‘বেঁচে থাকা যেন নরক যন্ত্রণা’
মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম
রেহানা আক্তার। কাজ করতেন তাজরীন ফ্যাশন কারখানায়। আট বছর আগে এই দিনে আগুনে পুড়ে যায় কারখানা। পুড়ে যায় রেহানার স্বপ্ন। সেদিন আগুন থেকে বাঁচতে লাফ দেন তিন তলা থেকে। ভেঙে যায় তার মেরুদণ্ড। কেটে যায় হাত। চিকিৎসা করাতে গিয়ে হন নিঃস্ব। এখন তার বেঁচে থাকাটা হয়ে উঠেছে যন্ত্রণার।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে কথা হয় রেহানার সঙ্গে। এককালীন ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসার দাবিতে গত ছয় দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন রেহানার মতো ক্ষতিগ্রস্তরা।
রেহানা জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশন কারখানার পাশেই তারা ভাড়া থাকেন। তার স্বামী রিকশাচালক। সংসারের চাকা আরেকটু সচল করতে তিনি কাজ করতেন তাজরীনে।
রেহানা বলেন, ‘আগুন আমাদের ভালো থাকতে দিলো না। আমি এখন অক্ষম। কোনো কাজ করতে পারি না। এমনকি ভাতটাও রান্না করতে পারি না। যা কিছু ছিলো চিকিৎসা করাতে গিয়ে সব শেষ। এখন খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। যদি জানতাম বেঁচে থাকার জন্য এতো কষ্ট সহ্য করতে হবে তাহলে সেদিন বাঁচার চেষ্টা করতাম না।’
সেদিনের সেই স্মৃতি আজও তাড়া করে তাকে। ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমি, আমার বড় বোন, দুলাভাই, ভাগ্নে ও ভাগ্নের বউ চাকরি করতাম। সবাই তৃতীয় তলায় কাজ করছিলাম। ঘটনার একটু আগে আরেক রুমে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে শুনি আগুন লাগছে। জানাল দিয়ে লাফ দেয়। পড়ে গিয়ে মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায়। ওরা চারজন আগুনে পুড়ে মারা গেছে। এই নরক যন্ত্রণা সহ্য করতে আমি বেঁচে আছি। টাকার অভাবে ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ। সংসার আর চলছে না। এত কষ্ট আর সহ্য হয় না। দুই মাস ধরে রাস্তায় আছি। সেদিন মরে গেলে আজ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হতো না।’
গার্মেন্টসে পরিকল্পিতভাবে আগুন দেওয়া হয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘আগুন দিয়ে আামদের কর্মক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমাদের কর্মহীন করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে দিয়েছে। লাখ লাখ টাকা দেনা হয়ে গেছি। এখন আর আমাদের ঘরে ফেরার কোনো পরিস্থিতি নেই। ফিরতে হলে লাশ ফিরবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, আমাদের একটু দয়া করেন। আমাদের সঙ্গে একটু কথা বলেন। তাহলে বুঝবেন আমরা কতটা কষ্টে আছি।’
ঢাকা/মামুন/ইভা
আরো পড়ুন