‘সেদিন আগুনে পুড়ে মরে গেলেই ভালো হতো’
‘এত কষ্ট হবে জানলে সেদিন আগুনে পুড়ে মরে গেলেই ভালো হতো। পরিবার যেন লাশটা পায় সেজন্য তিনতলা থেকে লাফও দিয়েছিলাম।’
আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন জরিনা বেগম। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাণে বেঁচে গেলেও ‘জীবনের’ সঙ্গে আর পেরে উঠছেন না। অগ্নিকাণ্ডে সেদিন আহত হয়েছিলেন জরিনা বেগম। লাফ দিয়ে নিচে পড়ায় হারিয়েছেন কর্মক্ষমতা। অভাব-অনটনের সংসারে খেয়ে, না খেয়ে দিন কাটছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন, সুচিকিৎসার দাবিতে এক মাস ৭ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন জরিনা বেগমসহ কয়েকজন। এতদিন পার হলেও কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। তারা প্রধানমন্ত্রী ও বিজিএমইকে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) অবস্থান কর্মসূচি পালনের সময় জরিনা বেগম বলেন, অন্য দেশের লোকজন এসে আমাদের দেশে বাস করছে। তারা খেয়ে-পড়ে ভালো আছে। অথচ নিজ দেশে আমাদের না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। কেউ একটু সাহায্য সহযোগিতা করে না। স্থানীয় প্রতিনিধিদের কাছে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি। অথচ এক সময় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে কাজ করেছি আমরা।
জরিনার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। স্বামী হারা সংসারে রয়েছে এক ছেলে, এক মেয়ে। গ্রামের বাড়ির ভিটেমাটি বিক্রি করে ভাই, বোন ও নিজের চিকিৎসার খরচ জুগিয়েছেন। এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই।
রেহানা আক্তার নামে এক শ্রমিক বলেন, আমিসহ তাজরীন গার্মেন্টসে আমার বড় বোন, দুলাভাই, ভাগ্নে ও ভাগ্নের বউ চাকরি করতাম। ঘটনার সময় তৃতীয় তলায় সবাই কাজ করছিলাম। অগ্নিকাণ্ডে আমি ছাড়া সবাই মারা গেছে। এখন মনে হচ্ছে সেদিন মরে গেলে আজ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হতো না।
আলেয়া বেগম নামের আরেক শ্রমিক বলেন, কাজ করার শক্তি নাই। বড় মেয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। আর ছোটটা মাদ্রাসায়। এ অবস্থা থাকলে মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবো না।
অবস্থান কর্মসূচিতে আসা শ্রমিকদের আক্ষেপ, দুর্ঘটনার পর মালিক যদি তাদের চিকিৎসার একটু খোঁজ-খবর নিতেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন, অন্তত এতেও তাদের কষ্টটা একটু কম হতো।
তারা বলেন, ২৪ নভেম্বর এলে অনেকেই খোঁজ-খবর নেয়। এরপর বছরের কোনো সময় তাদের দেখা পাওয়া যায় না।
এদিকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে এসে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে জানান তারা।
ঢাকা/মামুন/জেডআর
আরো পড়ুন