ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে সচেতনতা জরুরি’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৭, ১৪ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ২২:৫৪, ১৪ জানুয়ারি ২০২১
‘পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে সচেতনতা জরুরি’

পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক পর্যায় ছাড়ালেও জনমানুষের সচেতনতা বাড়েনি। পানিতে ডুবে প্রাণহানি রোধে সবার আগে সচেতনতা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, ‘শুধু পানিতে ডুবে বাংলাদেশে প্রতিদিন ৫০ জনের মৃত্যু হয়। এর সবচেয়ে থেকে বড় কারণ—অধিকাংশ ক্ষেত্রে পানিতে ডুবে মৃত্যুকে মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে ধরে নেয়। কিন্তু আমাদের একটু সচেতনতা বাঁচিয়ে দিতে পারে অনেক প্রাণ।’

পানিতে ডোবার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং শিশুদের দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় (সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা) পর্যন্ত দিবাযত্ন কেন্দ্রে রাখার মধ্যে সমাধান দেখছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল ড্রাউনিং রিসার্চ সেন্টার (আইডিআরসি) বাংলাদেশের ডিরেক্টর ড. আমিনুর রহমান বলছেন, ‘কেন জানি আমার মনে হয়, নৃশংসতা দৃশ্য আমাদের বেশি আকর্ষণ করে। যখন কোন ব্যক্তি করোনায় কষ্ট পেতে পেতে মারা যায়, ট্রেনে কাটা পড়ে শরীর ছিন্ন হয়ে যায়; সেগুলো আমাদের মনে দাগ কাটে। আমরা সচেতন হই।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু যখন একজন মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। তার মৃতদেহ দেখে আমরা কোন ভয়াবতা অনুধাবন করতে পারি না। মনে হয় একজন মানুষ ঘুমিয়ে আছে। এই অনুধাবন থেকে পানিতে ডুবে মৃত্যুকে সাধারণ মৃত্যু হিবে আমাদের অনেকের মাঝে ধারণা সৃষ্টি হয়ে গেছে। আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে, এমন একটা মিথ প্রচলিত হয়েছে।

পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ভয়াবহতা তুলে ধরতে গিয়ে ড. আমিনুর রহমান বলছেন, ‘করোনাকে ছোট করে দেখছি না। পুরো বিশ্বের মতো আমরাও এটা নিয়ে ভীত। পানিতে ডুবে মৃত্যুর ভয়াবহতা যদি তুলনার স্বার্থে তুলে ধরা যায়, দেখা যাবে, প্রতিদিন করোনায় ১৭ থেকে ২০ জন সর্বোচ্চ ৩০ জনের প্রাণ যাচ্ছে। সেখানে পানিতে ডুবে প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছে ৫০ জন মানুষ।’ 

২০১৬ সালে পরিচালিত একটি জরিপের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সারা দেশে প্রতিবছর পানিতে ডুবে ১৯ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। যেখানে ১৮ বছরের কম বয়সী সাড়ে ১৪ হাজার এবং ৫ বছরের কম বয়সী শিশু ১০ হাজার প্রাণ হারায়। সে হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিদিন ১৮ বছরের কম বয়সী ৪০ জন শিশু প্রাণ হারাচ্ছে পানিতে ডুবে।’

শিশু নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন পরামর্শক সংস্থা সিনার্গোস’র পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ম্যানেজার ওবায়দুল ফাত্তাহ তানভীর এ প্রসঙ্গে বলছেন, ‘সবারই একটি ধারণা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ায় বেশি শিশু মারা যায়। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, বেশি শিশু মারা যাচ্ছে পানিতে ডুবে। কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে ঘটনাগুলো ঘটায় এটা নিয়ে প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলোতে তেমন গুরুত্ব সহকারে প্রতিবেদন প্রকাশ পায় না। পুলিশের খাতাতেও এদের সংখ্যা থাকে না। তাই শিশু মৃত্যুর এ ব্যাপকতা আমাদের নজরের বাইরে রয়ে যায়।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতিবছর ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৪০০ মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। শুধু বাংলাদেশেই মৃত্যু হচ্ছে ১৯ হাজার মানুষের।

পারভেজ/সাইফ/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়