স্বাধীনতার কবির ৯২তম জন্মদিন
শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম
তিনি ছিলেন স্বাধীনতার কবি, জনতার কবি। দেশের ও দেশের মানুষের বিরুদ্ধে কোন অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে তার জবাব দিতেন কবিতার ভাষায়।
আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানের ৯২তম জন্মদিন আজ।
কবির জন্ম ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরনো ঢাকার মাহুতটুলিতে। শামসুর রাহমানের ডাকনাম ছিল বাচ্চু। বাবা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী ও মা আমেনা বেগম। ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট তিনি ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
আঠার বছর বয়সে তিনি লেখা শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করার পর কবি ১৯৫৭ সালে ডেইলি মর্নিং সান পত্রিকায় সহযোগী সম্পাদক হিসেবে কর্ম ও পেশাগত জীবন শুরু করেন। পরে পাকিস্তান রেডিওতেও চাকরি করেন। দেশ স্বাধীনের পর দৈনিক বাংলা পত্রিকায় যোগ দেন। এক পর্যায়ে এই পত্রিকার প্রধান সম্পাদকসহ সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে ‘মূলধারা’, ‘অধূনা’ নামে দুটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন।
কালের স্পন্দন খুব করে যার কবিতায় ঢেউ তুলেছে। যার কবিতা আজও সকল বয়সের মানুষকে উজ্জীবিত করে। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা কবির অসংখ্য কবিতা ব্যাপকভাবে যোদ্ধাসহ সর্বস্তরের মানুষকে উৎসাহিত করেছে।
শামসুর রাহমান দীর্ঘ ছয় দশক ধরে লেখালেখি করেছেন, সমকালকে ধারণ করে লিখেছেন অসংখ্য কবিতা। মুক্তিযুদ্ধ, নাগরিকতা ও প্রেম তার কবিতায় দীর্ঘ পথ হেঁটেছে। আপন সত্তায় উদ্ভাসিত হয়ে দেশ ও কালকে তিনি নিজের করে নিয়েছেন। আশা, বেদনা, ভালোবাসা, দ্রোহ কোনো কিছুই বাদ যায়নি তার কবিতা থেকে।
শামসুর রাহমানকে বলা হয় কবিতার বরপুত্র। শামসুর রাহমানকে নাগরিক কবি বলা হয়। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। তার লেখা কবিতা 'স্বাধীনতা তুমি' ও 'তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা' আজো মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। এ ছাড়া তার লেখা 'বন্দী শিবির থেকে', 'বর্ণমালা', 'আমার দুঃখিনী বর্ণমালা', 'আসাদের শার্ট', 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯'- কবিতাগুলো তার স্বাধীনতাকামী মনের পরিচয় বহন করে। দেশমাতৃকার জন্য যার কবিতা স্লোগানে, ব্যানারে, দেয়াললিখনে এমনকি মুখে মুখে ব্যবহার হয়েছে অহরহ।
শামসুর রাহমানের প্রথম কবিতার বই ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশ পায় ১৯৬০ সালে। এর পর ষাট দশকে প্রকাশিত বইগুলো হচ্ছে ‘রৌদ্র করোটিতে’, ‘বিধ্বস্ত নীলিমা’, ‘নিরালোকে বসতি’, ‘নিজ বাসভূমে’। দেশ স্বাধীনের পর প্রকাশ পায় ‘বন্দি শিবির থেকে’, ‘মাতাল ঋতিক’সহ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কবির ৬০টি কবিতার বই। এ ছাড়া শিশুতোষ, গল্পগ্রন্থ, উপন্যাস- ‘অক্টোপাস’ ও ‘অদ্ভুত আঁধার’, নাটক ও কবিতাগ্রসহ অনুবাদগ্রন্থ, নির্বাচিত কলাম, নির্বাচিত কবিতার চারখন্ডসহ কবির বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা শত ছাড়িয়ে।
সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, আদমজী পুরস্কার, একুশের পদক, কলকাতা থেকে আনন্দ পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন। ভারতের রবীন্দ্রভারতী ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি দেওয়া হয়।
শামসুর রাহমান পেশায় সাংবাদিক ছিলেন। ১৯৫৭ সালে দৈনিক মর্নিং নিউজ-এ সহসম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে একে একে রেডিও পাকিস্তান, দৈনিক বাংলা, সাপ্তাহিক বিচিত্রা ইত্যাদিতে কাজ করেছেন।
এদিকে, কবির জন্মদিন সামনে রেখে বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে বাংলা একাডেমি, জাতীয় কবিতা পরিষদ ও শামসুর রাহমান স্মৃতিপরিষদের যৌথ উদ্যোগে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একটি আলোচনা সভা ও নিবেদিত কবিতাপাঠের আয়োজন করা হয়। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর সভাপতিত্বে আলোচনা ও স্মৃতিচারণায় অংশ নেন অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, কবি আসলাম সানী, ড. জালাল ফিরোজ, কবি পিয়াস মজিদ। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি তারিক সুজাত। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক কবি আমিনুর রহমান সুলতান।
এ ছাড়া সারাদেশে আজ সাহিত্যিক, সাহিত্যানুরাগী ও বিভিন্ন সংগঠন কবির জন্মদিন উদযাপনে নানা আয়োজন করেছে।
ঢাকা/টিপু
আরো পড়ুন