ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘নিজের জন্য না, কষ্ট হইতাছে দুইডা মাইয়ার জন্য’

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ১৮ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘নিজের জন্য না, কষ্ট হইতাছে দুইডা মাইয়ার জন্য’

‘স্যার, দুই দিন ধইরা রুটি পানি দিয়া ভিজাইয়া খাইয়া আছি। চাউল, ডাইল, আলু, তেল কিছুই নাই। একটু সাহায্য করলে আমার দুইডা মাইয়া নিয়া একটু ভাত খাইতে পারতাম। নিজের জন্য না, কষ্ট হইতাছে আমার দুইডা মাইয়ার জন্যে। অগো মুখের দিকে তাকাইতে পারি না।’

সোমবার (১৮ মে) রাইজিংবিডির এ প্রতিবেদকের কাছে এভাবে নিজের অভাব ও অসহায়ত্বের কথা বলেন রাজধানীর রায়েরবাজার এলাকার হালিমা বেগম।

হালিমা বেগম অন্যের বাসায় রান্না ও কাপড় ধোয়ার কাজ করতেন। করোনা মহামারির কারণে এখন হালিমা বেগমের হাতে কাজ নেই। কাজ না থাকায় রোজগারও নেই। কিছু ত্রাণ সামগ্রী পেলেও তা শেষ হয়েছে। এখন আর ত্রাণ পাচ্ছেন না। তাই রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসে থাকেন আর মানুষ দেখলেই কাঁদতে কাঁদতে সাহায্য চান।

হালিমা বেগম বলেন, ‘ভাই, ঢাকা শহরের মানুষ খুব কঠিন মনের। মায়া-দয়া কম। এত টাকা-পয়সা দিয়া কী করবে এই বড়লোকেরা? আমাগো মতো গরিবদের কেউ সাহায্য করতে চায় না। আমরা তো ইচ্ছা করে সাহায্য চাইছি না। করোনার কারণে কেউ কাজ দেয় না।’

তিনি বলেন, ‘আমি তিন বাসায় রান্না কইরা দিতাম। দুই বাসার মানুষ সবাই গ্রামের বাড়ি চইলা গেছে অনেক আগেই। এক বাসায় মানুষ থাকলেও বলে দিছে, করোনার পর আবার রান্না করতে যাইতে। এখন নাকি তারা কাজে রাখবে না আমাকে। আর রান্না না করলে তো বেতনও দেবে না। গত মাসে কিছু বেতন পাইলেও এই মাসে এক টাকাও কেউ বেতন দেয়নি।’

হালিমা বেগম তখন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার দুইডা মাইয়া । মুখের দিকে তাকাইতে পারি না। কলিজাডা ফাইট্টা যায় মাইয়াগো মুখের দিকে তাকাইলে। আল্লাহ আমারে কোন পরীক্ষার মধ্যে ফেলাইছে বুঝতে পারি না। এই রোগ কবে দেশ থেকে যাবে বলতে পারেন। এত কষ্ট আর সয় না। কেউ কাছে ঘেঁষতে দেয় না। সবাই দূর দূর কইরা তারাইয়া দেয়।’

ধানমন্ডি জিগাতলা, ১৫ নাম্বার বাস স্ট্যান্ড, শঙ্কর, সিটি কলেজ, নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হালিমা বেগমের মতো শত শত মানুষ রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে বা বসে রয়েছেন। সবার প্রত্যাশা, কেউ আসবেন তাদের ত্রাণ দেওয়ার জন্য।

 

ঢাকা/হাসিবুল/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়