ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

নাগরিকের গোপনীয়তা রক্ষায় ফোন কোম্পানির দায়িত্ব রয়েছে: হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:৪৮, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১২:৩৩, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১
নাগরিকের গোপনীয়তা রক্ষায় ফোন কোম্পানির দায়িত্ব রয়েছে: হাইকোর্ট

নাগরিকের গোপনীয়তা রক্ষায় বিটিআরসিসহ দেশের সরকারি-বেসরকারি সকল মোবাইল ফোন অপারেটরের দায়িত্ব রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। সংবিধানেই নাগরিকের এই গোপনীয়তা রক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। চাইলেই কোন স্বার্থে নাগরিকের সাংবিধানিক এই অধিকারকে লংঘন করা যায় না।

নেত্রকোনার শিশু সৈকত হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের একটি বৃহত্তর বেঞ্চ এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।

আদালত ৪৯ পৃষ্ঠার রায়ে বলেছেন, নাগরিকদের মধ্যেকার ব্যক্তিগত কথপোকথনের অডিও ও ভিডিও আজকাল বিভিন্ন উদ্দেশ্যে প্রায়ই সামাজিক মাধ্যমে ফাঁস করা বা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এটা বন্ধ করা উচিত।

গত বছরের ২৮ আগস্ট দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

রায়টি লিখেছেন বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস। এতে একমত পোষণ করেছেন বিচারপতি শওকত হোসেন ও বিচারপতি এএসএম আব্দুল মোবিন।

রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, আনুষ্ঠানিক চাহিদাপত্র ও গ্রাহককে অবহিতকরণ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানি থেকে কললিস্ট বা কল রেকর্ড সংগ্রহ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আইন দ্বারা অনুমোদিত না হলে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোও দেশের নাগরিক বা গ্রাহকের কল লিস্ট সম্পর্কিত কোন তথ্য কাউকে সরবরাহ করতে পারে না।

রায়ে বলা হয়েছে, তদন্তকারী কর্মকর্তার যখন কোনো তদন্তের জন্য কোনো কল লিস্ট বা তথ্যের প্রয়োজন পড়বে তাকে অবশ্যই কোম্পানির যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করতে হবে। অনুরোধপত্রে তাকে তথ্য চাওয়ার কারণ এবং এই তথ্য তার তদন্তের জন্য কেনো জরুরি তা উল্লেখ করতে হবে। শুধুমাত্র এমন পর্যায়েই মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো কল লিস্ট বা তথ্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রদান করতে পারবেন। এই প্রক্রিয়ার বিষয়টি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীকেও জানাতে হবে। নইলে তদন্ত কর্মকর্তাকে দেওয়া নথি তার সত্যতা হারাবে এবং যেই কর্মকর্তা এই নথি প্রদান করবেন তিনিও তার বৈধতা হারাবেন। একইসঙ্গে সংবিধান কর্তৃক নাগরিকের মৌলিক অধিকার লংঘনের দায়ে অভিযুক্ত হবেন।

রায়ে আরো বলা হয়েছে, বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির অবিশ্বাস্য অগ্রগতি হচ্ছে এবং সর্বক্ষেত্রে এর ব্যবহার হচ্ছে। তাই দেশের সাক্ষ্য আইনকে যুগপোযোগী করা এখন সময়ের দাবি।

এই মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী রায়। হাইকোর্টের রায়ে যেসব পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে একজন আইনজীবী হিসেবে আমার প্রত্যাশা রাষ্ট্র ও যথাযথ কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

এক লাখ টাকা চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় নেত্রকোনার কমলাকান্দার শিশু সৈকতকে (৭) অপহরনের পর হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ২০১১ সালের ১৩ অক্টোবর আসামি অলি আহম্মদকে (২২) মৃত্যুদন্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪। পলাতক আসামি সবুজ মিয়া ও তাপসকে দেয়া হয় যাবজ্জীবন সাজা। এই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দেন প্রধান বিচারপতি। ওই বেঞ্চের রায়ে আসামি অলিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

আসামি পক্ষের আইনজীবীর যুক্তি ছিলো, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যে কল রেকর্ডের ভিত্তিতে অলিকে অভিযুক্ত করেছেন এবং আদালত মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন সেই সংগৃহীত রেকর্ড সংশ্লিষ্ট মোবাইল ফোন কোম্পানি কর্তৃক অথেনটিকেটেড (সত্যায়িত নিরূপণ) করা ছিলো না।

আদালত ওই যুক্তি গ্রহণ করে অলিকে খালাস দেওয়ার পাশাপাশি উপরোক্ত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন বলে জানান আইনজীবী কায়সার কামাল।

ঢাকা/মেহেদী/টিপু

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়