‘সেদিন মরে গেলেই ভালো হতো’
‘চারটে মোটা ভাত আর মোটা কাপড়ের জন্য ঢাকায় কাজ করতে এসেছিলাম। ভাবছিলাম নিজে কাজ করে মা-বাবা, সন্তানদের নিয়ে একটু ভালো থাকবো। এখন তো বাবা-মায়ের বোঝা হয়ে গেছি। সেদিন লাফ না দিয়ে আগুনে পুড়ে মরে গেলেই ভালো হত। মা যেন লাশটা পায় সেই জন্যই লাফ দিয়েছিলাম। এভাবে বেঁচে না থেকে সেদিন মরে গেলেই ভালো হতো’।
এভাবেই করুণ আর্তিতে কথাগুলো বলছিলেন ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সাভারের তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আহত সুইং অপারেটর জরিনা বেগম।
তাজরীন গার্মেন্টসে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়ে ১১২ জন শ্রমিককে হত্যা করা হয় বলে দাবি করেন জরিনা বেগম। পরিকল্পিত আগুন লাগানোরও কয়েকটি কারণ এ প্রতিবেদকের কাছে তুলে ধরেন জরিনা বেগম। তিনি বলেন, ঘটনার দিন বিকেল ৫টায় আমাদের ছুটি দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি। আগুন লাগার আগে তাজরীনের মালিক দেলোয়ার হোসেন গার্মেন্টসে এসে তার এলাকার (জামালপুর) স্টাফদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বের হয়ে যাওয়ার ৫ মিনিট পর আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। আগুনে কিন্তু তার জেলার কেউ মারা যায়নি। আগুন লাগার আগে শিপমেন্টের মালগুলোও বের করে নেওয়া হয়। শ্রমিকরা যখন বের হওয়ার চেষ্টা করছিল তখন গেটে তালা গালিয়ে তাদের বের হতে দেওয়া হয়নি। দেলোয়ার হোসেন পরিকল্পিতভাবে তাজরীন গার্মেন্টসে আগুন লাগান।
সেদিনের বর্ণনা দিয়ে জরিনা বেগম বলেন, বিকেল ৫টার দিকে আমি ছুটি চাই। কিন্তু আমাকে ছুটি দেওয়া হয়নি। পৌনে ৬টার দিকে আগুন লাগে। আগুন লাগলে শ্রমিকদের জানানো হয় না। মিসড কলের মত একটা এলার্ম বাজানো হয়। কিন্তু মালিকপক্ষ ওই দিন অফিসে এমন উচ্চস্বরে অফিসে গান বাজায় যার কারণে শ্রমিকদের কাছে সেই এলার্ম পৌঁছায় না। আগুন আগুন চিৎকার শুনতে পায়। পরে তিন তলায় আসি। সেখানে গেটম্যান আল আমিন বলেছিল, কিছু হয় নাই। আপনারা কাজে যান। পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে। তা না হলে আমাদের বাঁচানোর চেষ্টা করা হতো। এটা ষড়যন্ত্রের আগুন। আগুন লাগার আগে মালিক, শিপমেন্টের মালামাল বের হয়ে যায়।
তিনি বলেন, এতগুলো শ্রমিককে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারলো, কিন্তু এর বিচার পেলাম না। সরকার বলেছিল, যেই হোক অপরাধীর বিচার হবে। কিন্তু কই কিছুই তো হলো না। দেলোয়ার প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ২৪ নভেম্বর তাজরীনের সামনে যান শত শত মা-বোনের আহাজারি শুনতে পাবেন। আর আসামিরা হাসি খুশিভাবে ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, দিন শেষে পাখিরও একটি বাসা থাকে। আমার তো তাও নেই। ভাই-বোনের চিকিৎসায় ভিটে বাড়ি বিক্রি করা লাগছে। ঠিকে থাকতে গার্মেন্টসে ডুকছিলাম। এখন তো আমার কিছুই নাই। মাকে চিকিৎসা করাতে পারিনা। ছেলে-মেয়েকে একটু ভালো খাবার, কাপড় চোপড় দিতে পারি না। দেনাও হয়ে গেছি। পাওনাদারকে টাকা দিতে না পারায় গলায় ফাঁসও দিছিলাম। আল্লাহ তাও আমাকে নিলো না। ক্ষতিপূরণ, সুচিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে অনশনে আছি। আমাদের লাশ যাবে কিন্তু আমরা যেতে পারবো না। আমাদের দাবি মেনে না দিলে আত্মহত্যা ছাড়া উপায় নেই। তিন দফা দাবি আদায়ে প্রধানমন্ত্রী, বিজিএমইকে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা/মামুন/এসএম
আরো পড়ুন