জাতীয় মানসিক হাসপাতালের পরিচালক তালাবন্দি
রাজধানীর মাইন্ড এইড হাসপাতালে এএসপি আনিসুল করিম হত্যা মামলায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ওই হাসপাতালের পরিচালককে তালাবন্দি করেছেন চিকিৎসক ও কর্মচারীরা।
বুধবার (১৮ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর শ্যামলীতে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীরা পরিচালকের কক্ষের দরজায় তালা দেন ও দরজার সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তারা ডা.মামুনের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন।
মাহাবুব নামের এক চিকিৎসক বলেন, ‘মামুন স্যার সম্পূর্ণ নির্দোষ। তিনি যদি মাইন্ড এইড হাসপাতালে রোগী পাঠিয়ে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হওয়ার কথা। কিন্তু তাকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রমাণ ছাড়া একজন সরকারি কর্মকর্তাকে কখনই এভাবে তুলে নেওয়া যায় না। আইনের রক্ষক হয়েও তারা আইন ভঙ্গ করেছে। ডা. মামুন সেদিন সকাল পর্যন্ত অফিস করেছেন। যে মানুষটা এভাবে অফিস করছে, তাকে তো এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়ার দরকার হয় না।’
এক কর্মচারী বলেন, ‘ওনার (এএসপি আনিসুল করিম) বোন ও ভগ্নিপতি ডাক্তার। উনি ছিলেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। একজন গ্রামের মানুষকে বুঝিয়ে ওখানে (মাইন্ড এইড হাসপাতাল) পাঠানো যায়। কিন্তু ওনাকে কি এভাবে ওখানে পাঠানো সম্ভব?’
হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মামুন স্যারকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। অথচ পরিচালক মহাদয় কিছুই করছেন না। এখন পরিচালক কী ব্যবস্থা নেবেন, তা জানতে চান কর্মচারীরা। কিছু সময় রোগী দেখা বন্ধ থাকলেও এখন পরিবেশ স্বাভাবিক আছে।’
আন্দোলনকারীদের দাবি—কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের ব্যাখ্যা দিতে হবে। ডা. মামুনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মানসিক হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে কর্মপরিবেশ ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দিতে হবে।
এ বিষয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী আমাদের কোনো কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করতে হলে আগে আমাকে জানানোর কথা। কিন্তু আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। রেজিস্ট্রার আব্দুল্লাহ আল মামুন হাসপাতালের ডরমেটরিতে থাকতেন। তাকে ভোর ৪টার সময় উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে জানিয়েছি। আমি চাই, বিষয়টি আমাদের অফিসিয়ালি জানানো হোক।’
উল্লেখ্য, গত ৯ নভেম্বর দুপুর পৌনে ১২টার দিকে এএসপি আনিসুল করিমকে রাজধানীর আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। ভর্তির কিছুক্ষণ পর ওই হাসপাতালের কর্মচারীদের ধস্তাধস্তি ও মারধরে আনিসুল করিমের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে আদাবর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযোগ আছে, এএসপি আনিসুল করিমকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে পাঠিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন।
ঢাকা/সাইফুল/রফিক
আরো পড়ুন