ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

কবে শুরু হবে ‘মুজিব কেল্লা’র কাজ

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৩, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৭:০৯, ১৪ মার্চ ২০২৩
কবে শুরু হবে ‘মুজিব কেল্লা’র কাজ

ঘূর্ণিঝড় ও বন্যাপ্রবণ এলাকার জানমালের নিরাপত্তার জন্য চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৭৮টি কেল্লার মধ্যে ১০০টি ‘মুজিব কেল্লা’ নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ১৭২টি মুজিব কেল্লার সংস্কার ও উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব ও মুজিব কেল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সুব্রত পাল চৌধুরী বলেন, প্রকল্পটি বড় ও গুরুত্বপূর্ণ। তাই এটি বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ধাপে ধাপে জোর দেওয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছর ১০০টি মুজিব কেল্লা নির্মাণ শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। 

এরইমধ্যে ৪১টি প্রকল্পের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে, আরও ১৪টি প্রকল্পের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়ার কাজ প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান প্রকল্প পরিচালক সুব্রত পাল চৌধুরী।

প্রকল্পের মেয়াদের বিষয়ে তিনি বলেন, হয়তো বাড়ানো লাগতে পারে, তবে আমাদের চেষ্টা থাকবে নির্দিষ্ট মেয়াদে এটি সম্পন্ন করা।

প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: দুর্যোগকালে কিল্লার আশপাশের জনসাধারণ ও তাদের মূল্যবান সামগ্রী রক্ষা, গৃহপালিত প্রাণীদের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিতকরণ, স্বাভাবিক সময়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি খেলার মাঠ ও হাট-বাজার হিসেবে কিল্লা ব্যবহার করা। গ্রাম ও ইউনিয়ন কমিউনিটির মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বৈঠকখানা হিসেবে ব্যবহার করা হবে কিল্লা। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও দুর্যোগের সময় অস্থায়ী সেবাকেন্দ্র হিসেবেও কিল্লা ব্যবহার করা হবে।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম: ১৮৬টি মুজিব কিল্লা ‘এ’ ক্যাটাগরির। এর মধ্যে বিদ্যমান ৫৫টি কিল্লা পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার হবে। নতুন করে নির্মাণ হবে ১৩১টি। ‘বি’ ক্যাটাগরির মুজিব কিল্লা হবে ১৭১টি। এর মধ্যে বিদ্যমান ৬৩টি পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করা হবে। নতুন করে নির্মাণ হবে ১০৮টি। ‘সি’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে ১৯৩টি মুজিব কিল্লা। এর মধ্যে ৫৪টি বিদ্যমান মুজিব কিল্লা পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার হবে, ১৩৯টি নির্মাণ হবে নতুন করে।

যেসব এলাকায় নির্মাণ করা হবে মুজিব কিল্লা: গাইবান্ধা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, টাঙ্গাইল, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুর, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, পিরোজপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর, নড়াইল, সুনামগঞ্জ ও চাঁদপুর।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার ঘূর্ণিঝড় ও বন্যাপ্রবণ এলাকার মানুষের নিরাপত্তার জন্য ‘মুজিব কেল্লা’ নির্মাণ করেছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে সেগুলো পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরিত্যক্ত মুজিব কেল্লা সংস্কারের পাশাপাশি নতুন আরও কেল্লা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

এর অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘মুজিব কেল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প’ নেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদকাল ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর। এতে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৯৫৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। যা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে।

এদিকে সাড়ে তিন বছর মেয়াদের প্রকল্প বাস্তবায়নে দুই বছরেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। এ অবস্থায় বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গত মাসে তিন সদস্যের একটি সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয়েছে ফেনী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে। অপর দুই সদস্য হলেন- ময়মনসিংহ-১ আসনের সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং ও ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী।  প্রকল্প বাস্তবায়নে কী জটিলতা তৈরি হয়েছে, কোথায় কী অনিয়ম রয়েছে, তা চিহ্নিত করার জন্য এ কমিটি কাজ করবে।

তবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কমিটির পক্ষ থেকে এক মাসেও কোনো প্রতিবেদন বা সুপারিশ জমা হয়নি।

জানা গেছে, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৩ লাখ মানুষ ও কয়েক লাখ প্রাণী মারা যায়। ১৯৭২ সালের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার হাত থেকে জানমাল রক্ষায় অনেক মাটির কেল্লা নির্মাণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে এগুলো নির্মিত হওয়ায় সর্বসাধারণের কাছে এটি ‘মুজিব কেল্লা’ নামে পরিচিতি পায়।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশব্যাপী ১৭২টি মুজিব কেল্লা সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ এবং নতুন করে ৩৭৮টি কেল্লাসহ মোট ৫৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তুলতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। সাতটি বিভাগের উপকূলীয় ও বন্যাপ্রবণ ৩৮টি জেলায় এসব কেল্লা নির্মাণ করা হবে।  নতুন কেল্লাগুলোর মধ্যে ১০০টির নির্মাণ চলতি অর্থবছরে সম্পন্ন করা হবে।

ঢাকা/হাসান/জেডআর

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়