ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বাবার অটোরিকশাতেই বেড়ে উঠছে শিশু নীরব

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২১ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বাবার অটোরিকশাতেই বেড়ে উঠছে শিশু নীরব

মা থেকেও নেই। বাবা আনিছুর রহমানই যেন সব চার বছরের শিশু নীরবের। আর ছেলেকে এক পলকের জন্যও দূরে রাখতে চান না বাবা।

জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন সকালে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বের হন আনিছুর রহমান। সারা দিন ছেলেকে সঙ্গে করে যাত্রী নিয়ে ছুটেন রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায়।

আনিছুর রহমান বলেন, ‘ভোরে ছেলেকে ঘুম থেকে উঠিয়ে তৈরি করে সঙ্গে নিয়ে বের হয়। বাসায় ফিরি রাত ১০টায়। খাবার-দাবার সবই চলে বাইরে।’

বছর দশেক আগে আনিছুর রহমান বিয়ে করেন নিলুফা বেগম নামে একজনকে। রাজধানীর মাতুয়াইলে বাসা ভাড়া করে থাকতেন এ দম্পতি। বিয়ের ছয় বছর পর তাদের সংসারে আসে ছেলে নীরব। নীরবের জন্মের ৬ মাস পর তাকে রেখে বিদেশ চলে যান মা।

আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমার সংসারে অভাব ছিল না। কিন্তু আমার স্ত্রীর বিলাসিতার কারণে সংসার ভেঙেছে। টাকার লোভে আমাদেরকে ছেড়ে সে সৌদি আরব চলে গেছে। তার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমিই এখন নীরবের মা-বাবা। তাকে কখনো মার অভাব বুঝতে দেইনি। তাইতো সারা দিন যেখানেই যাই তাকে সঙ্গে রাখি।’

আনিছুর রহমানের আরও পাঁচ ভাই ও এক বোন রয়েছে। তারা যাত্রাবাড়ীর শেখদী এলাকায় থাকেন। । কিন্তু আনিছুর রহমান তার ছেলেকে নিয়ে মাতুয়াইলে থাকেন। 

নীরবকে কেন তার আত্মীয়-স্বজনের কাছে রাখেন না জানতে চাইলে আনিছুর রহমান বলেন, ‘করোনার কারণে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। তখন করোনার ভয়ে আড়াই মাস নীরবকে তার দাদির কাছে রেখেছিলাম। তার সঙ্গে আমার মা, ভাই, বোন কেউ ভালো ব্যবহার করেনি। তারা ঠিকমত খাবার দিতো না। মারধর করতো। নীরব আমাকে সব বলে। পরে একদিন নিজের চোখে দেখি আমার মা ছেলেকে মারধর করছে। পরে তাকে নিয়ে চলে আসি। যা হওয়ার হবে। তাও ছেলেকে আর কোথাও রাখবো না। আর কারো ভালোবাসা আমাদের প্রয়োজন নেই।’

দিনভর অটোরিকশাতে ঘুরলে ওর পড়াশোনার কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি জানি, এটা ওর জন্য ক্ষতি হচ্ছে। আগে তো ওকে বাঁচানো দরকার। সব মা-বাবাই চান ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হোক বা ভালো চাকরি করুক। আমি এসব চাই না। সুযোগ পেলে ছেলেকে আমি মাওলানা বানাতে চাই।’

আর বিয়ে করবেন কি না জানতে চাইলে আনিছুর রহমান বলেন, ‘ছেলের গুরুত্ব আমার কাছে সবচেয়ে বেশি। যদি কেউ আমার ছেলেকে নিজের ছেলের মতো করে ভালোবাসতে পারে তাহলে তাকে বিয়ে করবো। তবে সে ক্ষেত্রে গরিব পরিবারের এমনকি এতিম মেয়ে হলে ভালো হয়।’

ছোট্ট নীরব জানে তার মা মারা গেছে। তাই তো মায়ের কথা জানতে চাইলে সে বলে, ‘আমার মা নেই। মা মরে গেছে। বাবা আমাকে অনেক আদর করে, ভালোবাসে।’

 

ঢাকা/মামুন খান/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়