ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার দেবে ইউনেস্কো

কূটনৈতিক প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৯, ১৩ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৬:৪৫, ১৪ ডিসেম্বর ২০২০
বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার দেবে ইউনেস্কো

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো। সৃজনশীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী তরুণদের উদ্যোগকে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

রোববার (১৩ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

সৃজনশীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তনের জন্য সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে ইউনেস্কোর কার্যনির্বাহী বোর্ড। পুরস্কারটির নাম হবে ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড’।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত ১১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ইউনেস্কো নির্বাহী পরিষদের শরৎকালীন ২১০তম অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই প্রথম জাতিসংঘের কোনো অঙ্গ সহযোগী সংস্থা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন করলো। 

ইউনেস্কো শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রভৃতিসহ স্বীয় অধিক্ষেত্রে বিভিন্ন অঙ্গনে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের আর্থিক সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন করে থাকে। ইউনেস্কো অধিক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতিমান ব্যক্তি তথা প্রতিষ্ঠানের নামে ২৩টি ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তিত রয়েছে।

ড. মোমেন বলেন, ‘সংস্কৃতি’ ইউনেস্কোর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধিক্ষেত্র। সমসাময়িককালে বহুল আলোচিত ও চর্চিত বিষয় ‘সৃজনশীল অর্থনীতি’ অঙ্গনে এ আন্তর্জাতিক পুরষ্কার প্রবর্তিত হয়েছে।  এ পুরষ্কার সৃজনশীল অর্থনীতিতে যুব সমাজের উন্নয়নে সংস্কৃতিকর্মী, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা কর্তৃক গৃহীত ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগকে স্বীকৃতি দেবে। 

উল্লেখ্য, সৃজনশীল অর্থনীতি ক্ষেত্রে ‘ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধু’ পুরস্কার হবে সংস্থা কর্তৃক প্রবর্তিত প্রথম আন্তর্জাতিক পুরস্কার। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,মানব সৃজনশীলতায় অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মেলবন্ধনই ‘সৃজনশীল অর্থনীতি’ যেখানে সংস্কৃতি ভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিকাশ পরিলক্ষিত হয়। এর মাধ্যমে শিল্পীর শিল্প বা উদ্ভাবনের স্বত্ব সংরক্ষণ সুনিশ্চিত রেখে সংস্কৃতির সাথে অর্থনীতির বিকাশ সাধিত হয়। ‘সৃজনশীল শিল্প’ এর ভিত্তি হল সাহিত্য, সংগীত, হস্তশিল্প, চিত্রকলা, চলচ্চিত্রসহ সৃষ্টিশীলতার নানা মাধ্যম। ইউনেস্কো প্রায় এক যুগ ধরে এ বিষয়ে কাজ করে আসছে। করোনাভাইরাস অতিমারীর কারণে বিশ্বঅর্থনীতির নানান ক্ষেত্রে ব্যাপক যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তা সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও বিশ্বময় পরিলক্ষিত হয়েছে।  করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গৃহীত নানা বিধি নিষেধমূলক ব্যবস্থার কারণে শিল্পীসমাজ এবং সংস্কৃতি চর্চার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন এবং হচ্ছেন।  কোভিড-১৯ অতিমারীর আগমনের আগে, বিশ্ব অর্থনীতিতে সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল শিল্প খাতের অবদান ছিল বার্ষিক ২.২৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।  বিশ্ব অর্থনীতির এই ক্ষেত্র সারা বিশ্বে ৩০ মিলিয়নেরও অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে, যার ৪৫% নারী। অর্থনীতির এ ধারায় নারীর অংশগ্রহণ যেমন উল্লেখযোগ্য, এর ফলে বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে।  অন্যদিকে ‘সৃজনশীল অর্থনীতি’ খাতে যুব সমাজের অংশগ্রহণ প্রণিধানযোগ্য।  এক্ষেত্রে ইউনেস্কো গত প্রায় এক যুগ ধরে কাজ করলেও এ বিষয়ে অবদান রাখা সংস্কৃতিকর্মীদের স্বীকৃতিসূচক কোনো পুরস্কার এখন পর্যন্ত প্রবর্তিত হয়নি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন দূরদর্শী চিন্তক ছিলেন। বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশে তার অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনে তার অংশগ্রহণ, বাক-স্বাধীনতার বিকাশে তার সংগ্রাম, স্বাধীনতার পর বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ সৃষ্টিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন জাতি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে। 

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সৃষ্টির পর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ লোক ও কারু শিল্প ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা সৃজনশীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবদানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।  তার অসাম্প্রদায়িক চেতনা, সংস্কৃতির প্রতি মমত্ববোধ, মাতৃভাষার প্রতি আবেগ সর্বোপরি তার জীবনাদর্শ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরতে তার নামে একটি পুরস্কার প্রবর্তনের কথা আমরা চিন্তা করি।  সংস্কৃতি ক্ষেত্রে জাতিসংঘের একমাত্র বিশেষায়িত সংস্থা ইউনেস্কো।  ১৯৩ সদস্যবিশিষ্ট ইউনেস্কোর মূলনীতি শান্তি ও সম্প্রীতি তৈরিতে সংস্কৃতি শক্তিশালী উপাদান যা বঙ্গবন্ধু দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শনের আন্তর্জাতিকীকরণ ও তা বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য একটি ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন সবচেয়ে উপযোগী মাধ্যম হবে বলে আমরা মনে করেছি।

মন্ত্রী জানান, এ প্রেক্ষাপটে সৃজনশীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে পুরস্কার প্রবর্তনে প্রধানমন্ত্রীর সদয় অনুমোদনের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে একটি প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়।  গত আগষ্ট ২০১৯ এ প্রধানমন্ত্রীর সদয় অনুমোদন গ্রহণের পর প্যারিসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির মাধ্যমে ইউনেস্কো মহাপরিচালক বরাবর আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আমরা প্রেরণ করি। ইউনেস্কো এর অধিক্ষেত্র যেমন শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বাকস্বাধীনতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও বাংলাদেশ সরকারের ইউনেস্কো এর প্রতি অঙ্গীকারের কথা বিবেচনায় নিয়ে ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর নামে পুরস্কার প্রবর্তনে সম্মতি দেয়। ইউনেস্কো সচিবালয় গত ২-১১ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিত ৫৮ সদস্য বিশিষ্ট ইউনেস্কো নির্বাহী পরিষদের ২১০তম অধিবেশনের প্রথম পর্বে এ প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্য ইউনেস্কো সচিবালয় উত্থাপন করে।  ১১ ডিসেম্বর নির্বাহী পরিষদের প্লেনারি সেশনে সর্বসম্মতিক্রমে এ প্রস্তাব গৃহীত হয়। 

ড. মোমেন বলেন, আমরা মনে করি, ইউনেস্কোর মতো জাতিসংঘের একটি অঙ্গসংস্থা কর্তৃক প্রবর্তিত এ পুরস্কার বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরি করবে, বিশ্বময় সংস্কৃতি কর্মীদের সৃজনশীল অর্থনীতির বিকাশে অনুপ্রেরণা যোগাবে। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু যে এক ও অভিন্ন তা পুরস্কারের শিরোনামে প্রস্ফুটিত হয়েছে। এ পুরস্কার বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং ও ইমেজ বিল্ডিং এ বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি।   

প্রতি দুই বছর পরপর এ পুরস্কার দেওয়া হবে, যার অর্থমান ৫০,০০০ মার্কিন ডলার। এ পুরস্কারটি প্রথমবারের মতো আগামী ২০২১ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য ইউনেস্কো এর ৪১তম সাধারণ সভা চলাকালে দেওয়া হবে। এখানে প্রণিধানযোগ্য, জাতিসংঘ ২০২১ সালকে International Year of Creative Economy for Sustainable Development হিসেবে ঘোষণা করেছে। সে বিবেচনায় পুরস্কারটি প্রবর্তন সময়োচিত বলে ইউনেস্কো মনে করে।  ইউনেস্কো তাদের কর্মকাণ্ডে নারী-পুরুষ সমতা এবং যুব  উন্নয়নকে নীতিগত প্রাধান্য দিয়ে থাকে।  সেদিক থেকেও এ পুরস্কার ইউনেস্কো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে  সংগতিপূর্ণ। পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে সমাজের অনগ্রসর নারী, অভিবাসী ও প্রবাসী জনগোষ্ঠীর সৃজনশীল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত বছর ইউনেস্কো-এর ৪০তম সাধারণ সভায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন ইউনেস্কো-এর ‘শতবার্ষিকী কর্মসূচি তালিকায় (Anniversary programme) অন্তর্ভুক্ত করে। মুজিববর্ষে এ পুরস্কার প্রবর্তনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে ইউনেস্কো সরাসরিভাবে সম্পৃক্ত হল। 

হাসান/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়