ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

রণদা প্রসাদের হত্যাকারী মাহবুবের মৃত‌্যু, মির্জাপুরে দাফন

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১৩, ১৭ অক্টোবর ২০২০  
রণদা প্রসাদের হত্যাকারী মাহবুবের মৃত‌্যু, মির্জাপুরে দাফন

মাহবুবুর রহমান (ফাইল ফটো)

কুমুদিনী হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহাকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী মাহবুবুর রহমান অসুস্থ হয়ে মারা গেছে।

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ৭২ বছর বয়সী মাহবুব আগে থেকেই বিভিন্ন রোগে ভুগছিল। শুক্রবার ভোরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে শনিবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় গোপনে মির্জাপুরে তার লাশ দাফন করা হয়েছে বলে মির্জাপুর প্রেসক্লাব সূত্রে জানা গেছে। এ সময় সেখানে তার পরিবারের কয়েকজন ছাড়া স্থানীয় কেউ উপস্থিত ছিলেন না।

মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সায়েদুর রহমান মাহবুবুর রহমানের লাশ দাফন করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘আমাদের আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। লাশ দাফনের পর আমরা জানতে পেরেছি।’

মুক্তিযুদ্ধের সময় দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা, তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহাকে হত্যা ও গণহত্যার দায়ে গত বছর ২৭ জুন মাহবুবুর রহমানের ফাঁসির রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

মাহবুবুর রহমানের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ ১৯৭১ সালে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর শান্তি কমিটির সভাপতি ছিল। মাহবুব ও তার ভাই আব্দুল মান্নান সে সময় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ করে।

অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন, হত্যা-গণহত্যার দায়ে মাহবুবুর রহমানের সর্বোচ্চ সাজা দেন আদালত। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, কেবল ব্যক্তি বা পরিবার নয়, মাহবুবুর রহমানের উদ্দেশ্য ছিল ‘পুরো হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করা’।

ওই মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, মাহবুব একসময় জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক ছিল। তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হলেও প্রতিবারই পরাজিত হয় সে। একসময় জাতীয় পার্টির সঙ্গেও যুক্ত ছিল সে।

মামলার বাদী একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষা সৈনিক এবং কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার পরিচালক প্রতিভা মুৎসুদ্দী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে কারো মৃত্যুদণ্ড কামনা করি না। তার অপরাধের শাস্তি সে পেয়েছে। আমরা চাই, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সেসবের বিচার হোক। কোনো হত্যাকারী যেন রক্ষা না পায়। কোনো অন্যায় বিচারের ঊর্ধ্বে নয়। অন্যায়কারী যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, সে যেন মনে না করে, সে রক্ষা পাবে। আমরা সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ যে, বিলম্বে হলেও তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুনিমুক্ত দেশ, খুনিমুক্ত বিশ্ব দেখতে চাই।’

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৭ মে শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলে রবি সাহাকে তুলে নিয়ে যায় হানাদার বাহিনী। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর দালাল মওলানা ওয়াদুদের দুই ছেলে রাজাকার কমান্ডার মো. মাহাবুবুর রহমান ও মান্নান। ওই রাতেই তাদের হত্যা করা হয়। 

শুক্রবার দিন ছিল মির্জাপুরে সাপ্তাহিক হাটবার। জুমার নামাজের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দালাল মওলানা ওয়াদুদের নির্দেশে এবং তারা দুই ছেলে মান্নান ও মাহবুবের নেতৃত্বে কিছু ধর্মান্ধ ব্যক্তি মির্জাপুর বাজারে ব্যাপক লুটপাট চালায়। একই সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে মির্জাপুরের সাহা পাড়ায় হামলা চালিয়ে নিরাপরাধ গ্রামবাসীদের হত্যা করে পাশের বংশাই নদীতে ভাসিয়ে দেয়। সেদিন রাতেই নারায়ণগঞ্জে হামলা চালিয়ে রণদা প্রসাদ সাহা ও ভবানী প্রসাদ সাহা রবিসহ সাতজনকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়।

ঢাকা/হাসনাত/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়