ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

ঝুলে আছে তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের বিচার, পুলিশকে দুষছেন ভুক্তভোগীরা

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৭, ২৪ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১০:০২, ২৪ নভেম্বর ২০২০
ঝুলে আছে তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের বিচার, পুলিশকে দুষছেন ভুক্তভোগীরা

সাক্ষীরা আদালতে না আসায় আটকে আছে তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের বিচারকাজ। ৮ বছর কেটে গেলেও এ মামলায় অগ্রগতি সামান্য। আদালত বার বার সাক্ষীদের আনার তাগিদ দিলেও পুলিশ সময়মতো সাক্ষী হাজির করতে পারছে না। 

২০১২ সালের এই দিনে রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশন কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ১১২ জন শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটে। আহত হন অর্ধশতাধিক মানুষ। এ ঘটনায় পরদিন আশুলিয়া থানার এসআই খায়রুল ইসলাম একটি মামলা করেন। ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক একেএম মহসিনুজ্জামান খান আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। এখন পর্যন্ত ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দিলারা আলো চন্দনার আদালতে বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ১৫ অক্টোবর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। এজন্য আদালত আগামী ১৩ জানুয়ারি পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিধ ধার্য করেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর রেহানা আক্তার বলেন, ‘সাক্ষীরা ঠিকমতো আদালতে না আসায় বার বার সাক্ষ্য গ্রহণ পেছাচ্ছে। মামলায় সাক্ষীদের প্রতি অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তারপরও সাক্ষীরা আসছেন না। এর মাঝে করোনাভাইরাসের কারণে আদালত বন্ধ ছিল। আবার আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর পর একটা তারিখ গেছে। মামলার তারিখ সম্পর্কে সব আসামি জানে না। এরপর থেকে নিয়মিত সাক্ষী হাজির করে যত দ্রুত সম্ভব বিচারটা যেন শেষ হয় সেই চেষ্টা করব।’

সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মুর্শিদ উদ্দিন খাঁন বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ যথেষ্ট তৎপর মামলাটির বিচার শেষ করতে। কিন্তু সাক্ষী না আসায় মামলাটির বিচার শেষ হচ্ছে না। সাক্ষীদের সমন পাঠানো হয়, ফোন দেওয়া হয়, তারপরও তারা আসেন না। আদালত মামলাটি শেষ করতে জোর দিচ্ছেন। আগামী তারিখ থেকে সাক্ষী হাজির করে যত দ্রুত সম্ভব সাক্ষ্য শেষ করার চেষ্টা করব।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী হেলেনা পারভীন বলেন, ‘এমনিতেই মামলাটিতে সাক্ষী হাজির হয় না। এরপর আবার করোনার কারণে আদালত ছুটিতে ছিল। এ কারণে সাক্ষীরা আসতে পারেননি। পুলিশ সাক্ষী হাজির করতে পারছে না। এ কারণে সাক্ষ‌্য শেষ হচ্ছে না। আসামিদের নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। এতে আসামিদের ক্ষতি হচ্ছে। সাক্ষীরা এলে মামলাটির বিচার শেষ হবে। সেখানে আসামিরা দোষী না নির্দোষ, তা প্রমাণ করতে পারব। আমরা সবাই সুষ্ঠু বিচার চাই। কেউ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হন।’ 

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ১১২ জন নিহত হন। আহত হন ১০৪ জন। গার্মেন্টস কারখানাটিতে ১ হাজার ১৬৩ জন শ্রমিক কাজ করতেন। দুর্ঘটনার সময় ৯৮৪ জন শ্রমিক সেখানে কর্মরত ছিলেন। ৫৮টি লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকি লাশগুলো অশনাক্ত অবস্থায় জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। ওই ঘটনায় আশুলিয়া থানার এসআই খায়রুল ইসলাম অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। তদন্তের পর ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডির পরিদর্শক একেএম মহসীনুজ্জামন।

মামলায় মোট ১০৪ জনকে সাক্ষী করা হয়। এখন পর্যন্ত আটজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। বাকি সাক্ষীদের বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামান এ মামলার চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন এবং পরবর্তী বিচারের জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে স্থানান্তর করেন। সর্বশেষ গত বছর ৭ মার্চ আবিদ হোসেন নামে এক সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। এরপর আটটি ধার্য তারিখ পার হলেও কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। 

মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ১৩ জন আসামির মধ্যে ৫ আসামি পলাতক ও ৮ আসামি জামিনে আছেন।

আসামিরা হলেন—প্রতিষ্ঠানের মালিক দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, লোডার শামীম, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপার ভাইজার আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, অ্যাডমিন অফিসার দুলাল উদ্দিন, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনোয়ারুল, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জুর ও কোয়ালিটি ম্যানেজার শহীদুজ্জামান দুলাল। মো. শহিদুজ্জামান দুলাল, মোবারক হোসেন মঞ্জু, মো. রানা ওরফে আনারুল, মো. শামিম মিয়া ও আল আমিন পলাতক আছেন।

ঢাকা/মামুন খান/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়