থেকেই অনেক জেলে সাগরে যায়নি বলে সংশ্লষ্টদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে। তবে অনেক জেলে গভীর সমুদ্রে না গিয়ে বড় বড় নদীগুলোতে জাল-ট্রলার নিয়ে নেমেছেন। ধরাও পড়ছে রূপালি ইলিশ, সাইজটা এখনো ছোট বলে জানা গেছে।

মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, আড়তে যা মাছ আসছে তারও কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া যাচ্ছে না। করোনার অজুহাতে দাম কম দেওয়া হচ্ছে।

মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, বিগত বছরগুলোতে এ সময় তারা ইলিশ আহরণের জন্য নৌকা বা ছোট ট্রলার নিয়ে নদীতে নেমে পড়তেন।  কিন্তু এ বছর করোনা এবং রোজার কারণে ইলিশ ধরার আগ্রহে কিছুটা ভাটা পড়েছে। আগামী এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে পুরো দমে ইলিশ ধরতে নেমে পড়বেন। এখনো অনেকেই নিজেদের নৌযান এবং জাল মেরামত করছেন। তারা বলেছেন, ২০ রোজার পর থেকে ইলিশ ধরার কাজ পুরোদমে শুরু হবে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে এ বছর সমুদ্রে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার আশার কথা জানিয়েছেন রাইজিংবিডির কক্সবাজার প্রতিনিধি সুজাউদ্দিন রুবেল। তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে অঘোষিত লকডাউনের কারণে মাছের দাম পাচ্ছে না কক্সবাজারের জেলে ও মৎস্যজীবীরা। নানা বিধি-নিষেধ সত্ত্বেও গত এক মাসে সাগর থেকে মাছ আহরণ করা হয়েছে ১১শ মেট্রিক টনের বেশি। ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরার পরেও ক্রেতা সংকটের অজুহাতে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ফরিদ নামে একজন জেলে জানান, কক্সবাজার ফিশিং ঘাটে বড় আকারের ১০০ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২০ হাজার টাকা, মাঝারি আকারের ১২ হাজার ও ছোট আকারে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮ হাজার টাকায়।

জানা গেছে, গত একমাসে কক্সবাজারে সাড়ে ৫শ মেট্রিক টন ইলিশসহ অবতরণ হয়েছে ১১শ এক মেট্রিক সামুদ্রিক মাছ। যা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১১ লাখ টাকা।

চাঁদপুর প্রতিনিধি অমরেশ দত্ত জানান, চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনার অভয়াশ্রমে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জাটকাসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরে নদীতে মাছ ধরা শুরু হলেও বাজারে ইলিশের ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে হাহাকার দেখা গেছে।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির মো. সফিক জানান, নদীতে প্রচুর ইলিশ থাকলেও মাছ শিকারে যাচ্ছে না জেলেরা, তাই ঘাটেও আসছে না। কারণ বাজারে খুব একটা ক্রেতা আসে না। যেজন্য জেলেরাও হতাশায় থাকে, মাছ ধরে সঠিক দামে বিক্রি করতে পারবে কি-না। তার ওপর লকডাউনে প্রশাসনের অন্যান্য ব্যস্ততায় নদীর অভিযানে তেমন নজর দিতে পারেনি। এসময় প্রচুর জাটকা নিধন হওয়ায় ইলিশের দেখা মিলছে না। এখন যেসব মাছ পাওয়া যাচ্ছে তার বেশির ভাগই ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ।

ইলিশের দাম প্রসঙ্গে ঘাটের সিন্টু, রুবেল গাজীসহ বেশ কয়েকজন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা জানান, বড়স্টেশন আড়তে ১২শ গ্রামের দাম ১১শ টাকা, এক কেজি সাইজের ইলিশের দাম সাড়ে ৯শ টাকা। ৭শ থেকে ৮শ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৯শ টাকা, ৬শ গ্রাম ওজনের সাড়ে ৭শ টাকা এবং ৩শ থেকে ৫শ গ্রাম ওজনের ইলিশ সাড়ে ৪শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ১ কেজি থেকে সোয়া ১ কেজি ওজনের প্রতি মণ ইলিশ ৪০/৪২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের চিফ সাইন্টিফিক অফিসার ড. মো. আনিছুর রহমান জানান, চাঁদপুর অঞ্চলে ইলিশ আসার সময় এখনও আছে। ইলিশ কম ধরা পরলেও চাঁদপুর ঘাটে মাছের অভাব কিছুদিন পর হবে না। গত বছরে পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশের উৎপাদন হয়েছে। এবার তা ছাড়িয়ে ইলিশ উৎপাদন পাঁচ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নোয়াখালির হাতিয়ার মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. শাহরাজ জানান, আমাদের জেলেরা মেঘনা নদী, বঙ্গোপসাগরের উপকূলের বিভিন্ন জায়গায় মাছ ধরতে যায়। তবে ইলিশ ধরা এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি। একপন ইলিশের (৮০ পিসে একপন) দাম আকার ভেদে ৩০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

ভোলার ট্রলার মালিক নুর উদ্দিন মাঝি বলেন, করোনা ও রমজানের কারণে জেলেরা সমুদ্রে কম যাওয়া হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর খুব কম সংখ্যক ট্রলার মাছ ধরতে নদী বা সমুদ্রে গেছে। যারা সুমদ্রে যাচ্ছে তারা কিছুটা মাছ পাচ্ছেন, তবে সাইজ আশনুরূপ নয়।

গত ৩০ এপ্রিল রাত ১২টা থেকে মাছের অভয়াশ্রয়গুলোর ওপর সরকার আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়েছে।

 

হাসনাত/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়