দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ আরও আকর্ষণীয় করুন: প্রধানমন্ত্রী

দেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিনিয়োগ পরিবেশকে সহজ ও সুন্দর করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দেশের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে সংশ্লিষ্টদেও প্রতি আহ্বান জানান।

বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) গভর্নিং বডির সভায় এ কথা বলেন তিনি।  প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সভায় যোগ দেন। সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প এবং বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, পিএমও সচিব তোফাজ্জ্বল হোসেন মিয়া এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণভবনে উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া অর্থমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং সচিব, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআই সভাপতি, চট্টগ্রাম চেম্বার্স অব কমার্স ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি, বাংলাদেশ ওমেন চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে সব দেশেরই সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু এই সমস্যার মধ্যে দিয়েই কিভাবে আমাদের দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করতে হবে।  বিনিয়োগ পরিবেশ  আকর্ষণীয় করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা জাতিসংঘ নির্ধারিত এমডিজি খুব দক্ষতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছি। এখন এসডিজি বাস্তবায়নের চেষ্টা চালাচ্ছি। যে কারণে, ইতিমধ্যে আমরা কতকগুলো বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।  যার মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন অন্যতম।

অবকাঠামো উন্নয়ন না হলে দেশে কখনো বিনিয়োগ আসতে পারে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে নৌপথ, রেলপথ, আকাশ পথে যোগাযোগ উন্নত করার জন্য সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে।

দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাত উল্লেখ করে দেশে এক সময় বিদ্যুৎ খাতে অব্যবস্থাপনা এবং সীমিত উৎপাদনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা আমাদের ছিল। কিন্তু আজ বিদ্যুৎ আমাদের উদ্বৃত্ত আছে। গ্যাসের সমস্যা সমাধানে নিজেদের গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থার পাশাপাশি সরকার এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিনিয়োগের জন্য যেসব পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে তার সুফল মানুষ পেতে শুরু করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা কর অবকাশের সুবিধা দিয়েছি। সমগ্র বাংলাদেশে একশ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, উন্নয়ন যাতে একটা জায়গায় না হয়ে সমগ্র বাংলাদেশে হয় সে ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে।  যেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সহজে করা যাবে এবং শ্রমিকও খুব সহজে পাওয়া যাবে।  শিল্পায়নের ত্বরান্বিত করতে কর রেয়াত দেওয়া হচ্ছে, মূলধনী সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার গৃহীত পদক্ষেপের ফলে দেশে ইতিমধ্যে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে দেশে আসা সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ ২ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম ব্যবসা বাণিজ্য শিক্ষা, সবকিছু সহজ করার জন্য আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বো। সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ করতে পেরেছি বলেই আজকে আমরা এরকম একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও এখানে বসে বিডার গর্ভনিং বোর্ডেও সভা করতে পারছি।

মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিনিয়োগকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য ‘বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজনের যে পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে পরিবর্তিত করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটা ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে করার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, আমাদেরকে আরও বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগ আনতে হবে, এটার সুযোগ আছে। অনেক দেশে এখন অনেক শিল্প বন্ধ। আমাদের জনসংখ্যা আছে, জমি তৈরি আছে, অন্যান্য সুযোগ সুবিধা আছে।  এই সুযোগটায় আমরা কিন্তু ইনভেস্টমেন্ট আরও বেশি আকর্ষণ করতে পারি এবং আনতে পারি।